মুখ্যমন্ত্রী-রাজ্যপাল সংঘাত ফের প্রকাশ্যে। বুধবার নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আজ সাংবিধানিক কাজ নিয়ে কিছু বলতে চাই না। তবে অনেকেই বিজেপির মুখপাত্র হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। আমার রাজ্যেও সেটা হচ্ছে। আপনারা জানেন তা। রাজ্যে সমান্তরাল সরকার চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। সংবিধান মেনে কাজ করার অনুরোধ জানাব কেন্দ্রের কাছে। তবে এটা কোনও রাজনৈতিক বৈঠক নয়, প্রশাসনিক বৈঠক। তাই আমি আর কোনও মন্তব্য করতে চাই না।" যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাবুল সুপ্রিয়কাণ্ড, রাজ্যপালের ডাকা একাধিক প্রশাসনিক বৈঠক এবং দুর্গাপুজো কার্নিভাল পর্বে রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত বারবার সামনে এসেছে। এই প্রেক্ষিতে মমতার এদিনের নিশানায় যে জগদীপ ধনকড়ই তা কার্যত স্পষ্ট বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের সিঙ্গুর যাত্রা নিয়ে তোলপাড় হয়েছে বঙ্গ রাজনীতি। তৃণমূলকে কটাক্ষ করে জগদীপ ধনকড়ের মন্তব্য, "আমার সিঙ্গুর যাত্রা নিয়ে এত কথা হচ্ছে কেন? আমি খুবই দুঃখিত। আমার তো মনে হচ্ছে, কিছু লুকাতে চাওয়া হচ্ছেই বলেই কোথাও যাওয়ার ক্ষেত্রে এতো বিধিনিষেধ বেঁধে দেওয়া হচ্ছে।"
এক নজরে রাজ্যপাল-মমতা বাগযুদ্ধ। অলঙ্করণ- অভিজিৎ বিশ্বাস
আরও পড়ুন- মমতাকে সব জানাবো, মার খেয়ে বললেন রাজ্যের মন্ত্রী শোভনদেব
তবে শুধু রাজ্যপাল নয়, এদিন রাজ্য বিজেপিকেও এক হাত নেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, "রাজনৈতিক বিতর্ক না করে মানুষের পাশে থাকুন। আমি অনুরোধ করব মানুষের পাশে দাঁড়ান। রাজনীতি সারা জীবন থাকবে।" বুধবার বিজেপির পুরসভা অভিযান এবং বাবুল সুপ্রিয়র দক্ষিণ ২৪ পরগণা যাত্রা ঘিরে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়, সে প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আমি অনুরোধ করব দু'টো লোককে নিয়ে ভাঙচুর করা সহজ। কিন্তু কোনও কিছু তৈরি করা কঠিন। আমরা চেষ্টা করছি বুলবুল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিকে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসতে। বিতর্ক না করে সেখানে সহযোগিতা করুন।"
আরও পড়ুন- রাহুল গান্ধী সতর্ক হোন, আদালত অবমাননার মামলা খারিজ করে মন্তব্য সুপ্রিম কোর্টের
বুলবুল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা নিয়ে এদিন উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, "ঘূর্ণিঝড়ে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দুর্গতদের ত্রাণ দেওয়ার সব ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার। শস্য, পানের বরোজ সমস্তটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে মারা গিয়েছেন মোট ৯ জন। চাষীদের সাহায্য করার চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন কেন্দ্রের থেকে সাহায্য আসার কথা। তবে টাকাটা আসলে ভালো হয়।" এদিন দুর্গতদের জন্য ত্রাণ দিতে রাজ্যের সকলকে আহ্বানও জানান মুখ্যমন্ত্রী।
পাশাপাশি, অর্থনৈতিক দূরাবস্থা নিয়ে কেন্দ্রের প্রতি তোপ দাগেন মমতা। তিনি বলেন, "রাজ্যকে যে টাকা দেওয়ার কথা সেটা দেওয়া হয়নি। কেন্দ্রীয় কর কম পাওয়ায় রাজ্যের লোকসান হয়েছে। ফলে ৬৪০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। রাজ্যের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ কমেনি। তাই সামাল দিতে পারছি। পুরো দেশের এবং অন্যান্য সব রাজ্যের অর্থনীতি ভুক্তভোগী হচ্ছে।"