বনধ বিরোধিতায় সোচ্চার হয়ে বুধবার সিপিএমের চিরকালীন অন্তর্দ্বন্দ্ব খুঁচিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বামেদের ডাকা এদিনের বনধের বিরোধিতা করতে গিয়ে বঙ্গ সিপিএমের সঙ্গে কেরালা সিপিএমের তুলনা করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। বুধবার গঙ্গাসাগরে বিমান বসু-সূর্যকান্ত মিশ্রদের নাম না করে মমতার মন্তব্য, ‘‘কেরালা সিপিএম অনেক ভাল, একটা মতাদর্শ মেনে চলে’’। উল্লেখ্য, মমতার হাত ধরেই বাংলায় ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটেছিল। এদিকে, দেশের মধ্যে এই মুহূর্তে একমাত্র কেরালাতেই বামেদের সরকার ও সিপিএম-এর মুখ্যমন্ত্রী। বরাবরই সিপিএমের অন্দরে কান পাতলে কেরালা ও বাংলা লাইনের মতপার্থক্যের কথা শোনা যায়। এতদিন এ ইস্যু নিয়ে তুলনামূলক আলোচনা চলেছে সিপিএমের অন্দরে। কিন্তু এদিন এ ইস্যুতে যেভাবে দলের বাইরের মমতা মুখ খুললেন, তা রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ। বিশেষত, সিএএ ও এনআরসি ইস্যুতে ক’দিন আগেই মমতাকে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন কেরালার বাম সরকারের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। এই প্রেক্ষিতে মমতার এহেন মন্তব্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই ব্যাখ্যা রাজনীতির কারবারিদের একাংশের।
আরও পড়ুন: Bharat Bandh Today Live: ভারত বনধে কলকাতায় উত্তেজনা, মৌলালিতে পুলিশ-ধর্মঘটী হাতাহাতি
একদা বিরোধী নেত্রী হিসাবে একাধিক বনধ করলেও রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বনধ বিরোধিতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষিত নীতি। এদিন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘দেশের অর্থনীতির কথা মাথায় রাখা উচিত। একেই মানুষের আয় কমেছে। কোথায় সাধারণ মানুষকে সাহায্য করবে, সাধারণেরই তো সবথেকে কষ্ট হয় বনধে। তাহলে কেন আজ দেশের ক্ষতি করছে? ইস্যুকে সমর্থন করি, তবে সে জন্য শান্তিপূর্ণ পথে আন্দোলন করতে হবে। গায়ের জোরে বনধ বাংলায় হবে না। প্রত্যেক বনধে ব্যর্থ হচ্ছে, তা সত্ত্বেও বছরে ৪টে বনধ ডাকছে। ভাবে, বনধ করে সস্তায় পাবলিসিটি পাবে। আন্দোলনের নামে গুন্ডামি বন্ধ করুন। এমন করেই দলটা সাইনবোর্ডে পরিণত হয়েছে। আর এখন ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছে। ৩৪ বছরে একে তো করেনি কিছু, এখন উন্নয়ন সহ্য করতে পারছে না’’।
আরও পড়ুন: ‘জেএনইউ-তে সাজানো ঘটনা, রক্ত না লাল রং?’, বিস্ফোরক দাবি দিলীপ ঘোষের
এরপরই বনধ সমর্থনকারীদের উদ্দেশে মমতার হুঁশিয়ারি, ‘‘পুলিশ কঠোর পদক্ষেপ করবে। সিপিএমের মতো গুলিপন্থায় বিশ্বাসী নই। আইন আইনের পথে চলবে। যাঁরা সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করছেন, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাংলায় আগ বাড়িয়ে আগুন লাগাচ্ছে, এটা দাদাগিরি, ধিক্কার জানাই’’।
মমতা কেন কেরালা সিপিএম-কে ভাল বললেন?
সাম্প্রতিককালে বঙ্গের বামেরা যতবার নানা ইস্যুতে কেন্দ্র বিরোধিতায় পথে নেমেছে, ততবারই প্রায় একই বন্ধনীতে রেখে তাঁরা তোপ দেগেছেন রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এদিকে ভারতজোড়া সিএএ-এনআরসি প্রতিবাদের আবহে দেশের মধ্যে প্রথম রাজ্য হিসাবে বিধানসভায় প্রস্তাব পাশ করিয়েছে কেরালার পিনারাই বিজয়ন সরকার। এই দুই ইস্যুতে আনা প্রস্তাবে সমর্থন করেছে কেরালার বিরোধী দল কংগ্রেসও। বিজয়ন সরকারের এই পদক্ষেপ অসাংবিধানিক বলে ইতিমধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে কেন্দ্রের বিজেপি এবং রাজ্যপাল। এরপরই দেশের সবক'টি অ-বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে বিজয়ন বলেন, "এ সময় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে"। বঙ্গ সিপিএম যে কোনও ইস্যুতে বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলকে এক বন্ধনীতে রেখে আক্রমণ করলেও, সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে ঐক্য গড়তে যে মমতাকেও প্রয়োজন সে বার্তা দিয়েছেন দেশের একমাত্র সিপিআইএম মুখ্যমন্ত্রী। এমতাবস্থায় মমতাও জোর গলায় কেরালা সিপিএমের প্রশংসা করে জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষিতে বিশেষ বার্তা দিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, অতীতে বহুবার মমতার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের মতপার্থক্য সামনে আসলেও কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের সঙ্গে তাঁর 'সুসম্পর্ক' দেখা গিয়েছে এবং রাজনৈতিক সমীকরণে তার প্রভাবও পড়েছে।
আরও পড়ুন: ‘ভাইপোকে বাঁচাতে দালালি করেছেন মমতা’
উল্লেখ্য, একাধিক দাবিতে আজ ২৪ ঘণ্টার ভারত বনধের প্রভাব পড়েছে কলকাতাতেও। সকাল থেকেই কলকাতায় বিক্ষিপ্ত উত্তজেনার খবর মিলেছে। শহরের বেশিরভাগ দোকানপাটই বন্ধ রয়েছে। বনধ মোকাবিলায় অতিরিক্ত বাস চালাচ্ছে রাজ্য সরকার। তবে যাত্রীসংখ্যা অন্যান্য দিনের তুলনায় কম। কলকাতার পাশাপাশি সকাল থেকে জেলায় জেলায় রেল-সড়ক অবরোধে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নিত্যযাত্রীরা।