বাংলা জয়ের হ্যাটট্রিক সম্পন্ন। এবার একমাত্র লক্ষ্য দেশ থেকে মোদী সরকারের পতন। সাফ জানালেন তৃণমূল সুপ্রিমো। দেশ থেকে গেরুয়া সরকার উৎখাতে এবার সর্বভারতীয়স্তরে বিজেপি বিরোধী 'ইউনিয়ান' গঠনের ডাক দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে কেন্দ্রের টিকানীতি, কৃষি-কৃষক নীতি নিয়েও এদিন তোপ দাগেন মমতা। শিল্প থেকে কৃষি, সবকিছুতেই মোদী সরকার ব্যর্থ বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী।
কী বলেছেন মমতা?
নবান্নে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন দিল্লি সীমানায় চলা কৃষক আন্দোলনের নেতা রাকেশ টিকায়েত। এই আন্দোলনকে প্রথাম থেকেই সমর্থন জানিয়েছে তৃণমূল। সংসদীয় দলও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করেছিল, কথা বলেছিলেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কৃষক বিরোধী কৃষি আইন নিয়েও এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে টিকায়েতের কথা হয়। পরে টিকাত মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, 'মমতাজি বিজেপির হাত থেকে বাংলাকে বাঁচিয়েছেন, এবার দেশকে বাঁচাতে হবে।'
এরপরই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'কৃষকদের দাবিপূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলনের পাশে থাকবো। মোদী সরকারকে হটানোই এখন লক্ষ্য। এ জন্য বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলবো। জোট বেঁধে কি করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করতে হবে।' এই প্রথম নয়। ২০১৯ সালে লোকসভার আগেও বিজেপি বিরোধী জোট গঠনের পুরভাগে ছিলেন স্বয়ং তৃণমূল নেত্রী। ব্রিগেডে সব বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের উপস্থিতিতে 'ইউনাইটেড ইন্ডিয়া ব়্যালি'ও অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু ভোটের ফলে সেই জোট নজরকাড়তে ব্যর্থ হয়।
একই সঙ্গে মমতার কৌশলী বার্তা, 'যাঁরা বিজেপির পুরনো লোক আছেন। যাঁরা পুরনো ঘরানার মানুষ। আর যে যুবক নেতারা মোদীকে দেখে চলে গিয়েছেন। তাঁদের ফিরে এসে একাট্টা হয়ে হিন্দুস্তানকে বাঁচাতে, কৃষকদের বাঁচাতে, যুবকদের বাঁচাতে, শ্রমিকদের বাঁচানোর আবেদন থাকল আমার।'
আরও পড়ুন- Rajib Banerjee: ‘গদ্দার-বেইমান’, ডোমজুড়ে রাজীবের বিরুদ্ধে পোস্টার, তৃণমূলে না ফেরানোর আবেদন
কোন শক্তিতে ভারত থেকে ফের মোদীকে উৎখাতের স্বপ্ন দেখছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, একুশের বিধানসভা জয়ে জাঁপিয়েছিল পদ্ম বাহিনী। নেতৃত্বে ছিলেন মোদী-অমিত শাহরা। তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচারে একের পর এক দুর্নীতির অভিযগ তোলে গেরুয়া নেতৃত্ব। হিড়িক পড়ে যায় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে নাম লেখানোর। কিন্তু ভোটের ফলে ধরাশায়ী হয় বিজেপি। প্রচারে দু'শো আসন জয়ের দাবি করলেও বাস্তবে একশর গণ্ডি ছুঁতে পারেনি দিলীপ-শুভেন্দুরা। উল্টোদিকে সব বুথ ফেরৎ সমীক্ষাকে তুচ্ছ করে ২০০-র বেশি আসনে জয় পায় তৃণমূল।
এবারের নির্বাচন ছিল কার্যত মমতা বনাম মোদী। তাতেই সাফল্য পেয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। মমতার নেতৃত্বে এই চমকপ্রদ জয়ে মোদী সহ গোটা বিজেপি শিবিরকেই ধাক্কা দেওয়া গিয়েছে বলে মনে করছে গেরুয়া শিবির বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। এদের অনেকেই আবার বিশ্বাস করতে শুরু করেছে মোদীকে বেগ দিতে একমাত্র যোগ্য প্রতিপক্ষ হলেন মমতাই। তাই কংগ্রেসের বহু তাবড় নেতা থেকে বিরোধী নেতৃত্ব ২০২৪-র লোকসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই প্রধানমন্ত্রী মুখ করে লড়াইয়ের পক্ষপাতি। বিরোধীদের এই অবস্থান অজানা নয় বাংলার মুখ্যমন্ত্রীরও। তাই আর দেরি না করে, এবার আলোচনার মাধ্যমে বিজেপি বিরোধী 'ইউনিয়ান' গঠনের ডাক দিলেন তৃণমূল নেত্রী।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন