'দেশের মানুষকে তাড়িয়ে ভিনদেশী কালো টাকার কারবারিদের নাগরিকত্ব দিতেই কী সংশোধিত নাগরিক্তকত্ব আইন করেছে গেরুয়া শিবির?' সিএএ প্রতিবাদে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ধর্নামঞ্চ থেকে বিজেপিকে নিশানা করে এই প্রশ্ন তুললেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন আবারও বিজেপিকে 'পাকিস্তানের দূত' বলে কটাক্ষ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত সপ্তাহে মমতা-মোদী সাক্ষাৎ ঘিরে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে বিরোধী শিবির। এমনকী তৃণমূলকে বিঁধতে তীর্যক মন্তব্য উড়ে আসছে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের তরফে। ওই বৈঠক প্রসঙ্গেও মঙ্গলবার মুখ খোলেন নেত্রী। তুলে ধরেন বাংলার অতিথি আপ্যায়ন পরম্পরার কথা।
Advertisment
গত শনিবার থেকে রানি রাসমণি রোডের ধর্ণামঞ্চ থেকে সিএএ বিরোধী প্রচার চালাচ্ছে রাজ্যের শাসক দলের ছাত্র সংগঠন। বেশ কয়েকবার সেই মঞ্চে গেলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। সেখানেই মঙ্গলবার তিনি বলেন, 'এই আইনের মাধ্যমে বৈধ নাগরিকদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হবে এবং তা সেই সব ভিনদেশীদেরকেই কী দেওয়া দেওয়া হবে যারা বিজেপিকে টাকা দেয়।' এরপরই তাঁর দাবি, 'কালো টাকার কারবারিদের নাগরিকত্ব দিতেই সিএএ আইন করা হয়েছে'।
সিএএ-এর প্রতিবাদে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ধর্নামঞ্চে মমতা।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায় এদিন উঠে এসেছে বাংলার অতিথি আপ্যায়ন পরম্পরার প্রসঙ্গ। তাঁর কথায়, 'বাংলাই সবচেয়ে সুরক্ষিত রাজ্য।' ৩৭০ ধারা বিলোপের পর কাশ্মীরে বাংলার ৬ শ্রমিকের হত্যার উদাহরণ টেনে এদিন পদ্ম শিবিরকে আক্রামণ করেন তৃণমূল নেত্রী। মমতা বলেন, 'আমরা জানি অতিথিদের কেমন করে সম্মান জানাতে হয়। এমনকী আমরা শত্রুদেরও সম্মান করি। এর মানে এই নয়-যে আমাদের দলের নেতাদের জম্মু, গুয়াহাটি বা জেএনইউতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।'
বেশ কয়েকবার বিরোধীদের পাকিস্তানী বলে দেগে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এদিন সেই প্রসঙ্গেও বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হতে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে। তাঁর প্রশ্ন, 'ওদের সঙ্গে কী পাকিস্তানের আঁতাঁত রয়েছে, নাকি ওরা পাকিস্তানের দূত?' এই নিয়ে দ্বিতীয়বার গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে পাক যোগ তুলে আক্রমণ শানালেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। এর আগে ৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী মোদীকে 'পাকিস্তানের দূত' বলে আক্রমণ করেছিলেন মমতা। তিনি বলেছিলেন, 'আমরা পাকিস্তান চাই না। আমরা ঐক্যবদ্ধ হিন্দুস্তান চাই। আপনি (মোদী) তো বাংলাদেশ, নেপাল, ভূটানের কথা বলেন না। খালি পাকিস্তান পাকিস্তান করছেন। আমরা পাকিস্তানের কথা শুনতে চাই না।'
গত সপ্তাহেই এরাজ্যে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সময় রাজভবনে মোদী-মমতা সাক্ষাৎ হয়। যাকে 'সৌজন্য' সাক্ষাৎ বলে দাবি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এই সাক্ষাৎ ঘিরেই উঠে আসছে একাধিক প্রশ্ন। তৃণমূল-বিজেপি আঁতাঁত তত্ত্ব খাড়া করে বিরোধীরা বিঁধছে রাজ্যের শাসক শিবিরকে। এদিন সেই বৈঠকের ব্যাখ্যা দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীকে সেদিনই জানিয়েছি, আমরা সিএএ-এনআরসি-এনপিআরের বিরোধী। এর প্রতিবাদ করছি আমরা। বিভেদের বিরুদ্ধে আমরা। চাই না কোনও দেশবাসীর নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হোক। আমি তাঁকে বলেছি, কেন্দ্র যেন সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে দেখে। এই আইনের বাতিল হওয়া উচিত বলে মনে করি।'
প্রসঙ্গত, প্রথম থেকেই সিএএ-এনআরসির প্রতিবাদে মুখর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে এনপিআরের কাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন, তাঁর প্রাণ থাকতে বাংলায় সিএএ ও প্রস্তাবিত এনআরসি লাগু করা যাবে না। ইতিমধ্যেই রাজ্যে সিএএ বিরোধী একাধিক সভা, মিছিল করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে, যোগ দেননি কংগ্রেসের ডাকা সিএএ বিরোধী বৈঠকে। বাংলা থেকেই কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাচ্ছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। অতিমধ্যেই সিএএ বিরোধিতায় জাতীয়স্তরে অন্যতম মুখ মমতা। সেই ধারা বজায় রাখতে তৎপর নেত্রী। এই প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার তোলা তাঁর একাধিক প্রশ্ন বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।