জঙ্গলমহল নিয়ে শাসকদলের মাথাব্য়াথা যে মোটেই কমেনি তা বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রামের প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের বক্তব্য়ে একেবারে পরিষ্কার। তিনি কোনভাবেই জঙ্গলমহল হাতছাড়়া করতে রাজি নন। যে কোনও মূল্য়ে সেখানে গেরুয়া শিবিরকে রুখতে চান মমতা। এদিনের বক্তব্য়ে একাধিকবার তিনি ঝাড়গ্রাম বা জঙ্গলমহলের জন্য় রাজ্য় কী কী কাজ করেছে তার ফিরিস্ত দিয়ে গেলেন। পাশাপাশি আদিবাসীদের ভুল না বোঝার আবেদন করলেন। ভাষণের একেবারে শেষে মুখ্য়মন্ত্রী বলেই ফেললেন, "আমার আদরের কন্য়া জঙ্গলমহলকে ভালো রাখুন। জঙ্গলমহল আমার খুব প্রিয়। এটা আমাকে হারাতে দেবেন না।"
আদিবাসী দিবসের মূল অনুষ্ঠান এদিন রাজ্য় সরকার আয়োজন করে ঝাড়গ্রামে। জঙ্গলমহলের উন্নয়নে রাজ্য় সবসময় পাশে থেকেছে, আগামী দিনেও থাকবে, এমনই বার্তা দেন মুখ্য়মন্ত্রী। একইসঙ্গে বারে বারেই আবেদন জানান, জঙ্গলমহলের বাসিন্দারা যাতে কোনভাবেই সরকারকে ভুল না বোঝেন। তিনি বলেন, "অলচিকি ভাষায় বই হয়েছে, স্কুল তৈরি হয়েছে। অলচিকিতে আরও শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। এরপর উচ্চমাধ্য়মিক, কলেজ ও বিশ্ববিদ্য়ালয় করা হবে অলচিকি ভাষার প্রসারের জন্য। বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়ায় দুটি করে স্কুল করা হবে।"
এদিনের বক্তব্য়ে ঝাড়গ্রামে উন্নয়নে দীর্ঘ খতিয়ান তুলে ধরেন মমতা। তিনি বলেন, "কলেজ, হাসপাতাল, সেতু, কিষাণ মান্ডি, পাকা রাস্তা, মাদার হাব, নতুন জেলা আমরা করেছি। আগামী দিনে আরও কাজ করব। আজ বিশ্ববিদ্য়ালয়ের শিলান্য়াস করা হল। এখানেই উচ্চশিক্ষা লাভ করতে পারবে জঙ্গলমহলের ছাত্রছাত্রীরা।"
এদিন মঞ্চ থেকেই পুলিশকে নির্দেশ দেন মুখ্য়মন্ত্রী। তিনি বলেন, "গ্রামে গিয়ে দেখবেন আদিবাসী, তফশিলি, সংখ্য়ালঘু বা অন্য়রা দু'টাকা কেজি দরে চাল পাচ্ছেন কী না। যদি না পান, দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্য়বস্থা নিন।" একইসঙ্গে তিনি জানান, বিধবা ভাতা, কন্য়াশ্রী এবং অন্যান্য পরিষেবা মানুষ পাচ্ছেন কী না, সেদিকেও নজর দিতে হবে।
আরও পড়ুন: সঙ্ঘের বিরুদ্ধে এবার মমতার প্রতিবাদের কবিতা 'নাম নেই'
জঙ্গলমহলের মানুষের উদ্দেশে তিনি বলেন, "আমি আদিবাসী বিভাগ নিজে দেখি। কোনরকম সমস্য়া হলে আমি নিজে দেখব। একটি রাজনৈতিক দল ভোটের সময় ভুল বোঝাচ্ছে। তাদের কাজই হল আদিবাসীদের ভুল বোঝানো, মিথ্যে কথা বলা। আমাদের ভুল হলে বলবেন, সংশোধন করে নেব। ভুল বুঝে দূরে সরে যাবেন না।" মুখ্য়মন্ত্রীর দাবি, "ওই রাজনৈতিক দল এক হাজার টাকা দিয়ে বলছে আমায় ভোট দাও। ওরা তিন দিন দেবে, আমরা ৩৬৫ দিন পাশে থাকব। আমার ওপর বিশ্বাস থাকলে আর কারোর ওপর বিশ্বাস করবেন না।" এদিন মাওবাদী নিয়েও ফের আশঙ্কা প্রকাশ করেন রাজ্য়ের প্রশাসনিক প্রধান। বলেন, "বেলপাহাড়ীর দিকে কিছু জায়গায় মাওবাদীরা ঢুকছে। একটা দল ঝাড়খন্ড থেকে মাওবাদীদের নিয়ে আসছে। জঙ্গলমহলকে রক্তাক্ত করতে চাইছে।"
কিছুটা প্রত্যাশিতভাবেই, তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বে ফের রদবদলও ঘটল জঙ্গলমহলে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর এই প্রথম ঝাড়গ্রামে দলনেত্রীর মুখোমুখি হলেন সেখানকার নেতৃত্ব। সূত্রের খবর, ঝাড়গ্রাম রাজবাড়িতে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বৈঠকে বসেছিলেন নেতাদের সঙ্গে। জানা গিয়েছে, উত্তরা সিংহ রায়কে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সভানেত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কার্যকরী সভানেত্রীর দায়িত্ব বর্তেছে ডেবরার বিধায়ক শালিমা খাতুনের ওপর। ওই জেলার এসসি সেলের জেলা সভাপতি হচ্ছেন শঙ্কর দলুই, এবং কার্যকরী সভাপতি হচ্ছেন বিধায়ক শিউলি সাহা। অন্য়দিকে, মেদিনীপুর টাউনের তৃণমূল সভাপতি করা হল বিশ্বনাথ পান্ডেকে। এছাড়া অন্য় শাখা সংগঠন এবং ব্লক স্তরের নেতৃত্বেও বদল আনা হয়েছে।