উত্তরবঙ্গের গাজোলডোবা পর্যটন হাবে ‘ভোরের আলো’-র সূচনা করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৩২০ টাকা ব্যয়ে তৈরি করা হয়েছে ভোরের আলো। এছাড়াও এদিন গাজলডোবা পর্যটন কেন্দ্রকে নোটিফায়েড এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। শিল্পপতিদের বিনিয়োগের জন্যে আহ্বান জানানোর পাশাপাশি গজোলডোবার জন্যে পৃথক মহকুমা শাসক রাখার নির্দেশ দেন তিন।
ভোরের আলোর উদ্বোধনী মঞ্চ থেকেই এদিন কলকাতার নাগেরবাজার বিস্ফোরণ নিয়ে নাম না করে বিজেপিকে বিঁধেছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। মুখ্যমন্ত্রী এদিন পুলিশকে সতর্ক থাকার নির্দেশও দেন। তিনি বলেন, "কেউ কেউ উৎসবের মরশুমে অশান্তি পাকানোর চেষ্টা করছে। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ, কলকাতা পুলিশ এবং সমস্ত কমিশনারেট সতর্ক হন। কে, কোথায়, কী রেখে যাচ্ছে দেখুন। নাকা তল্লাশি শুরু করুন।"
বুধবার তাঁর সাধের প্রকল্প ‘ভোরের আলো’-র উদ্বোধন করার পরেই ফের জমি মাফিয়াদের নিয়ে সরব হন মমতা। সরকারি জমি দখল করে যারা বিক্রি করে দিচ্ছে তাদের কাউকে রেয়াত করা হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। কোনও পুলিশ আধিকারিক বা দলের কেউ জড়িত থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়ে দেন তিনি। জমি মাফিয়াদের সতর্ক করে প্রশাসনিক কর্তাদের তিনি বলেন, "এলাকায় ভিডিয়ো করুন। এতে কোথায় কী রয়েছে তার একটা হিসেব থাকবে। হঠাৎ করে কেউ এসে বসে পড়বে সেটা হবে না। কোথাও অবৈধ নির্মাণ হলে ব্যবস্থা নিতে হবে। এতে কোন পুলিশকর্মী যুক্ত থাকলে তাঁরাও শাস্তি পাবেন। এমনকি, এর সঙ্গে দলের কেউ জড়িয়ে পড়লে তাঁকেও রেয়াত করা হবে না।"
আরও পড়ুন: দাবি পূরণ না হওয়ায় মমতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ সংখ্যালঘু সংগঠনের
উদবোধনের পর মুখ্যমন্ত্রী শিল্পপতিদের বিনিয়োগের অহ্বান জানান। পাশাপাশি তিনি বলেন, "আগামী দিনে এখানেও ছোটো এয়ারপোর্ট গঠন করা হবে। পর্যটকরা সরাসরি এখানে আসতে পারবেন।" আমলাদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "এলাকায় বায়ো টয়লেট তৈরি করে দিতে হবে। স্থানীয় মাঝিদের আধুনিক নৌকা দিতে হবে। এর পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের আর্থিক উন্নয়নের জন্য নানা সরকারি প্রকল্পে সহায়তা দিতে হবে।" মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, "আগামী দিনে গাজোলডোবা হয়ে উঠবে রাজ্যের সেরা পর্যটন কেন্দ্র। এখানে তৈরি হবে বাংলার হাট। থাকবে বিশ্ব বাংলার স্টল।"
বছর দুয়েক আগে গাজোলডোবায় পর্যটন দপ্তরের মাধ্যমে ভোরের আলোর কাজ শুরু করে রাজ্য সরকার। কাজ শুরু হতেই উত্তরবঙ্গের শিল্পপতিরাও এই প্রকল্পে সহযোগিতার হাত বাড়ান। প্রকল্পে মোট ৩০টি কটেজ, ফরেস্ট সাফারি, বোটিং, সাইক্লিং, অর্কিড পার্ক, হাতি সাফারি, ইকো পার্ক তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো তৈরি হয়েছে একটি বাড়ি। যার নাম দেওয়া হয়েছে হাওয়া মহল।
রাজ্য সরকারের মোট ১২ টি দপ্তর এবং পর্যটন দপ্তর এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করার কাজ শুরু করে। এক সময় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার অভিযোগ তুলে এই প্রকল্পকে চ্যালেঞ্জ করে এক পরিবেশপ্রেমী ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। যার দরুন প্রকল্পের কাজ কিছুদিনের জন্য থমকে যায়। কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় গ্রিন ট্রাইব্যুনাল। রাজ্যের কাছে বেশ কিছু বিষয় জানতে চায় পরিবেশ আদালত। দ্রুত পরিবেশ আদালতে নিজেদের হলফনামা পেশ করে সমস্যা মিটিয়ে ফের প্রকল্পের কাজ শুরু করে রাজ্য সরকার।
কিন্তু এরপর থেকেই হঠাৎ করে কাজের গতিতে বাধা পড়ে যায়। প্রায় বছর দেড়েক পার হয়ে গেলও প্রকল্পের তেমন কোন অগ্রগতি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। ভোরের আলোর কাজ নিয়ে তিনি যে সন্তুষ্ট নন তা কড়া ভাষায় রাজ্য পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেবকে জানিয়ে দেন।
মুখ্যমন্ত্রীর ধমকের পরেই কাজে জোর দেয় পর্যটন দপ্তর। দ্রুত কাজ শেষ করার পাশাপাশি প্রতিমাসে একবার করে দপ্তরের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করার নির্দেশ দেন তিনি। এরপরই প্রথম পর্যায়ে হাওয়া মহল ও ছটি কটেজের কাজ শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয় পর্যটন দপ্তর। সেইমতো কটেজ তৈরি করা হয়। ছটি কটেজের মধ্যে চারটি পর্যটকদের জন্য এবং দুটি ভিভিআইপিদের জন্য রাখা হয়েছে। এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্কের সমস্যা থাকায় বেসরকারি সার্ভিস প্রোভাইডারদের সঙ্গে বৈঠক করে টাওয়ার বসিয়েছে পর্যটন দপ্তর।
এদিন রাতে ভোরের আলোতেই থাকেন মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার উত্তরের ব্যবসায়ীদের নিয়ে শিলিগিড়িতে বৈঠক রয়েছে তাঁর। পাশাপাশি শিলিগুড়ি জার্নালিস্টস ক্লাবের পক্ষ থেকে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর।