কাটমানি নিয়ে তৃণমূলে আলোড়নের মধ্যেই এবার মুখ খুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কাটমানি ইস্যুতে তাঁর বক্তব্য বিকৃত করেছে বিজেপি, এমন অভিযোগই করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। শুক্রবার দলের বৈঠকে কর্মীদের উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘‘কাটমানির কথা এভাবে বলতে চাইনি। বিজেপি বিকৃত করেছে। সরকারি প্রকল্পে উপভোক্তাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। আমার কথার অপব্যাখ্যা করা হয়েছে’’। সূত্র মারফৎ এমনটাই জানা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, জনপ্রতিনিধিদের কাটমানির টাকা ফেরতের নির্দেশ দিয়েছিলেন স্বয়ং তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলনেত্রীর এহেন নির্দেশের পরই বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে কাটমানির টাকা ফেরতের দাবিতে ‘নজিরবিহীন’ ভাবে বিক্ষোভ প্রদর্শন চলে। বহু তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ ইতিমধ্যেই সামনে এসেছে।
আরও পড়ুন: কাটমানি ইস্যু নিয়ে বিক্ষোভ রাজ্যে, চলছে ঘেরাও পর্ব
অন্যদিকে, উনিশের নির্বাচনে বাংলায় দলের ধাক্কা সামলে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। “২১ -এ ফের ফিরবো। তৃণমূল ফের ঘুরে দাঁড়াবে। ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই, লড়াই করুন”, শুক্রবার তৃণমূল ভবনে দুই জেলার সাংগঠনিক বৈঠকে এ ভাষাতেই দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করার মন্ত্র দিলেন তৃণমূলনেত্রী। পাশাপাশি দলে বিশ্বাসঘাতকতার যে কোনও জায়গা নেই, সেটাই ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন মমতা। সূত্রের খবর, দলের কর্মীদের উদ্দেশে মমতার নির্দেশ, ‘‘এবারের লোকসভা ভোটে অনেকেই বিজেপির টাকা খেয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন। দলে এখনও অনেকে বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। তাদের খুঁজে বের করুন’’।
আরও পড়ুন:কাটমানি শোধ করে বিজেপিতে আসতে হবে, বার্তা দিলীপ ঘোষের
সদ্য লোকসভা নির্বাচনে ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া ও বিষ্ণপুরে বিজেপির কাছে পরাজিত হয়েছে তৃণমূল। লজ্জার হার হয়েছে বাঁকুড়া ও বিষ্ণপুরে। সূত্রের খবর, এদিন বাঁকুড়া ও ঝাড়গ্রামের দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে রণমূর্তি ধারন করেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিনের বৈঠকে তিনি ওই হারের জন্য জেলা নেতৃত্বকে দায়ী করেছেন। বাঁকুড়ার দুই নেতা অরূপ চক্রবর্তী ও অরূপ খাঁকে রেয়াত করেননি। ওই জেলার যুব সভাপতি রাজীব ঘোষালকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে খবর।
আরও পড়ুন: বিজেপির বিরুদ্ধে মমতার একসঙ্গে চলার আহ্বানে কী বলছে সিপিএম-কংগ্রেস?
এদিনের বৈঠকে বেশ কিছু টোটকা বাতলেছেন তৃণমূলনেত্রী। তাঁর বার্তা, ‘‘প্রশাসনিক নির্ভরতা কমিয়ে সংগঠনকে মজবুত করুন। দলের জনসংযোগ নেই বলে, কুর্সির বলে ছড়ি ঘুরিয়েছেন। মানুষের কাছে যাননি। বাড়ি বাড়ি যান। মানুষের দুঃখ শোনা হয়নি, অগ্রাহ্য করা হয়েছে। মানুষের সুখ-দুঃখের কথা শুনুন। সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছে কিনা খবর নিন। প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দলের সঙ্গে কাজ করুন’’।
ঝাড়গ্রামের লোকসভা আসনে পরাজয় নিয়ে মমতার বক্তব্য, ‘‘ঝাড়গ্রাম অল্প ভোটে হেরেছে। একশ্রেণির নেতাদের বিচ্ছিন্নতাই তার কারণ। এতো কাজ করেছি, তবু এসসি-এসটির কাছে পৌঁছানোর অভাব ছিল। অভিযোগ এসেছে কিছু ক্ষেত্রে। আমাদের ভুল শোধরাতে হবে। প্রয়োজনে সাংগঠনিক রদবদল করতে হবে। রাজনৈতিক লড়াই করতে হবে। কোনও সংঘর্ষে জড়ানো যাবে না’’।