নাটকের পর নাটক, পদত্যাগের হিড়িক। এরই মধ্যেই প্রোটেম স্পিকার পদে শপথ গ্রহণ করলেন বিজেপির বিধায়ক কালিদাস কোলাম্বকর। আজ, বুধবার বিধানসভার প্রথম অধিবেশনের ডাক দেন প্রোটেম স্পিকার। সকালেই বিধায়কদের শপথ গ্রহণ শুরু হবে বলে জানানো হয়।
মঙ্গলবার সকালেই মহারাষ্ট্রে আস্থাভোটের নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। দুপুর গড়াতেই উপমুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেন অজিত পাওয়ার। শিবসেনা মুখপাত্রের দাবি অজিত কংগ্রেস, সেনা ও এনসিপি জোটের পক্ষেই রয়েছেন। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিলেন দেবেন্দ্র ফড়নবীশ। সাংবাদিক বৈঠকে বললেন, 'আমাদের কাছে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। ফলে বিরোধী আসনে বসেই গঠনমূলক কাজ করব।' কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে তাঁর দাবি, 'হিন্দুত্বের কাছে মাথা নত করলেন সোনিয়া গান্ধী।'
শিবসেনা, কং ও এনসিপি জোটের পক্ষে সেনা মুখপাত্র সঞ্জয় রাউতের দাবি, 'অজিত পাওয়ার তিন দলের জোটের সমর্থনে রয়েছেন।' রাতে শরদ পাওয়ারের বাড়িতে যেতে দেখা যায় ভাইপো অজিতকে।
Sanjay Raut, Shiv Sena: Ajit dada has resigned and he is with us. Uddhav Thackeray will be the Chief Minister of #Maharashtra for 5 years. pic.twitter.com/7Qyz169Ivh
— ANI (@ANI) November 26, 2019
বুধবার মহারাষ্ট্র বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে হবে ফড়নবীশকে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বুধবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে আস্থা ভোট করতে হবে। এন ভি রামান্না, বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি অশোক ভূষণের বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, গোপন ব্যালটে ভোট নয়, আস্থা ভোট সরাসরি সম্প্রচার হবে। ২৭-শে নভেম্বরের মধ্যেই সব বিধায়ককে শপথ নিতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েশে সর্বোচ্চ আদালত।
শিবসেনার তরফে আদালতে সওয়াল করেন কপিল সিবাল। আদালতের কাছে তাঁর আর্জি ছিল, এই অন্তর্বতী সময়ে মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীশের প্রশাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার উপর স্থগিতাদেশ জারি করা হোক। এই আবেদনে আবশ্য কোনও আমল দেননি বিচারপতিরা।
আস্থাভোট নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী। তাঁর কথায়, 'আদালতের রায় ভারতের সংবিধানের জয়। গণতন্ত্র ও সত্যের জয়।'
মহারাষ্ট্র বিধানসভা ভোটে বিজেপি পেয়েছে ১০৫ আসন। ভোট তার জোটসঙ্গী শিবসেনা পায় ৫৬ আসন। কংগ্রেস ও এনসিপি জোট করে লড়াই করে। এই দুই দলের বিধায়ক সংখ্যা যথাক্রমে ৪৪ ও ৫৪। ৫০-৫০ মুখ্যমন্ত্রীত্বের প্রশ্নে বিজেপি ও শিবসেনার মধ্যে বিরোধ প্রকট হয়। দুই তরফই অনড় থাকায় পরে জোট ভেঙে যায়। বিজেপিকে ছাড়া সরকার গড়তে এনসিপি ও কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে উদ্ধব ঠাকরের দল। ববহু টানাপোড়েনের পর গত শুক্রবার এই জোট প্রায় চূড়ান্ত হয়। সিদ্ধান্ত হয়, পরদিন অর্থাৎ গত শনিবার রাজ্যপালের কাছে সরকার গড়ার দাবি জানাবে শিবসেনা, এনসিপি ও কংগ্রেস। কিন্তু, শনিবার ভোরের আলো ফুটতেই এই জোটের উপর 'সার্জিক্যাল স্ট্রাইক' করেন এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ারের ভাইপো অজিত পাওয়ার। দেবেন্দ্র ফড়নবীশকে সমর্থন দিয়ে নিজে উপ-মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন।
