শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেস জোটের প্রতি সৎ থাকার শপথ নিলেন ১৬২ জন বিধায়ক। সেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে এবং এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পাওয়ারের সামনে শপথবাক্যে তাঁরা বলেন, "আমি এনসিপি-সেনা-কংগ্রেস জোটের প্রতি সৎ থাকব। আমি কোনও দলবিরোধী কাজ করব না। আমি কখনও আমার বিধানসভা এলাকা ও আমার পার্টির বিরুদ্ধে কোনও কাজ করব না।"
সন্ধ্যে ৭টায় ১৬২ জন বিধায়কের উপস্থিতির মাধ্যমে যেন অখণ্ড সংসারেরই বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হয় মুম্বাইয়ের পাঁচতারা হোটেলে। 'আস্থা' কাদের উপর বেশি, তা বোঝাতেই যেন ১৬২ জন বিধায়ককে একত্রিত করল কং-এনসিপি-শিবসেনা। টুইট করে এমনটাই জানান শিবসেনা মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত। মুম্বাইয়ের গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে সন্ধে সাতটার সময় এই 'মিলন'মেলায় হাজির হন বিধায়কেরা। মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল 'বিজেপি পক্ষপাতদুষ্ট' তা বোঝাতেই যে এই সম্মেলেন তা টুইট করে জানিয়ে দিয়েছেন সেনা মুখপাত্র নিজেই।
We are all one and together , watch our 162 together for the first time at grand Hyatt at 7 pm , come and watch yourself @maha_governor pic.twitter.com/hUSS4KoS7B
— Sanjay Raut (@rautsanjay61) November 25, 2019
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবারই আস্থা ভোটের রায় দেবে সুপ্রিম কোর্ট। তার আগে সোমবার রাজ্যপালের কাছে চিঠি দেন শিবসেনা, এনসিপি ও কংগ্রেস নেতৃত্ব। চিঠিতে বলা হয়, তিন দলের জোটের কাছে সরকার গড়ার প্রয়োজনীয় সংখ্যা গরিষ্ঠতা রয়েছে। আস্থা ভোটে ফড়নবীশ সরকার পরাজিত হলে শিবসেনা দ্বিতীয় বৃহত্তর দল হিসাবে মহারাষ্ট্রের সরকার গড়ার দাবি জানাতে পারবে। শিবসেনার দাবি পোক্ত করতে কংগ্রেস ও এনসিপি বিধায়কদের সমর্থনের প্রমাণ ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও বেশ কয়েকজন নির্দল বিধায়ক তিন দলের এই জোটকে সমর্থন করছে। তাদের সসমর্থনের বিষয়টিও জানানো হয়েছে
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় মহারাষ্ট্রের আস্থা ভোটের রায় দেবে সুপ্রিম কোর্ট। তারপরই স্পষ্ট হয়ে যাবে কবে দেবেন্দ্র ফড়নবীশ সরকারকে বিধানসভায় সংখ্যগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে হবে।
দেবেন্দ্র ফড়নবীশের পক্ষে এনসিপির ৫৪ বিধায়কের সমর্থন রয়েছে বলে শুনানির শুরুতেই আদালতে জানান বিজেপির আইনজীবী মুকুল রোহতগি। তিনি আদালতে বলেন, 'কোনও দলই আদালতে দাবি করতে পারে না ২৪ ঘন্টার মধ্যেই আস্থা ভোট করাতে হবে।' ফড়নবীশ সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিধায়কদের সমর্থন রয়েছে বলে সুপ্রিম কোর্টে দাবি করেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতা। তাঁর দাবি, সংখ্যা গরিষ্ঠ বিধায়কের সমর্থন দেখে দেবেন্দ্র ফড়নবীশকে মহারাষ্ট্রের সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন রাজ্যপাল ভগৎ সিংহ কোশিয়ারি। এরই মধ্যে ২২-শে নভেম্বর অজিত পওয়ারের লেখা চিঠি জমা দেওয়া হয় সুপ্রিম কোর্টে। দাবি করা হয় এনসিপি পরিষদীয় দলনেতা হিসাবে ওই চিঠি দিয়েছেন অজিত।
আরও পড়ুন: ‘আমি এনসিপিরই লোক’ অজিতের বিবৃতি ভুয়ো এবং বিভ্রান্তিকর, প্রত্যুত্তর শরদ পাওয়ারের
এররপরই এনসিপির তরফে আইনজীবী কপিল সিবাল বলেন, অজিত পাওয়ারকে সমর্থন করা হয়ননি। প্রামাণ্য নথি হিসাবে ১৫৪ বিধায়কের সাক্ষরিত এফিডেবিট কপি রয়েছে বলে সুপ্রিম কোর্টে জানান তিনি। কংগ্রেস ও এনসিপি জোটের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি আদালতে বলেন, 'সব পক্ষই যখন রাজি তখন আস্থা ভোটে দেরি করা হচ্ছে কেন?এখানে কী কোনও একজন এনসিপি বিধায়ক বলেছেন যে তিনি বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন? গণতন্ত্রে প্রতারণা হয়েছে এক্ষেত্রে।'
