লোকসভার এথিক্স কমিটির 'ক্যাশ-ফর-কোয়েরি' তদন্তে, বৃহস্পতিবার তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে লোকসভা থেকে বহিষ্কারের পক্ষে কমিটির ৬ সাংসদ ভোট দিয়েছেন। বহিষ্কারের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন ৪ জন। যাঁরা মহুয়া মৈত্রের সাংসদ পদ খারিজের পক্ষে ভোট দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আছেন এক কংগ্রেস সাংসদও। কংগ্রেস আর তৃণমূল, ইন্ডিয়া জোটে আছে। তারপরও কংগ্রেস সাংসদ তৃণমূলের মহুয়ার বিরুদ্ধে কেন ভোট দিলেন? এই প্রশ্নে যখন সর্বত্র সরগরম, তখনই জানা গেল কে সেই কংগ্রেস সাংসদ। তিনি আর কেউ নন, পাতিয়ালার প্রণীত কউর। যাঁর স্বামী পঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং এখন বিজেপিতে। প্রণীত অবশ্য এখনও দল ছাড়েননি। তবে, সত্যি বলতে গেলে তিনি ঠিক কতটা দলের নিয়ন্ত্রণে আছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে কংগ্রেসের অন্দরেই।
আর, এই প্রণীতের ভোটেই এথিক্স কমিটিতে মহুয়াকে লোকসভা থেকে বহিষ্কারের প্রস্তাব পাশের পথ প্রশস্ত হয়েছে। এথিক্স কমিটির বাকি বিরোধী সদস্যরা অবশ্য মহুয়া মৈত্রকে বহিষ্কারের বিরুদ্ধেই ভোট দিয়েছেন। সেখানে জোটসঙ্গী দলের হয়েও প্রণীতের আচরণে লজ্জিত কংগ্রেস নেতৃত্বই। এই ঘটনায় শুক্রবার পঞ্জাব বিধানসভার বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের প্রতাপ সিং বাজওয়া 'অনৈতিক কাজ'-এর জন্য প্রণীতকে এথিক্স কমিটি থেকেই বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন।
কাদিয়ানের কংগ্রেস বিধায়ক এবং প্রাক্তন সাংসদ বাজওয়া ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, 'কমিটির নাম এথিক্স কমিটি। প্রনীত তাঁর দলের নির্দেশ অনুসারে ভোট না-দিয়ে সবচেয়ে অনৈতিক কাজটি করেছেন। যে কমিটির সদস্যরা নিজেরাই অনৈতিক, সেই কমিটিকে মানুষ কতটা বিশ্বাস করবে, তা কল্পনাই করা যায়। কংগ্রেস সাংসদ হিসেবে প্রনীত তাঁর সমস্ত বেতন, পেনশন, ৫ কোটি টাকার এমপিএলএডি তহবিল পাচ্ছেন। আমি এথিক্স কমিটির চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করছি প্রথমে তাঁকে (প্রনীত) বহিষ্কার করতে। তাঁর ভোট গণনাই করা উচিত নয়।' প্রনীতের প্রতিক্রিয়া অবশ্য জানা যায়নি।
তাঁর স্বামী অমরিন্দর সিং এখন বিজেপির জাতীয় কার্যনির্বাহী সদস্য। কংগ্রেস তাঁকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার কয়েক মাস পরে অমরিন্দর বিজেপিতে যোগ দেন। ২০২২ সালের পঞ্জাব বিধানসভা নির্বাচনে, প্রনীত অমরিন্দরের পক্ষে প্রচার করেছিলেন। অথচ, অমরিন্দর বিজেপির মিত্র হিসেবে ওই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। এই দম্পতির মেয়ে জয় ইন্দার কউরও বিজেপিতে আছেন। তিনি বর্তমানে পঞ্জাব বিজেপি মহিলা মোর্চার সভাপতি। ঘটনাচক্রে, জয় ইন্দর ২০২৪ সালের নির্বাচনে পাতিয়ালা লোকসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিট চান।।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে, কংগ্রেসের পঞ্জাব ইউনিটের প্রধান, অমরিন্দর সিং রাজা ওয়ারিং, এআইসিসি সভাপতি মল্লিকার্জুন খার্গের কাছে একটি চিঠিতে, 'বিজেপিকে সাহায্য করার জন্য দলবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত' বলে অভিযোগ এনে প্রনীতকে কংগ্রেস থেকে বরখাস্ত করার দাবি জানিয়েছিলেন। কেন তাঁকে কংগ্রেস থেকে বরখাস্ত করা হবে না, প্রনীতের কাছে নোটিস জারি করে জানতে চেয়েছিলেন, কংগ্রেসের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সচিব তারিক আনোয়ার। প্রনীতকে তিনি তিন দিনের মধ্যে কারণ ব্যাখ্যা করতে বলেছিলেন।
বিদ্রোহী প্রনীত তার উত্তরে লিখেছিলেন, 'পঞ্জাব কংগ্রেসে যাঁরা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেই অনেকগুলি ইস্যু বিচারাধীন। আপনি যদি আমার স্বামীকে ফোন করেন, যিনি তখন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তিনি আপনাকে তাঁদের কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবেন। তিনি তাঁদের রক্ষা করেছিলেন, কারণ তাঁরা তাঁর নিজের দলের লোক ছিল। যাইহোক, আমি মনে করি আপনি তা (ফোন) করবেন না।'
শুধু একথা বলাই নয়। তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকার কাজ চালিয়ে যাবেন বলে দাবি করে, পাতিয়ালার সাংসদ উল্লেখ করেছিলেন, 'আপনার শো-কজ নোটিশ অনুসারে, আমি সর্বদা আমার নির্বাচনী এলাকা, এবং আমার রাজ্য পঞ্জাবের পাশে দাঁড়িয়েছি। দলমত নির্বিশেষে তাঁদের সমস্যা মিটিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে আপনি যা খুশি ব্যবস্থা নিতে পারেন।'
এর আগে, ২০২১ সালের নভেম্বরেও কংগ্রেস দলবিরোধী কার্যকলাপের জন্য ব্যাখ্যা চেয়ে প্রণীতকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিল। প্রনীত তখন দাবি করেছিলেন যে তিনি এমন কোনও নোটিশ পাননি। প্রনীত চারবারের পাতিয়ালা লোকসভার সাংসদ। তিনি ১৯৯৯, ২০০৪, এবং ২০০৯ সালে পাতিয়ালা থেকে জয়ী হয়েছিলেন। যদিও তিনি ২০১৪ সালে এই আসনে হেরে যান। কিন্তু, ফের ২০১৯ সালে জয়ী হন। ২০০৯ সালের মে থেকে ২০১৪ সালের মে পর্যন্ত তিনি দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারে বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।