'সেমি ফাইনালে'র ফলাফল প্রকাশের আগের দিনই 'ফাইনালের' প্রস্তুতি। পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ভোট গণনা হবে মঙ্গলবার। এর আগের দিন অর্থাৎ সোমবারই আসন্ন লোকভা নির্বাচনে অ-বিজেপি শক্তিগুলির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে চলেছে দিল্লিতে। আর সেই বৈঠকে যোগ দিতে আজই শহর ছাড়ছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন, ইউপিএ চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধীকে টুইটে জন্মদিনের শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন মমতা।
জাতীয় রাজনীতিতে এই মুহূর্তে মোদী বিরোধী মুখ হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অন্যতম। বিরোধী দলগুলিকে, বিশেষত আঞ্চলিক দলগুলিকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসতে সাম্প্রতিককালে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। ফলে, মমতার এদিনের দিল্লি যাত্রা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
আরও পড়ুন- কোচবিহারে সভা করার অভিযোগে দিলীপ ঘোষদের বিরুদ্ধে মামলা
সোমবারের বৈঠকে কোন কোন দল উপস্থিত থাকবে, সে বিষয়ে ইতিমধ্যে জল্পনা মাথা চাড়া দিয়েছে। সূত্রের খবর, এই বৈঠকে বিশেষ ভূমিকা নেবেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী তথা টিডিপি প্রধান চন্দ্রবাবু নাইডু। উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগেই নবান্নে এসে মমতার সঙ্গে একপ্রস্থ আলোচনা করে গিয়েছেন চন্দ্রবাবু। দেশে গণতন্ত্র বিপন্ন দাবি করে সেদিন সাংবাদিকদের সামনে দু'জনেই একসুরে কেন্দ্রের এনডিএ সরকারকে বিঁধেছিলেন। শীঘ্রই যে বিরোধীদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে চলেছে সে কথাও জানিয়েছিলেন অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী। তবে, পাঁচ রাজ্যের ভোটের জন্য সেই সূচি কিছুটা পিছিয়েছে। কংগ্রেসের তরফে সোমবারের বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেন গুলাম নবি আজাদ ও আনন্দ শর্মা। এছাড়া, ন্যাশনাল কনফারেন্সের ফারুক আবদুল্লা, লালু-পুত্র তেজস্বী যাদবও বৈঠকে অংশ নেবেন বলে খবর। এদিকে, মায়াবতী নিজে উপস্থিত না থাকলেও, প্রতিনিধি পাঠাবেন বলেই জানা গিয়েছে। তবে এদিনের বৈঠক নিয়ে সিপিএম-এর অবস্থান এখনও স্পষ্ট নয়।
আরও পড়ুন- বীরভূম বিজেপির ঘরে কাজিয়া, পদ ছাড়লেন ৫৭ জন কর্মী
প্রসঙ্গত, নোটবন্দির পর উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে সে রাজ্যে ছুটে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মোদী সরকারের বিমুদ্রাকরণের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আক্রমণাত্মক বক্তৃতা রাখেন মমতা। অখিলেশ যাদবের সঙ্গে এক মঞ্চে দেখা যায় তাঁকে। পরবর্তীকালে উত্তরপ্রদেশের বেশ কয়েকটি আসনে উপনির্বাচনে সপা-বসপা জোট হয় এবং ভোটের ফলে কার্যত উড়ে যায় বিজেপি। এ ক্ষেত্রেও রাজ্য রাজনীতিতে 'চিরশত্রু' সপা-বসপার বরফ গলিয়ে, 'বুয়া-বাবুয়া'কে এক বন্ধনীতে নিয়ে আসার কৃতিত্ব মমতাকেই দেন একাধিক পর্যবেক্ষক। আর এরপর কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে কুমারস্বামীর শপথ মঞ্চে বেনজির বিরোধী ঐক্যের ছবি তৈরি হয়। হাত ধরাধরি করে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছিল সোনিয়া-মায়াবতী-মমতা-ইয়েচুরি-সহ অনেক বিরোধী নেতাকেই। পাশাপাশি, গত সপ্তাহে দিল্লিতে বাম কৃষক-ক্ষেতমজুরদের পদযাত্রার সমাপ্তি মঞ্চে এককাট্টা বিরোধীদের ছবি ধরা পড়ে। তাছাড়া, বুথ ফেরত সমীক্ষা অনুযায়ী, পাঁচ রাজ্যের সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির পাল থেকে হাওয়া সরে যাওয়ার ইঙ্গিতও জোরদার। ফলে, এমতাবস্থায় বিরোধীদের এমন বৈঠক এবং সেই বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। তাই, মঙ্গলবার পাঁচ রাজ্যের ফলাফল প্রকাশের আগে সোমবার সারা দেশের রাজনীতির কারবারিদের চোখ এখন দিল্লির বৈঠকের দিকেই।