এনসিপি কী তাহলে বিজেপিকে সমর্থন করল সরকার গড়তে? শরদ পাওয়ার জানিয়ে দেন দলের নীতি ভেঙে অপরাধ করেছে ভাইপো অজিত। এনসিপি বিজেপিকে সমর্থন করছে না। তারা জোটের পক্ষেই। তাহলে কীভাবে বিজেপির দেবেন্দ্র ফড়নবীশকে সরকার গড়ার অনুমতি দিলেন রাজ্যপাল কোশিয়ারি? ফড়নবীশ কী সসরকার গড়ার প্রয়োজনীয় বিধায়কের সমর্থন জোগাড় করতে পেরেছেন? শুরু হয় বিরোধী শিবিরের তৎপরতা। বেশ কয়েকজন এনসিপি বিধায়ক দাবি করেন তাদের না জানিয়েই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠাননে নিয়ে গিয়েছিলেন আজিত পাওয়ার। বিধায়কদের আগলাতে পদক্ষেপ করে তিন দল। ফডনবীশের শপথগ্রহণ কি বৈধ? অবিলম্বে বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ করুক সে। এই দাবি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় শিবসেনা, এনসিপি ও কংগ্রেস। সেই মামলারই রায় হল আজ।
আরও পড়ুন: মুম্বাইয়ের পাঁচতারা হোটেলে সৎ থাকার শপথ সেনা-এনসিপি-কংগ্রেস বিধায়কদের
সুপ্রিম রায়ের আগে সোমবার বিকেলে রাজ্যপালের কাছে চিঠি দেন শিবসেনা, এনসিপি ও কংগ্রেস নেতৃত্ব। চিঠিতে বলা হয়, তিন দলের জোটের কাছে সরকার গড়ার প্রয়োজনীয় সংখ্যা গরিষ্ঠতা রয়েছে। আস্থা ভোটে ফড়নবীশ সরকার পরাজিত হলে শিবসেনা দ্বিতীয় বৃহত্তর দল হিসাবে মহারাষ্ট্রের সরকার গড়ার দাবি জানাতে পারবে। শিবসেনার দাবি পোক্ত করতে কংগ্রেস ও এনসিপি বিধায়কদের সমর্থনের প্রমাণ ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও বেশ কয়েকজন নির্দল বিধায়ক তিন দলের এই জোটকে সমর্থন করছে। তাদের সমর্থনের বিষয়টিও জানানো হয়।
প্রসঙ্গত, গতকাল সর্বোচ্চ আদালতে আস্থা ভোট সংক্রান্ত শুনানি চলে এক ঘন্টারও বেশি সময়। দেবেন্দ্র ফড়নবীশের পক্ষে এনসিপির ৫৪ বিধায়কের সমর্থন রয়েছে বলে শুনানির শুরুতেই আদালতে জানান বিজেপির আইনজীবী মুকুল রোহতগি। তিনি আদালতে বলেন, ‘কোনও দলই আদালতে দাবি করতে পারে না ২৪ ঘন্টার মধ্যেই আস্থা ভোট করাতে হবে।’ ফড়নবীশ সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিধায়কদের সমর্থন রয়েছে বলে সুপ্রিম কোর্টে দাবি করেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতা। তাঁর দাবি, সংখ্যা গরিষ্ঠ বিধায়কের সমর্থন দেখে দেবেন্দ্র ফড়নবীশকে মহারাষ্ট্রের সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন রাজ্যপাল ভগৎ সিংহ কোশিয়ারি। এরই মধ্যে ২২-শে নভেম্বর অজিত পওয়ারের লেখা চিঠি জমা দেওয়া হয় সুপ্রিম কোর্টে। দাবি করা হয় এনসিপি পরিষদীয় দলনেতা হিসাবে ওই চিঠি দিয়েছেন অজিত।
এররপরই এনসিপির তরফে আইনজীবী কপিল সিবাল বলেন, অজিত পাওয়ারকে সমর্থন করা হয়ননি। প্রামাণ্য নথি হিসাবে ১৫৪ বিধায়কের সাক্ষরিত এফিডেবিট কপি রয়েছে বলে সুপ্রিম কোর্টে জানান তিনি। কংগ্রেস ও এনসিপি জোটের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি আদালতে বলেন, ‘সব পক্ষই যখন রাজি তখন আস্থা ভোটে দেরি করা হচ্ছে কেন?এখানে কী কোনও একজন এনসিপি বিধায়ক বলেছেন যে তিনি বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন? গণতন্ত্রে প্রতারণা হয়েছে এক্ষেত্রে।’
সোমবার শক্তি প্রদর্শনে নামে কংগ্রেস, এনসিপি ও শিবসেনা। সোম সন্ধ্যেয় তিন দলের ১৬২ জন বিধায়কের উপস্থিতিতে সেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে এবং এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পাওয়ারের সামনে শপথবাক্যে তাঁরা বলেন, “আমি এনসিপি-সেনা-কংগ্রেস জোটের প্রতি সৎ থাকব। আমি কোনও দলবিরোধী কাজ করব না। আমি কখনও আমার বিধানসভা এলাকা ও আমার পার্টির বিরুদ্ধে কোনও কাজ করব না।”
মুখ পুড়েছে বিজেপির। এবার আস্থা ভোটের মুখোমুখি হতে হবে আগারি জোটকে। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠাতা প্রমাণের লড়াইতে শিবসেনা, এনসিপি ও কংগ্রেস জোট শেষ পর্যন্ত অটুট থাকবে কী? নজরে বুধবার মহারাষ্ট্রের বিধানসভা।
Read the full story in English