এনআরএস ইস্যুতে এমনিতেই যথেষ্ট ‘চাপে’ শাসক শিবির। এর মধ্যেই তৃণমূলের অন্যতম শীর্ষ নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কন্যা শাব্বার বিস্ফোরক ফেসবুক পোস্টে অস্বস্তিতে মমতা বাহিনী। জুনিয়র ডাক্তারদের নিগ্রহের ঘটনায় চিকিৎসক হিসেবে সোচ্চার হয়েছেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের মেয়ে শাব্বা হাকিম। এনআরএসের ঘটনায় তৃণমূল নেতৃত্বের নীরবতা শাব্বাকে ‘লজ্জিত’ করেছে। পাশাপাশি, এই পরিস্থিতিতে কেন সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে না সে নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন মমতার অত্যন্ত আস্থাভাজন ফিরহাদ হাকিমের মেয়ে।
এনআরএস প্রসঙ্গে বুধবার রাতে শাব্বার প্রথম ফেসবুক পোস্টের পর বৃহস্পতিবার কড়া প্রশাসক হিসাবে আন্দোলনকারীদের চরম বার্তা দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আন্দোলন প্রত্যাহার না করলে হস্টেল খালি করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার সেই নির্দেশের পর আরও সুর চড়িয়ে ‘প্রতিবাদী’ শাব্বার বার্তা, কোনও ডাক্তারি পড়ুয়াকে যদি হস্টেল থেকে বের করা দেওয়া হয়, তাহলে তিনি শাব্বার কলেজের জুনিয়রদের কাছে আশ্রয় নিতে পারেন। এই প্রেক্ষাপটে এবার শাব্বা হাকিমকে নিয়ে মুখ খুললেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: এনআরএসকাণ্ডে তৃণমূলের জন্য ‘লজ্জিত’ ববি কন্যা
শাব্বা হাকিমের ফেসবুক পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন করতেই ক্ষুব্ধ মমতা সঞ্চালককে থামিয়ে দেন। যে শাব্বাকে তিনি জন্মাতে দেখেছেন, সেই মেয়ের প্রতিবাদ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "প্লিজ আমাকে এসব নিয়ে জিজ্ঞেস কোরো না...ছোটোরা, ছোটোদের মতো কাজ করে, করতে দাও। ওদের স্বাধীনতায় কোনও হস্তক্ষেপ করি না। তাছাড়া ওরা একটু আবেগপ্রবণ।" বৃহস্পতিবার এবিপি আনন্দ নিউজ চ্যানেলের এক সাক্ষাৎকারে একথা বলেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
দলনেত্রীর মতোই এনআরএসকাণ্ডে মেয়ের ‘আত্মসমালোচনা’ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ‘ব্যক্তিস্বাধীনতা’র কথাই বলেছেন ফিরহাদ হাকিম। এ প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, "শাব্বা একজন ডাক্তার। ও ডাক্তার হিসেবে ওর বন্ধুদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমি ফেসবুক করি না। দেখিওনি ওর পোস্ট। এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই।"
আরও পড়ুন: তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়িয়ে ফের বিস্ফোরক মেয়র-কন্যা
বুধবার রাতে একটি ফেসবুক পোস্টে ডাঃ শাব্বা হাকিম লেখেন, "এ রাজ্যের সরকারি ও অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতালে আউটডোর বয়কট করেছেন ডাক্তাররা। কিন্তু জরুরি বিভাগে আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। মানবিকতার খাতিরেই আমরা অন্য পেশার মতো কাজ বন্ধ করতে পারি না। যদি বাস বা ট্যাক্সি ধর্মঘট হয়, তবে একজন ট্যাক্সি চালক-বাসচালকও আপনাকে পরিষেবা দেবেন না, সে পরিস্থিতি যাই হোক না কেন। যাঁরা বলছেন, 'অন্য রোগীদের কী দোষ?' তাঁরা দয়া করে সরকারকে জিজ্ঞেস করুন, সরকারি হাসপাতালে পুলিশ মোতায়েন থাকলেও তাঁরা কেন ডাক্তারদের নিরাপত্তা দিতে পারলেন না? দয়া করে জিজ্ঞেস করুন, যখন দুটি ট্রাকে করে গুন্ডারা এল, কেন সঙ্গে সঙ্গে বাড়তি ব্যবস্থা নেওয়া হলো না? কেন হাসপাতাল চত্বরে এখনও গুন্ডারা ঘুরে বেড়াচ্ছে? শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করার অধিকার রয়েছে আমাদের। নিরাপদে কাজ করার অধিকার রয়েছে আমাদের।" এরপরই আত্মসমালোচনার সুরে ফিরহাদ কন্যা ‘বিশেষ দ্রষ্টব্য’ সহকারে লেখেন, "একজন তৃণমূল সমর্থক হিসেবে আমাদের নেতৃত্বের নীরবতা দেখে আমি খুবই লজ্জিত।"