দেবশ্রীকাণ্ডে নয়া মোড়। বিজেপিতে দেবশ্রী রায়ের যোগদান নিয়ে বিস্ফোরক দাবি করলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রই দেবশ্রীর সঙ্গে দেখা করতে অনুরোধ করেছিলেন, এমন চাঞ্চল্যকর দাবিই করলেন বঙ্গ বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি। এ প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘মহুয়া মৈত্রকে ফোন করেছিলাম, বললাম করিমপুর যাচ্ছি, আপনিও চলুন, কারণ উনি ওই এলাকার বিধায়ক ছিলেন। তখন তিনি বললেন, আমিও যাব না, আপনিও যাবেন না, না হলে আমাদেরও সভা করতে হবে...তখনই উনি বললেন, দেবশ্রী আপনাকে খুঁজছে, কথা বলবে বলে, কথা কি হয়েছে? আমি বললাম না কথা হয়নি। উনি বললেন, ও ডিপ্রেশনে রয়েছে, আপনার সঙ্গে কথা বলতে চান’’। এরপরই দিলীপ বলেন, ‘‘উনি (দেবশ্রী) একদিন আমার বাড়িতে আসেন, কিন্তু সেদিন দেখা হয়নি। পরে ওঁকে ডেকে পাঠাই, তখন কথা হয়েছে’’। অন্যদিকে, করিমপুরের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক তথা তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে করিমপুর যাওয়ার জন্য কেনই বা দিলীপ ফোন করলেন, এ নিয়েও প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে।
-->উল্লেখ্য, গত ১৪ অগাস্ট দিল্লির বিজেপি দফতরে শোভন-বৈশাখীর যোগদানের সময় দেবশ্রীর ‘হঠাৎ উপস্থিতি’ ঘিরে উত্তাল বঙ্গ রাজনীতি। তারপর থেকেই দেবশ্রীর বিজেপিতে যোগদানের জল্পনা তুঙ্গে ওঠে। ক’দিন আগে ‘দেবশ্রীকে দলে নিয়ে নেব’ মন্তব্য করে এ জল্পনায় আরও অনেক জল-হাওয়া জুগিয়েছেন খোদ দিলীপই। কিন্তু দেবশ্রীপর্বে এবার তৃণমূলেরই প্রাক্তন সাংসদের নাম নিয়ে যে দাবি করলেন দিলীপ ঘোষ, তা যে সামগ্রিক ঘটনায় ভিন্ন বিতর্ক যোগ করবে স বিষয়ে নিশ্চত রাজনৈতিক মহলের একাংশ। তবে এ প্রসঙ্গে কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলেন, ‘‘গত ১০ মার্চ থেকে দেবশ্রীর সঙ্গে আমার দেখা বা কথা হয়নি। উনিও (দেবশ্রী) একই কথা বলবেন। সুতরাং, কারও কোনও কল্পনাভিত্তিক কথার ভিত্তিতে প্রতিক্রিয়া দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছি না’’। তবে দিলীপ ঘোষের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে কিনা, এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি মহুয়া।
আরও পড়ুন: বৈশাখীই ব্ল্যাকমেল করছেন, শোভনের কোনও হাত নেই: রত্না
ঠিক কী বলেছেন দিলীপ ঘোষ?
বৃহস্পতিবার দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘মহুয়া মৈত্রকে ফোন করেছিলাম, বললাম করিমপুর যাচ্ছি, আপনিও চলুন...তখনই উনি বললেন, দেবশ্রী আপনাকে খুঁজছেন, কথা বলবে বলে, কথা কি হয়েছে? আমি বললাম না কথা হয়নি। উনি বললেন, ও ডিপ্রেশনে রয়েছে, আপনার সঙ্গে কথা বলতে চান। এরপর উনি (দেবশ্রী) একদিন আমার বাড়িতে আসেন, কিন্তু সেদিন দেখা হয়নি। ওঁর ফোন নম্বর আমার কাছে ছিল না, আমার নম্বরও ওঁর কাছে ছিল না। যাদের মাধ্যমে উনি যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন, তাঁদের মাধ্যমে পরে ওঁকে ডেকে পাঠাই, তখন কথা হয়েছে’’।
আরও পড়ুন: বৈশাখী ‘নতুন বউ’! শোভন কী বললেন দিলীপকে?
কী কথা হয়েছে দেবশ্রীর সঙ্গে সে ব্যাপারেও এদিন মুখ খুলেছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি। এ প্রসঙ্গে দিলীপ বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত সমস্যা, দলের সমস্যা সবরকম নিয়েই কথা হয়েছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম আপনি দিল্লি গেলেন কেন? উনি বললেন, ওঁকে একটি এনজিও ধোঁকা দিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। খুব হতাশায় রয়েছেন উনি। আমি বললাম চুপচাপ থাকুন’’।
আরও পড়ুন: মুকুলের খেলা? দেবশ্রীকে কে নিয়ে গিয়েছিলেন বিজেপি দফতরে, রহস্যভেদ করলেন বৈশাখী!
দেবশ্রী রায় কি তাহলে শেষ পর্যন্ত বিজেপিতেই? জবাবে দিলীপ বলেন, ‘‘এখনও এ নিয়ে নির্ণয় হয়নি। উনি বেশ কিছু শর্ত দিয়েছেন। সব শর্ত তো মেনে নেওয়া যায় না। দলে আলোচনা হোক। সবাই একমত হলে ওঁর সঙ্গে কথা বলব বলে জানিয়েছি ওকে’’।
এদিকে, দেবশ্রী রায়কে নিয়ে এখনও নিজেদের অবস্থানে অনড় শোভন-বৈশাখী। চলতি সপ্তাহে দিল্লি থেকে কলকাতায় ফিরেও এ ব্যাপারে নিজেদের অবস্থান জানিয়েদেন শোভন-বৈশাখী। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, দেবশ্রী রায়কে বিজেপি নিতেই পারে, তাতে আমরা কী করতে পারি! কিন্তু একইসঙ্গে এটাও তাঁরা বুঝিয়ে দেন যে, দেবশ্রী রায়কে নিয়ে তাঁদের ‘অনীহা’র কথা। রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, শোভন-বৈশাখীর বিজেপি থাকবেন কিনা তা অনেকটাই নির্ভর করছে দেবশ্রীর বিজেপিতে যোগদানের উপর। এই প্রেক্ষিতে দেবশ্রী রায় প্রসঙ্গে এদিন যেভাবে মুখ খুললেন দিলীপ ঘোষ, তা রাজনৈতিক দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মত সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের।