কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে ফের তলব করল সংসদের এথিক্স (নীতি) কমিটি। আগামী ২ নভেম্বর সকাল ১১টায় মহুয়া মৈত্রকে এথিক্স কমিটির কাছে হাজিরা দিতে হবে। এর আগে তাঁকে ৩১ অক্টোবর কমিটি তলব করেছিল। সেই সময় তৃণমূল সাংসদ চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন, ৩০ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি তাঁর লোকসভা কেন্দ্র কৃষ্ণনগরের বিভিন্ন এলাকায় বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। সেই কর্মসূচি আগে থেকেই ঠিক হয়ে আছে। তাই, ৩১ অক্টোবর দিল্লিতে যেতে পারবেন না। ৫ নভেম্বরের পর কমিটির সুবিধামত যে কোনও দিন তাঁকে ডাকলে হাজিরা দেবেন। তার মধ্যেই তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ এবং তাঁর দলের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে 'দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস'-এর সঙ্গে কথা বলেছেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ।
আরও পড়ুন- ক্ষমতায় আসার দুই ঘণ্টার মধ্যে জাতিশুমারির নির্দেশ, বিরাট প্রতিশ্রুতি রাহুল গান্ধীর
এক্সপ্রেস- আপনি কেন বলছেন যে আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে আপনি যে অবস্থান নিয়েছেন তার জন্যই আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে?
মহুয়া মৈত্র- এটা খুবই স্পষ্ট যে আমাকে বিশেষভাবে টার্গেট করা হচ্ছে, কারণ আমি সেই খুব কম লোকের মধ্যে একজন, যাঁরা এই সরকার চালাচ্ছেন সেই গুন্ডাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। শুধু তাই নয়, (গৌতম) আদানি এবং মিস্টার মোদীর মধ্যে যে সম্পর্কটি চলছে, তা খোলসা করতেও লাগাতার ভূমিকা পালন করছি। তাই এটা খুবই স্পষ্ট যে তারা আমাকে নীচে নামানোর জন্য মিডিয়া ট্রায়াল চালানোর জন্য, সম্ভাব্য সমস্ত উপায় অবলম্বন করছে। যাঁরা এই সরকারের সমালোচনা করে, তাঁদেরকেই সমঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। যেমন, আপ (আম আদমি পার্টি), (কংগ্রেসের) রাহুল গান্ধী, (টিএমসির) অভিষেক ব্যানার্জি- যাঁরা এই সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন, তাঁদেরকেই সমস্যায় ফেলার চেষ্টা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে আর কিছুই পায়নি, তাই এক ভয়ংকর সম্পর্কের বিচ্ছেদ থেকে উদ্ভূত একটি ষড়যন্ত্রের জাল, বিদ্বেষমূলক একটা অভিযোগ তুলেছে।
এক্সপ্রেস- এই ইস্যুতে তৃণমূলের নীরবতা মনে করাচ্ছে যে আপনি দল থেকে বিচ্ছিন্ন। তারা কি আপনার কাছে কোনও ব্যাখ্যা চেয়েছে?
মহুয়া মৈত্র- এটা খুব স্পষ্ট যে আমি (টিএমসি প্রধান) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একজন অনুগত লেফটেন্যান্ট। আমার এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে কিছু সমস্যা আছে বলে ধারণা তৈরি করার জন্য এটি বিজেপির একটি আদর্শ চক্রান্ত। তারা এর আগেও বহুবার তৃণমূলে আমার বিদায় ঘণ্টা বাজিয়েছে। তারা গুজব ছড়াচ্ছে যে আমি কংগ্রেসে যাচ্ছি। শৃঙ্খলামূলক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে কিছু বললে তারা বলেছিল যে তিনি আমার উপর ক্ষুব্ধ। আমি তৃণমূলের একজন অনুগত সৈনিক এবং আমৃত্যু তাই থাকব। আমার জন্মদাত্রী না-হলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার মা। আমরা (টিএমসি) পশ্চিমবঙ্গের হয়ে জাতীয় গ্রামীণ কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্পের বকেয়া অর্থের দাবিতে সবচেয়ে বড় লড়াই চালাচ্ছি। আমাদের, অবৈধভাবে ১৫,০০০ কোটি টাকা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আমরা দলগতভাবে এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে, আমাদের রাজ্যকে কীভাবে বঞ্চিত করা হচ্ছে তা দেখিয়েছেন। আমাদের দলকে কয়লা কেলেঙ্কারিতে ফাঁসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। তারপরও, আমাদের দল এগিয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিজেপি আমার বিরুদ্ধে এই অপবাদ প্রচার চালানোর পথ বেছে নিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই অভিযোগগুলিকে অযৌক্তিক বলে প্রমাণ করতে এবং তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য আমার প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখেছেন। বিজেপি আমার বিরুদ্ধে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য মিডিয়াকে ব্যবহার করছে।
এক্সপ্রেস- কিন্তু অভিযোগ হল যে আপনি আপনার সংসদ লগইন আইডি নাকি একজন ব্যবসায়ীকে দিয়েছেন?, যিনি আবার ভারতের বাইরে থেকে লগইন করেছেন?
মহুয়া মৈত্র- আমি একজন সাংসদ। সাংসদদের প্রশ্ন ও উত্তরের আইডির পাসওয়ার্ড আপনাকে আরবিআই বা বাজেট নথির ভল্টে প্রবেশ করতে দেয় না। এটি শুধুমাত্র একজন সাংসদের প্রশ্ন আপলোড বা আপডেট করার জন্য। সাংসদরা নিজেরা সময় পান না। তাঁদের টিমের লোকজন ওই প্রশ্ন আপডেট করে। আমার মোবাইলে প্রশ্ন আপডেট করলেই একটি ওটিপি আসে। ৯৯% ক্ষেত্রে সাংসদরা ওটিপির জন্য তাঁদের ফোন নম্বর দেন না। কিন্তু, আমার ক্ষেত্রে আমার ফোন নম্বর দেওয়া আছে। আমি যখন সাংসদ হয়েছিলাম এবং যেহেতু আমি একটি প্রত্যন্ত নির্বাচনী এলাকা (কৃষ্ণনগর)-র প্রতিনিধিত্ব করি, আমি দর্শনকে তাঁর অফিসের কাউকে প্রশ্ন টাইপ করে আপলোড করতে বলেছিলাম। সে (দর্শন হিরানন্দানি) আমার বন্ধু এবং এতে দোষের কিছু আছে বলে আমি মনে করি না। আপনি কীভাবে বুঝলেন সেটা কোনও বিজনেস গ্রুপকে দেওয়া হয়েছে? ইন্টার্ন বা সহায়ক দলের লোকজন ইমেলে প্রশ্ন লোড করার পর ওটিপি যেহুতু আমার কাছে আসে, তাই আমার অজান্তে দর্শন বা কেউ অন্য কাউকে সেই লগ ইন আইডি দেবে, এমনটা হতেই পারে না।