সরকার গড়তে রাজ্যপাল পর্যাপ্ত সময় দেয়নি শিবসেনাকে। প্রতিবাদে রাজ্যপালের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানায় উদ্ধব ঠাকরেরা। তারপরই মহারাষ্ট্রে জরুরী অবস্থা জারি হয়েছে। এদিন শিবসেনার তরফে অনিল পরাব জানান, রাজ্যপালের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধ আদালতে যে আবেদন করা হয়েছিল তা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। শিবসেনার তরফে আদালতে অনিল পরাব অন্যতম আবেদনকারী। তিনি বলেন, 'রাষ্ট্রপতি শাসনের বিরুদ্ধে আবেদন করা হবে কিনা তা আলোচনার ভিত্তিতে আজ স্থির করা হবে।'
Advertisment
বুধবার সেনা মুখপাত্র টুইট ঘিরে নানা জল্পনা। টুইটে তিনবার 'অগ্নিপথ' লেখেন রাউত। মনে করা হচ্ছে, কংগ্রেস ও এনসিপির সঙ্গে সরকার গঠনের প্রক্রিয়া আরও কঠিন হতে পারে। তবে, হাল ছাড়তে নারাজ সেনা শিবির। তা বোঝাতেই এই টুইট।।
মহারাষ্ট্রে জারি হয়েছে রাষ্ট্রপতি শাসন। সরকার গঠনের জন্য এনসিপিকে দেওয়া সময়সীমা ফুরনোর আগেই রাষ্ট্রপতি শাসনে সীলমোহর দেন রামনাথ কোবিন্দ। কেন পর্যাপ্ত সময় দেওয়ার আগেই এই পদক্ষেপ? এর পিছনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিহিংসার রাজনীতি রয়েছে বলে মনে করছে বিরোধীরা। সরকার গঠনে বিজেপির তুলনায় তাদের পর্যাপ্ত সময় দেননি রাজ্যপাল। অন্যদিকে, রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক জট কাটাতে তাড়াহুড়ো করতে রাজি নয় এনসিপি বা কংগ্রেস। মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পরও এই দুই দলের নেতৃত্ব জানিয়েছে, শিবসেনাকে সমর্থনের জন্য নিজেদের বেশ কয়েকটি বিষয়ে আরও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। মনে করা হচ্ছে, 'ন্যূনতম অভিন্ন কর্মসূচি'র ভিত্তিতে শিবসেনার সঙ্গে সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা এগোবে সোনিয়া গান্ধীর দল। মহারাষ্ট্র পরিস্থিতি নিয়ে চুপ বিজেপি। সব মিলিয়ে মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে পরতে পরতে নাটকের প্রকরণ।
Advertisment
গতকাল রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হওয়ার পরই মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস এবং এনসিপি-র মধ্যে বৈঠক হয়। তার পর আহমেদ পটেল, শরদ পাওয়ার এবং মল্লিকার্জুন খাড়গে-সহ দুই দলের নেতারা যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করেন। সেখানে কংগ্রেস নেতা আহমেদ পটেল বলেন, ''গত পাঁচ বছরে এই সরকার গণতান্ত্রিক শাসনব্যস্থার কোনও নিয়ম-কানুন মানেনি। এ ভাবে রাষ্ট্রপতি শাসনের জারি করে গণতন্ত্রকে পরিহাস করা হয়েছে। বিজেপি, শিবসেনা, এনসিপির পর কংগ্রেসকে সরকার গঠনের জন্য ডাকাই হয়নি।''
কংগ্রেসের মুখাত্র রনদীপ সূর্যেওয়ালা দাবি করেন, 'যখন কোন দলই সরকার গঠনের মতো সংখ্যগরিষ্ঠতা পায়নি তখন রাজ্যপাল আসনের নিরিখে ভোট পূর্ববর্তী জোট বৃহত্তম জোট বিজেপি-শিবসেনাকে ডাকতে পারতেন। তারপর কংগ্রেস-এনসিপি জোটকে। তা তিনি করেননি। অন্যদিকে, একক বৃহত্তম দল হিসাবে বিজেপিকে সরকার গড়তে রাজ্যপাল কেশিয়ারি যে সময় দিয়েছিলেন তা শিবসেনা বা এনসিপিকে দেওয়া হল না। কংগ্রেসকে ডাকাই হল না। এমনকী মেয়াদ শেষের আগেই রাষ্ট্রেপতি শাসন জারি করে দেওয়া হল। এটা সংবিধানের প্রতি উপহাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টার নামান্তর।' শিবসেনার সঙ্গে হাত মেলালে ভবিষ্যতে ভোট ব্যাঙ্কে প্রভাব পড়তে পারে, অন্যদিকে রয়েছে রাজনৈতিক বাস্তবতা। ফলে সাবধানী সোনিয়া গান্ধীরা।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে বলেন, 'সরকার চালাতে গেলে আরও আলোচনা প্রয়োজন। আমরা ৪৮ ঘণ্টা সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু, তা দেননি রাজ্যপাল। আলোচনা জারি রয়েছে কংগ্রেস ও এনসিপির সঙ্গে। এখন হাতে ছ'মাস সময় রয়েছে। কংগ্রেস এবং এনসিপির সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।' সোমবার সন্ধেয় আদিত্য ঠাকরে-সহ শিবসেনা নেতারা রাজ্যপাল ভগৎ সিং কোশিয়ারির সঙ্গে দেখা করেন। সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে না পারায় ৩ দিন সময় চান তাঁরা। কিন্তু শিবসেনার সেই দাবি নাকচ করে দেন রাজ্যপাল।
সিপিএমের তরফেও মহারাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি সমালোচনা করা হয়। বোম্মাই মামলার উদাহরণ তুলে ধরা হয় কমিউনিস্ট দলটির তরফে। যেখানে জনপ্রতিনিধিরা আলোচনা চালাচ্ছে সরকার তৈরির জন্য সেখানে রাজ্যপালের রাষ্ট্রপতি শাসন জারিরর সুপারিশ দুর্ভাগ্যজনক বলে জানায় সিপিএম।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, বিজেপি সরকার গড়বে না বললে, রাজ্যপাল শিবসেনা ও এনসিপিকে প্রয়োজনীয় সময় দিয়েছিলেন সরকার গড়ার জন্য। কিন্তু, তারা প্রয়োজনীয় বিধায়ক জোগাড় করতে পারেননি। তারপরই রাজ্যপাল পদক্ষেপ করেন। মন্ত্রক সূত্রে জানা যাচ্ছে, ফলাফল বের হওয়ার পর ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল সসব দলকে সরকার গড়তে। কেউ পারেনি 'ম্যাজিক ফিগার' জোগাড় করতে। ফলে, আর সময় নষ্ট করতে রাজি হননি রাজ্যপাল।
তবে, রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হলেও এরই মাঝে কোনও দল প্রয়োজনীয় বিধায়কের সমর্থন জোড়াগ করে সরকার গঠনের আবেদন করতে পারবে। এখন এই নিয়মকেই কাজে লাগাতে মরিয়া শিবসেনা। তবে, পুরো বিষয়টিই নির্ভর করছে কংগ্রেস ও এনসিপির সিদ্ধান্তের উপর। বিজেপি অবশ্য কৌশল অবলম্বন করে বেশি মুখ খুলছে না। আপাতত জল মাপছে পদ্ম শিবির। দেবেন্দ্র ফড়নবীশ জানিয়েছেন, 'আমরা চাই রাজ্যে পোক্ত সরকার গঠিত হোক।'