উনিশের নির্বাচনের ‘ধাক্কা’ সামলে ঘুরে দাঁড়াতে প্রশান্ত কিশোরই ভরসা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এ মুহূর্তে নির্বাচনী রণকৌশল রচনাকারী প্রশান্তের উপর যে মমতা কতটা নির্ভর করছেন তা ফের প্রমাণ হল বৃহস্পতিবার। এদিন তৃণমূল ভবনে বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকের আগে প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে মিনিট কুড়ির বৈঠক সারলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। এই বৈঠকে ছিলেন তৃণমূল সাংসদ তথা মমতার ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, মমতা এবং প্রশান্ত। পিকের সঙ্গে বৈঠকের পরই বিধায়কদেরকে নিয়ে বৈঠকে বসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে বিধায়কদের বৈঠকে ছিলেন না পিকে। প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শ মাথায় রেখেই বিধায়কদের বৈঠকে এদিন মমতা একগুচ্ছ নির্দেশ দিয়েছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
২১ জুলাইয়ে তৃণমূলের শহিদ দিবসের মেগা সমাবেশের আগে দলের বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকে এদিন বেশ কিছু দাওয়াই দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। নিজেদের কেন্দ্রে বিধায়দের জনসংযোগ বাড়ানোর কথা যেমন বলেছেন দলনেত্রী, তেমনই আলটপকা মন্তব্য করা থেকে বিধায়কদের বিরত থাকার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে আগামী ১৮ জুলাইয়ের মধ্যে প্রত্যেক বিধায়কের থেকে ৪ জনের নামের তালিকা চেয়ে পাঠিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী।
আরও পড়ুন: মমতার বৈঠকে গরহাজির সব্যসাচী-শোভন
তৃণমূল ভবনের বৈঠকে কী কী বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়?
* ১৮ জুলাইয়ের মধ্যে বিধায়কদের ৪ জনের নামের তালিকা চেয়ে পাঠিয়েছেন মমতা। বুথস্তর থেকে দু’জনের নাম, সংগঠন দেখে এমন একজনের নাম ও সোশ্যাল মিডিয়া দেখে এমন একজনের নাম চাওয়া হয়েছে।
* জনসংযোগ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। বিধায়কদের উদ্দেশে মমতা বলেছেন, ‘‘মানুষের সঙ্গে সহজ-সরল ভাবে মিশুন। নিজের কেন্দ্রে থাকুন। কলকাতায় বেশি আসার দরকার নেই’’।
* আলটপকা মন্তব্য না করতে বিধায়কদের নির্দেশ মমতার।
* বিরোধী দলের সঙ্গে সংঘর্ষ বা বাকযুদ্ধে না জড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী।
* রাজ্য বা দেশের বাইরে গেলে দল ও সরকারকে জানিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা।
* সোশাল মিডিয়ায় তথ্য দিয়ে বিজেপি বিরোধী প্রচার করুন।
আরও পড়ুন: যাঁরা কাটমানি নিয়েছেন এবং দিয়েছেন, দু’জনেই দোষী: পার্থ
প্রসঙ্গত, উনিশের নির্বাচনে ‘ধাক্কা’ খাওয়ার পর কালীঘাটে সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু দল শোনেনি। দলের প্রধান হিসেবে কাজ চালিয়ে যাব। কারণ, দলটা আমিই তৈরি করেছিলাম’’। ভোটে দলের বিপর্যয় সামাল দিতে মুখ্যমন্ত্রীর থেকে তৃণমূলনেত্রী হিসেবেই যে এবার তিনি বেশি জোর দেবেন, সে বার্তাও স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন মমতা। সেইমতোই ২৩ মে-র পর থেকে দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা। বিধায়ক, সাংসদ থেকে শুরু করে জেলার নেতাদের সঙ্গেও দফায় দফায় বৈঠকে বসে ভোটে হারের চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন তৃণমূলনেত্রী। সেই ধারা বজায় রেখেই ২১ জুলাইয়ের আগে বিধায়কদের উদ্দেশে মমতার এই বার্তা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।