ভাইপোকে বাঁচাতে, আর্থিক কেলেঙ্কারিকে ধামাচাপা দিতে আজকের ধর্মঘটে দালালি করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমন বিস্ফোরক অভিযোগই করলেন সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য তথা প্রাক্তন সাংসদ মহম্মদ সেলিম। মমতাকে চড়া সুরে আক্রমণ করে বুধবার বিকালে সেলিম বলেন, ‘‘গোটা দেশে মোদী-শাহ যা করছেন, মমতাও তাই করছেন। মমতা ও দিলীপের সুর এক’’। একইসঙ্গে বাংলায় বনধে বিক্ষিপ্ত অশান্তির ঘটনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দুষে সেলিম বলেন, ‘‘মমতা প্ররোচনা দিয়েছেন। তারপরই তৃণমূলের গুন্ডা ও পুলিশ হামলা চালিয়েছে। কিন্তু, গোটা রাজ্যে তা করতে পারেনি। এতে প্রমাণিত হয়েছে যে সব জায়গায় মমতার দাপট চলে না’’।
প্রসঙ্গত, গত সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করতে দিল্লি যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘ভাইপো ও রাজীব কুমারকে বাঁচাতেই দিল্লি গিয়েছেন মমতা’, এমন অভিযোগ তুলে সরব হন বাংলার বিরোধীরা। উল্লেখ্য, চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়েছে কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের। অন্যদিকে, মমতার ভাইপো তথা তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী রুজিরা নারুলার বিরুদ্ধে সোনা পাচারের অভিযোগ এনেছে বিজেপি।
আরও পড়ুন: দীপিকা পাড়ুকোনকে চরম আক্রমণ দিলীপ ঘোষের, কী বললেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি?
মোদী-মমতা কেন এক বন্ধনীতে?
তৃণমূলনেত্রীকে একহাত নিয়ে এদিন মহম্মদ সেলিম এদিন বলেন, ‘‘আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যদি মোদী-অমিত শাহের রাজনীতির পিছু না ছাড়েন, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যখন মানুষ রাস্তায় নামবেন, তখন নিজের আর্থিক কেলেঙ্কারিকে ধামাচাপা দিতে, নিজের ভাইপোকে বাঁচাতে আজকের ধর্মঘটের মতো যদি উনি দালালি করেন, তবে পিএমের সঙ্গে সিএমের বিরুদ্ধেও আজকের মানুষ স্লোগান দিতে বাধ্য হবে’’। এ প্রসঙ্গে সেলিম আরও বলেন, ‘‘এনআরসি-সিএএ নিয়ে গোটা দেশে ভয়ের বাতাবরণে মোদী-শাহ যা করছেন, মমতাও তাই করছেন। তবে সেই ভয় ভাঙছে। ভয়কে মানুষ জয় করেছে, রাস্তায় নেমেছে। মমতার নির্দেশ উপেক্ষা করেও বহু তৃণমূল কর্মী-সমর্থক রাস্তায় নামেননি। অনেকেই বামপন্থায় বিশ্বাসী নন, তাঁরাও আজ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সমর্থন করেছেন। আজ সব ট্রেড ইউনিয়ন ধর্মঘট ডেকেছিল। এবিভিপি, টিএমসিপি ছাড়া সকল ছাত্র সংগঠনও ধর্মঘটে শামিল হয়েছিল। ফলে, কে কোথায় দাঁড়িয়ে আছে, তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে’’।
আরও পড়ুন: ‘কেরালা সিপিএম ঢের ভাল, একটা মতাদর্শ আছে’, আলিমুদ্দিনকে খোঁচা মমতার
অন্যদিকে, ‘কেরালা সিপিএম ঢের ভাল’ বলে এদিন বঙ্গ সিপিএমের সঙ্গে তুলনা টেনেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ প্রসঙ্গে মমতাকে কটাক্ষ করে সেলিম বলেন, ‘‘ট্রাম্প যেমন করেন না তালিবানদের দিয়ে, গুড টেরোরিস্ট, ব্যাড টেরোরিস্ট! তেমন উনিও এখন ভাল সিপিএম, খারাপ সিপিএম খুঁজতে বসেছেন। কেরালায় সরকারে থেকেও বামেরা আন্দোলন-সংগ্রামে আছেন, ধর্মঘট করে সরকারে এসেছেন মমতা, অথচ এখন সরকারে এসে বিরোধিতা করছেন। সিপিএম সরকারে থাকুক বা বিরোধিতায় থাকুক, লড়াই-সংগ্রামে আছে। এটাই ফারাক’’।
উল্লেখ্য, এদিন বামেদের আক্রমণ করে মমতা বলেন, ‘‘গায়ের জোরে বনধ বাংলায় হবে না। প্রত্যেক বনধে (বামেরা) ব্যর্থ হচ্ছে, তা সত্ত্বেও বছরে ৪টে বনধ ডাকছে। ভাবে, বনধ করে সস্তায় পাবলিসিটি পাবে। সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে’’। এ প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, ‘‘বিধানসভায় কারা ভাঙচুর চালিয়েছিলেন? বিধানসভার সম্পত্তি সরকারি সম্পত্তি নয়? পৈতৃক সম্পত্তি? মমতা সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করতে বারণ করছেন, আর তাঁর পুলিশ বেসরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করেছে।’’