রাহুল দিল্লি ফিরতেই ভাঙন শুরু কেরল কংগ্রেসে। শুধু তাই নয় কেরল প্রদেশ কংরেসে বড়সড় ফাটল দেখা দিয়েছে খোদ রাহুল গান্ধীর লোকসভা কেন্দ্র ওয়েনাডে। সেই জেলার প্রায় ৪ জন কংগ্রেস নেতা দলের প্রাথমিক সদস্যপদ ছেড়েছে। ভোটমুখী দক্ষিণের এই রাজ্যে নেতৃত্বের বিবাদে বেশ ব্যাকফুটে কংগ্রেসের হাইকমান্ড। জানা গিয়েছে, গত এক সপ্তাহে যারা দল ছেড়েছেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কেরল প্রদেশ কংগ্রেসের সচিব এম বিশ্বনাথন, ওয়েনাড জেলা কমিটির সচিব অনিল কুমার, কেরল প্রদেশ কমিটির কার্যকরী কমিটির সদস্য কেকে বিশ্বনাথ আর কেরল মহিলা কংগ্রেসের রাজ্য সম্পাদক সুজয়া বেনুগোপাল।
স্পষ্টতই হেভিওয়েটদের দল থেকে ইস্তফার প্রভাব যাতে ভোট প্রস্তুতিতে না পড়ে তাই বিদ্রোহ দমনে উদ্যোগী হাইকমান্ড। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে সমঝোতার বার্তা দিয়ে কেরলে পাঠানো হয়েছে দূত হিসেবে। জানা গিয়েছে, এম বিশ্বনাথ প্রার্থী তালিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে দল ছেড়েছেন। প্রার্থী বাছাইয়ে সামাজিক ন্যায় নিশ্চিত করেনি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এই অভিযোগ তুলেছেন তিনি। ওয়েনাড জেলা কমিটির সভাপতি আর বিধায়ক একই লোক। বহুবার আমি এই নিয়ে সরব হলেও, কেউ কানে কথা তোলেনি। এমন দাবি করেছেন ওই পদত্যাগী নেতা। এদিকে, কংগ্রেসের এই ঘরোয়া কোন্দল থেকে লাভ তুলতে উদ্যোগ নিয়েছে সে রাজ্যের প্রধান শাসক দল সিপিএম। পদত্যাগীদের যথাযথ সম্মান দিয়ে পার্টির সদস্য করা হবে। এমন বার্তা পাঠিয়েছেন বিজয়ন-বালকৃষ্ণরা।
এদিকে, বিশ্বনাথ দল ছাড়ার সঙ্গেই সিপিএম নেতা ইএম শঙ্করন কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। সুত্রের খবর, দু’জনেই কুরুমা সম্প্রদায়ভুক্ত। তাই কংগ্রেস শঙ্করনের প্রস্তাব লুফে নিয়েছে। এদিকে, বিদ্রোহ প্রশমনে মরিয়া কংগ্রেসের তরফে কেরল প্রদেশ কংগ্রেসের সচিব কেপি অনিল কুমার বলেছেন, পদত্যাগীদের দলে ফিরিয়ে আনতে মরিয়া নেতৃত্ব। সাময়িক ভুল বোঝাবুঝি দূরে সরিয়ে আমরা ভোটের আগে ঘুরে দাঁড়াবো।‘
এদিকে, গত সপ্তাহে ভোট প্রচারে কেরল সফরে করেছেন রাহুল গান্ধী। মৎস্যজীবী হয়েই তাঁদের জীবন-জীবিকা বুঝতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন রাহুল । ভোটমুখী কেরলের উপকূলবর্তী ভাদি সমুদ্রতটে মৎস্যজীবীদের সঙ্গে জাল টেনে কথা বলতে দেখা গিয়েছে কংগ্রেস সাংসদকে। রাজ্যের থাঙ্গাসারি এলাকায় উপস্থিত মৎস্যজীবী পরিবারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি মৎস্যজীবীদের কাজ এবং পরিশ্রমকে শ্রদ্ধা করি।’এমনকী রাজ্য বাম সরকারের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হয়েছিলেন রাহুল গান্ধী। গভীর সমুদ্রে মৎস্য চাষের জন্য মার্কিন এক সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ কেরল সরকার। এতে মৎস্যজীবীদের রুটি-রুজিতে টান পড়তে পারে। এমন মন্তব্য করেন রাহুল গান্ধী।
গভীর সমুদ্রে মাছ চাষ কতটা ঝুঁকিপূর্ণ! সেবার মৎস্যজীবী পরিবারগুলোর প্রতি সেই সম্বন্ধেও সহমর্মিতা জানান রাহুল গান্ধী। কেরল সফরে খুব ভোরে রাহুল গান্ধীকে মৎস্যজীবীদের নৌকায় চড়ে ভাদি সমুদ্রতট ঘুরতে দেখা গিয়েছে। কীভাবে তাঁরা গভীর সমুদ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন, সে ব্যাপারে খুঁটিনাটি জানতে দেখা গিয়েছে রাহুল গান্ধীকে।
এদিকে, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে ‘পরিযায়ী শ্রমিক’ বলে চরম কটাক্ষ করেছে বিজেপি। লোকসভা নির্বাচনে রাহুলের কেরালায় লড়াই করা নিয়ে আক্রমণ করে পদ্ম শিবির। বলা হয়, আমেঠিকে সকলে গান্ধী পরিবারকে প্রত্যাখ্যান করার জেরে এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় রাহুল গান্ধী।
শবরিমালা মন্দিরে মহিলা প্রবেশের ইস্যুতে লোকসভায় কেরালার ওয়ারনাড় আসনের প্রতিনিধিত্বকারী রাহুল গান্ধীকে টার্গেট করে প্রবীণ বিজেপি নেতা এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী দাবি করেছেন যে কংগ্রেসের জাতীয় নেতৃত্ব এবং রাজ্য নেতৃত্ব এই বিষয়ে দুটি ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে। সোনিয়া-পুত্রকে তাঁর অবস্থান পরিষ্কার করার আহ্বানও জানান।