২১শের বৈতরণী পারে বিজেপির টার্গেট মতুয়া-আদিবাসী-তফসিলি ভোটব্যাঙ্ক। আজই বাংলায় আসছেন আমিত শাহ। বৃহস্পতিবারই আদিবাসী অধ্যুষিত বাঁকুড়ায় করবেন সাংগঠনিক বৈঠক। শুক্রবার যাবেন মতুয়া প্রভাবিত গৌরাঙ্গনগরে। তার আগেই মতুয়া-আদিবাসী সহ বাংলার পিছিয়ে পড়া সমাজের মানুষদের উন্নয়নে তাঁর সরকারের কর্মসূচি-উন্নয়ন প্রকল্পের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একাধিক প্রান্তিক জনজাতির উন্নয়নে সংস্কৃতি উন্নয়ন বোর্ড, আর্থিক বরাদ্দের ঘোষণা করলেন।
বাংলার ক্ষমতা দখলে মরিয়া গেরুয়া শিবির। তাদের নিশানায় রাজ্যে আদিবাসী-তফসিলি-মতুয়া ভোট। সেই লক্ষ্যেই অমিত শাহ রাজ্যে এসেই সাংগঠনিক বৈঠকের জন্য বেছে নিয়েছেন বাঁকুড়াকে।বিরসা মুণ্ডার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে আদিবাসী গ্রাম চতুর্দহীতে আদিবাসী পরিবারের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ সারবেন। জানা গিয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনার গৌরাঙ্গনগরে কর্মসূচি রয়েছে শাহের। সেখানে মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ সারবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
বিজেপি যে রাজ্যের আদিবাসি-মতুয়াদের মধ্যে প্রভাব বাড়াচ্ছে তা গত লোকসভাতেই স্পষ্ট। আধিবাসী অধ্যুষিত ঝাড়গ্রাম ও মতুয়া প্রভাবিত বনগাঁ লোকসভার দখল নিয়েছেন গেরুয়া প্রার্থীরা। সামনেই বিধানসভা ভোট। পাশা উল্টোতে উদ্যোগী তৃণমূল শিবিরও। তাই অমিত শাহ রাজ্যে আসার কেয়েক ঘন্টা আগেই নবান্ন সভাঘরে মতুয়া, বাগদি, বাউরি সহ পিছিয়ে পড়া জাতির প্রতিনিধিদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন মমতা। তাঁদের পরামর্শও জানতে চান। বলেন, 'মতুয়া, বাগদি, মাঝি, নমশ্রুদ্র তফশিলিরাই সমাজের জরুরি অংশবিশেষ। তাই সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নে ওদের পরামর্শ বিশেষ প্রয়োজন।'
আরও পড়ুন- রাজ্যে এসে মতুয়া-আদিবাসীদের বাড়িতেই মধ্যাহ্নভোজ সারবেন অমিত শাহ
বিধানসভার আগে মতুয়াদের মন জয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, 'মতুয়াদের বাড়ি আমিই প্রথম গিয়েছিলাম। সবসময়ই বড় মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলাম। তার আগে ওদের দিকে কেউ তাকাতোও না। রেল স্টেশন, কলেজ হয়ে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ এগোচ্ছে। মতুয়াদের উন্নয়ন বোর্ড তৈরি হচ্ছে। টাকা বরাদ্দ রয়েছে। বোর্ডের সদস্যদের বেছে নিতেই একটু সময় লাগছে। ঠাকুরনগরকে পর্যটনস্থলে রূপান্তরের চেষ্টা করছে সরকার।' মতুয়া উন্নয়ন পর্ষদকে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দের কথাও ঘোষণা করেন তিনি। নমঃশ্রূদ্রদের কথা উল্লেখ করে মমতা জানিয়েছেন এই সম্প্রদায়ের উন্নয়ন বোর্ড তৈরি, পাঁচ কোটি টাকাও দেওয়া হয়েছে। তাঁর ঘোষণা বাউরি-দুলে ও বাগদি-মাঝিদের উন্নয়নে সাংস্কৃতিক উন্নয়ন বোর্ড গড়া হবে।
আদিবাসী ভোট জোড়া-ফুলে ফেরাতে এ দিন মমতা জানিয়ে দেন রাজ্য কড়া আইন করেছে। ফলে আদিবাসীদের জমি কেউ কেড়ে নিতে পারবেন না। একই সঙ্গে উদ্বাস্তুদের হাতে এ দিন জমির পাট্টা বিলি করেন মুখ্যমন্ত্রী। এ পর্য়ায়ে ২৫ হাজার উদ্বাস্তু পরিবারকে জমির পাট্টা দেওয়া হবে। পরে আরও ২৫ হাজার উদ্বাস্তু পরিবার পাট্টা পাবেন। তাঁর কথায়, 'সব উদ্বাস্তু কলোনির জমি আইন করে বিলি করা হচ্ছে। কেই বলতে পারবেন না উদ্বাস্তুরা বাইরে থেকে এসে দখল করে আছেন।'
কাস্ট সার্টিফিকেট পাওয়ার প্রক্রিয়া এ রাজ্যে আরও সহজ হচ্ছে বলে ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এখন থেকে জন্মসূত্রে তপসিলি কোনও ব্যক্তি পরিবারের কোনও সদস্যের কাস্ট সার্টিফিকেট দেখাতে পারলেই কাস্ট সার্টিফিকেট পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। আবেদনের চার সপ্তাহের মধ্যেই মিলবে সার্টিফিকেট।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন