লোকসভায় মতুয়া অধ্যুষিত বনগাঁ আসনটি তৃণমূলের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি। বিধানসভা ভোটের আগে সেই মতুয়াদের আস্থা ফিরে পেতে মরিয়া জোড়া-ফুল শিবির। গোপালনগরে তৃণমূল নেত্রীর জনসভা থেকে ফের একবার তা প্রমাণিত। মতুয়াদের মন পেতে তাঁদের একের পর এক দাবিকে এদিন মান্যতা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন বাংলায় সিএএ-এনআরসি হবে না।
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, 'বাংলা থেকে বাঙালিকে তাড়িয়ে দাও, বাংলাকে গুজরাট বানিয়ে দাও। এটাই বিজেপির নীতি। কিন্তি এসব হতে দেব না। কেউ উদ্ধাস্তু বলেই কাউকে তাড়িয়ে দেওয়া যাবে না। মতুয়ারা সবাই এ দেশের নাগরিক। কারোর কোনও সার্টিফিকেটের প্রয়োজন নেই। বাংলায় এনআরসি-সিএএ করতে দেব না।'
এরপরই গত দশ বছরে মতুয়াদের যেসব দাবি রাজ্য সরকার মেনে নিয়েছে তার খতিয়ান দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, 'আপনাদের প্রথম দাবি ছিল মতুয়া উন্নয়ন পর্যদ। সেউ দাবি মানা হয়েছে। বাউড়ি, নমঃশূদ্রের পাশাপাশি মতুয়াদের জন্য উন্নয়ন পর্ষদ গঠন করা হয়েছে। সেখানে ইতিমধ্যে ১০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। কমিটির সদস্যদের নাম দেওয়া হলে আমি কাজ শুরু করে দিতে পারব।'
পঞ্চানন বর্মা, বীরসা মুন্ডার জন্মদিনে ইতিমধ্যেই ছুটি ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মতুয়াদের দাবি ছিল শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথিতে ছুটি। সেই দাবিও এদিন মেনে নিয়েছেন মমতা। বলেছেন, 'প্রতি বছর মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশীতে হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মদিন পালিত হয়। তবে বছরে কোন দিন এই তিথি পড়ছে তা নতুন বছর শুরুর ৬ মাস আগে যখন ক্যালেন্ডার তৈরি হয় তখন জানিয়ে দিতে হবে।'
হরিচাঁদ গুরুচাঁদ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শুরু হলেও নির্মাণ কাজের অগ্রগতি নিয়ে ক্ষোভ ছিল মতুয়াদের মধ্যে। তা কানে গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। সেই প্রসঙ্গে বিজেপিকে কটাক্ষ করে এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, 'আমরা কথা দিলে কথা রাখি। ভোটের সময় বড় বড় কথা বলে বিজেপির মত পালিয়ে যাই না। হরিচাঁদ গুরুচাঁদ বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা তা সম্পূর্ণ করে দেব।'
পাঠ্যপুস্তকে হরিচাঁদ ঠাকুর ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের জীবনী, তাঁদের বাণী যাতে থাকে এমন দাবি করেছিলেন মতুয়ারা। সেই দাবি ইতিমধ্যে রাখা হয়েছে বলে এদিন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিভিন্ন পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের দাবি মেনে এসসি, এসটি, ওবিসি সার্টিফিকেট পাওয়ার প্রক্রিয়াও সরলীকরণ করা হয়েছে বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, 'বাড়িতে কারও যদি জাতি শংসাপত্র থাকে তবে ১০ দিনের মধ্যে নতুন আবেদনকারী তাঁর শংসাপত্র পেতে পারে।'
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন