আরও এক ধাপ নামল রাজ্য সরকার-রাজ ভবন সমীকরণ। বুধবার কোনোরকম রাখঢাক না করেই আবারও একবার টুইট করে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় জানালেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আচরণে তিনি হতাশ। শুধু তাই নয়, একদিন আগে বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে গিয়ে তাঁর প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর ব্যবহারে তিনি “হতভম্ব” এবং “কিংকর্তব্যবিমূঢ়” বলেও জানিয়েছেন রাজ্যপাল ধনকড়।
বুধবার তাঁর টুইটে রাজ্যপাল লেখেন, “আমি কখনোই কাউকে সৌজন্য দেখানোর ব্যাপারে আপোষ করব না, বিশেষ করে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে, যাঁকে আমি ব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করি। অবাক ব্যাপার হলো, তিনি প্রত্যাশিত আচরণ করলেন না, যা দেখে আমি হতভম্ব, কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ি। সকলকেই, যেমন অমিত মিত্র, পার্থ, আব্দুল মান্নান, এবং বিধায়কদের আমি সম্ভাষণ করি।”
At 3 PM on constitution day Hon’ble CM had involved participation with the dignitaries at the statue of Dr Ambedkar. At 5.30 when I paid flower tributes at the statue of Dr Ambedkar, this involvement was missing. pic.twitter.com/4k4x5LI5Mp
— Jagdeep Dhankhar (@jdhankhar1) November 27, 2019
ভারতের সংবিধানের ৭০ বর্ষ পূর্তি উপলক্ষ্যে বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে বিধান ভবনে মঙ্গলবার মুখোমুখি হন রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রী, কিন্তু কোনোরকম বাক্য বিনিময় করেন নি তাঁরা।
সংবিধান দিবসে ভাষণ দিতে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে বিধানসভায় যান ধনকড়। কিন্তু আম্বেদকরের মূর্তিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে বিধানসভায় ঢুকতে গিয়ে রাজ্যপাল সামনাসামনি পড়ে যান মমতার, যিনি বিধানসভায় রাজ্যপাল যাতে আগে ঢুকতে পারেন, তার অপেক্ষা করছিলেন।
কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর দুই বিরোধী দলনেতা সুজন চক্রবর্তী এবং আব্দুল মান্নানকে সঙ্গে করে জোড়হাতে মুখ্যমন্ত্রীর দিকে না তাকিয়েই বিধানসভার দিকে এগিয়ে যান রাজ্যপাল ধনকড়। সেসময় অন্যদিকে চেয়ে থাকেন মমতাও।
তাঁর প্রতি আচরণ সম্পর্কে অভিযোগ জানানোর পর রাজ্যপালের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন তৃণমূলের একাধিক মন্ত্রী। বিধানসভায় নাম না করে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় রাজ্যপালকে নিশানা করে বলেন, “কোথাও সরকারের আমন্ত্রণে হাজির হয়ে তারপর সরকারেরই সমালোচনা করা, এটা কি ঠিক?”
সংবিধান চালু হওয়ার ৭০ বছর পর রাজ্যপালের পদের আদৌ কোনও প্রাসঙ্গিকতা আছে কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন পার্থবাবু। “কিছু ব্যক্তি তাঁদের পদে মনোনীত হওয়া সত্ত্বেও একটি নির্বাচিত সরকারের কাজে হস্তক্ষেপ করছেন, সেটা কতটা সাংবিধানিক, তা নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত,” বলেন তিনি। অতীতে গুরুত্বপূর্ণ হলেও আজকের যুগে রাজ্যপালের পদের প্রাসঙ্গিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসম্পাদক। সঙ্গে এও যোগ করেন যে এখানে কোনও ব্যক্তিগত সংঘাতের প্রশ্ন নয়, প্রশ্ন উঠছে কোনও ব্যক্তির অধিকার এবং কর্তব্য নিয়ে। গত তিন বছরে রাজভবনের ব্যয় যে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে, সেদিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
অন্যদিকে রাজ্যপালকে একহাত নিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যও। তাঁর কথায়, “আমরা রাজ্যপালের বিরুদ্ধে কিছু বলতে চাই না। কিন্তু তিনি একদিকে রাজ্য সরকারের সমালোচনা করেছেন, অথচ মহারাষ্ট্র সম্পর্কে একটা কথাও বলেন নি।”
তৃণমূলের প্রাক্তন লোকসভা সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী টুইট করে লেখেন, “স্বাধীন ভারতের রাজ্যপালরা যদি ব্রিটিশ আমলের ভাইসরয়দের মতো আচরণ করেন, তবে গুরুতর সাংবিধানিক সঙ্কট আসন্ন!!!”
বুধবার রাতে একের পর এক টুইটে রাজ্যপাল ধনকড় তাঁকে অবহেলা করার মূল অভিযোগকে মজবুত করার চেষ্টা করে যান। মঙ্গলবারই তিনি দুটি ভিডিও পোস্ট করেন, একটিতে মুখ্যমন্ত্রীকে দেখা যাচ্ছে সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে, এবং অন্যটিতে কিছু বিশিষ্টদের সঙ্গে আম্বেদকরের মূর্তিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে। এঁদের মধ্যে ছিলেন প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কুরেশি, প্রাক্তন রাজ্যপাল তথা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এম কে নারায়ণন, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি শ্যামল সেন, এবং প্রাক্তন লোকসভা অধ্যক্ষ মীরা কুমার।
সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আলাপচারিতার ভিডিও পোস্ট করে রাজ্যপাল লেখেন, “সংবিধান দিবসের এই ভিডিও দেখে বোঝাই যাচ্ছে, একজন সাংবিধানিক রাজ্যপ্রধানকে কী মান্যতা দেওয়া হচ্ছে। আত্মসমীক্ষার সময় এসেছে, বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেওয়ার নয়।” উল্লেখ্য, এই ভিডিওতে উপস্থিত সমস্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নাম করেন মুখ্যমন্ত্রী, এবং রাজ্যপালের নাম না করলেও “বর্তমান রাজ্যপাল” যে উপস্থিত ছিলেন, সেকথা উল্লেখ করেন।