দরজায় কড়া নাড়ছে লোকসভা নির্বাচন। আর সেই নির্বাচনে "হাজার হাজার কোটি টাকা" নিয়ে নেমে পড়েছে বিজেপি। তাই তাদের সঙ্গে লড়তে সর্বশক্তি নিয়ে দলকে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিলেন সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূলের বর্ধিত কোর কমিটির বৈঠকে প্রথম থেকেই কড়া মেজাজে বক্তৃতা শুরু করেন দলনেত্রী। বক্তৃার গোড়ায় কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে আক্রমণের পরই দলীয় সংগঠনের বিষয়ে কথা বলতে শুরু করেন মমতা।
বিজেপি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, সিবিআই-এর মতো কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে ধ্বংস করতে সচেষ্ট হলেও তৃণমূল কংগ্রেস তা হতে দেবে না। আগামী দিনে জাতীয় স্তরে তৃণমূল বড় ভূমিকা নেবে বলে বৈঠকের মূল সুর বেঁধে দেন মমতা। এরপরই তাঁর দল সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস যে আক্ষরিক অর্থেই 'সর্বভারতীয়', সে কথা বুঝিয়ে দিয়ে রাজ্যভিত্তিক দলীয় সংগঠনের দায়িত্ব বণ্টন শুরু করেন মমতা। তৃণমূলের প্রথম সারির নেতাদের নাম করে এক একটি রাজ্যের দায়িত্ব তুলে দেন তিনি।
এক নজরে দেখে নিন, কোন নেতা কী দায়িত্ব পেলেন
আসামের পাশাপাশি ত্রিপুরার দায়িত্ব পেলেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম। তৃণমূলের নমশুদ্র সংগঠন ত্রিপুরায় সভা করতে চায়। 'ববি' যাতে এই বিষয়টা এখনই গুরুত্ব দিয়ে দেখেন, সেই নির্দেশ দিয়েছেন দলনেত্রী।
*মণিপুরের দায়িত্ব পেয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও'ব্রায়েন। তাঁকে সাহায্য করবেন বিধায়ক তথা বিধাননগর পুরসভার মেয়র সব্যসাচী দত্ত।
আরও পড়ুন: স্ট্যাচু বানাতে বানাতে ভোটের পর বিজেপিই স্ট্যাচু হয়ে যাবে: মমতা
* ঝাড়খণ্ডে তৃণমূল সংগঠন দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অরূপ বিশ্বাস, মলয় ঘটক এবং জিতেন তিওয়ারিকে। এছাড়া, এই রাজ্যের একটা অংশ দেখবেন শুভেন্দু অধিকারী এবং শান্তি মাহাতো। দলবদ্ধভাবে এই কাজ করার নির্দেশ দলনেত্রীর। ঝাড়খণ্ডে এবার তৃণমূল নির্বাচনে লড়বে বলেও জানিয়েছেন মমতা। ঝাড়খণ্ড থেকে প্রচুর মানুষ তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এই দাবি করে তিনি বলেন, খনিজ পদার্থে পূর্ণ এই রাজ্যটিতে দলের সংগঠনে জোর দিতে।
* বিহারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তৃণমূল বিধায়ক অর্জুন সিংকে। তবে দলনেত্রীর পর্যবেক্ষণ, "অর্জুন খুব ফাঁকি দেয়, টাইম দেয় না।" অর্জুন সিং এবারও ফাঁকি দিলে দায়িত্ব কেড়ে নেবেন বলেও সচেতন করেছেন মমতা। এই রাজ্যের কিষানগঞ্জের দায়িত্ব শুভেন্দু অধিকারীকে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: অন্ধ্রে সিবিআই প্রবেশ নিষিদ্ধ করলেন চন্দ্রবাবু নাইডু, পরোক্ষে সমর্থন মমতার
* ওড়িষার দায়িত্ব যুগ্মভাবে পেয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী এবং সুব্রত বক্সি। দায়িত্ব দিয়েই মমতা বলেছেন, "এখানে বসে গাউড করলে চলবে না। ওখানে ব্লকে ব্লকে কাজ করতে হবে।"
* মহারাষ্ট্রে তৃণমূলের সংগঠন দেখার ভার পেয়েছেন প্রবীণ সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী। ব্যারাকপুরের সাংসদকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে বলেছেন মমতা।
দলের নেতাকর্মীদের শুধু দায়িত্ব দিয়েই থামেননি নেত্রী। বরং সেই দায়িত্ব গুরুত্বের সঙ্গে সামলাতে না পারলে তিনি যে দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন, সে কথাই স্পষ্ট বলেছেন। প্রতি মাসে কাজের অগ্রগতির বিবরণ জানিয়ে একটি করে রিপোর্ট তাঁর অফিসে জমা করার নির্দেশও দিয়েছেন মমতা। এরপরও যদি কর্তব্যে গাফিলতি দেখা যায়, তাহলে তৎক্ষণাৎ "চেঞ্জ করে দেব" বলেও সমঝে দিয়েছেন।