বিজেপিকে নোটিস দেওয়া হয়নি, এই যুক্তিতে সুপ্রিম কোর্টে এনসিপিকে নতুন এফিডেবিটের ভিত্তিতে মামলা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়। সিংভি জানান, এক্ষেত্রে কোর্টে ১৫৪ বিধায়কের সম্মলিত দাবিকে তুলে ধরা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন বেশিরভাগ কংগ্রেস, সেনা ও এনসিপি বিধায়ক ঐক্যবদ্ধ। এরপরই সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচাররপতির ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয় মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় মহারাষ্ট্রের আস্থা ভোটের রায় দেওয়া হবে
রাজ্যপালের অসাংবিধানিক পদক্ষেপের বিরোধিতা ও বিধানসভায় আস্থা ভোটের দাবি জানিয়ে শনিবারই সর্বোচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করে শিবসেনা, এনসিপি ও বিজেপি। রবিবার সকালে সেই মামলার শুনানি হয় বিচারপতি এন ভি রামানা, বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও অশোক ভূষণের ডিভিশন বেঞ্চে। ছুটির দিনের শুনানিতে ডিভিশন বেঞ্চ সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতাকে দুটি চিঠি আজ সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে আদালতে জমা দিতে বলেছে।
দেবেন্দ্র ফড়নবীশকে রাজ্যপাল ভগৎ সিং কেশিয়ারি সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ও আজিত পাওয়ার ফড়নবীশ সরকারকে জানিয়েছেন যে এনসিপির সব বিধায়কদের সমর্থন বিজেপির দিকে রয়েছে- এই দুই চিঠি জমা দিতে হবে আদালতে। সলিসিটর জেনারেল ও বিজেপি গতকালই আদালতে দাবি করেছিল এই মামলা পিছিয়ে দেওয়ার। কিন্তু, তাতে আমল দেননি বিচারপতিরা।
আরও পড়ুন: হতভম্ব সোনিয়া, রাগ গিয়ে পড়ল শরদের উপরে
এদিকে, বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পাশাপাশি এনসিপির অন্দরে গৃহযুদ্ধ চরমে। শনিবার সকালেই দলের অন্দরে 'সার্জিক্যাল স্ট্রাইক' হানেন শরদ ভাইপো অজিত পাওয়ার। ফড়নবীশ সরকারকে সমর্থন দিয়ে আপাতত তিনি ফড়নবীশ সরকারের উপ-মুখ্যমন্ত্রী। দাবি করছেন এনসিপির বেশিরভাগ বিধায়কের সমর্থনই তাঁর সঙ্গে রয়েছে। কৌশলী টুইট করে আবার রবিবার জানিয়েছেন, কাকা শরদ পাওয়ারই তাঁর নেতা। অজিত পাওয়ারের টুইটের প্রত্যুত্তরে শরদ পাওয়ার বলেন, “বিজেপির সঙ্গে জোট বাঁধার কোনও প্রশ্নই নেই। শিবসেনা ও কংগ্রেসের সঙ্গেই আছে এনসিপি। অজিত পাওয়ারের বিবৃতিটি ভুয়ো এবং বিভ্রান্তিকর। ভুল ধারণা ছড়িয়ে মানুষকে ভুল দিকে চালনা করতে চেষ্টা করছে।” শনিবার রাতেই ৪০-এর বেশি বিধায়ক সাক্ষর করে অজিত পাওয়ারকে পরিষদীয় দলনেতার পদ থেকে অপসারিত করেছেন। এনসিপির রাশ কোন দিকে? কাকা-ভাইপোর লড়াই জমে উঠেছে। আস্থা ভোট হলে তার উত্তর মিলবে।
রবিবারের শুনানিতে কংগ্রেসেরর দুই আইনজীবী নেতা কপিল সিবাল ও অভিষেক মনু সিংভি বলে, 'বিজেপি আত্মবিশ্বাসী হলে দেবেন্দ্র ফড়নবীশ সরকার আজই (রবিবার)বিধানসভায় আস্থা ভোটে অংশ নিক।' তারা জানতে চান শনিবার রাতে এনসিপির ৪১ বিধায়কের সমর্থনে অজিত পাওয়ারকে পরিষদীয় দলের নেতা পদ থেকে সরানো হয়েছে। পরিষ্কার যে এনসিপি বিজেপিকে সমর্থন করছে না। তাহলে কীভাবে অজিত পাওয়ারকে উপ-মুখ্যমন্ত্রী করা হল? সুপ্রিম কোর্টর তিন সদস্যের বিচারপতির বেঞ্চও এই সময় জানায়, আস্থা ভোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের সর্বশ্রেষ্ঠ উপায় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
Read the full story in English