বাইশ বছরের ইতিহাসে অন্য এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে তৃণমূল। ভরা মাঠে জনসভা করলেন তৃণমূল নেত্রী। অথচ সেই সভায় দেখা মিলল না শুভেন্দু সহ অধিকারী পরিবারের কোনও সদস্যের। এছাড়া ছিলেন না অধিকারী ঘনিষ্ঠ তৃণমূল বিধায়ক বনশ্রী মাইতি। তবে, পূর্ব-পশ্চিম ও ঝাড়গ্রামের অন্যন্য তৃণমূল বিধায়করা এদিন মেদিনীপুরে সুপ্রিমোর সভায় হাজিরা দিয়েছেন। ফলে তৃণমূলের সঙ্গে শুভেন্দু ও অধিকারী পরিবারের দূরত্ব আরও স্পষ্ট হল।
ভোটের আগেই কী তাহলে জোড়া-ফুল ভাঙছে? এই প্রশ্নে যখন নানা জল্পনা, তখন মেদিনীপুরের মাটিতে দাঁড়িয়েই দলের 'বিদ্রোহী'দের কড়া বার্তা দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর হুঁশিয়ারি, 'যদি কেউ মনে করেন তৃণমূলকে ব্ল্যাকমেল করব, বার্গেনিং করব, ভোটের আগে তৃণমূলকে দুর্বল করে দেব। তাহলে বিজেপি ও তার বন্ধুদের বলব আগুন নিয়ে খেলবেন না। এভাবে তৃণমূলকে জব্দ করা যাবে না।'
কড়া আক্রমণ শানিয়ে বিজেপিকে 'লুঠেরা'দের দল বলেও দেগে দেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তাঁর কথায়, 'অনেকের অনেক টাকা হয়েছে। তাঁরাই সেই টাকা বাঁচাতে বিজেপি করছে। লুঠেরাদের দল। সব লুঠেরাদের আশ্রয় দিচ্ছে ওরা। তৃণমূলকে এভাবে খাবলা মারা যাবে না।'
শাসক দলের গোষ্ঠী রাজনীতিতে অধিকারী পরিবারের বিরোধী বলেই পরিচিত রামনগরের বিধায়ক অখিল গিরি। এদিন মঞ্চে তাঁর প্রসঙ্গে তুলে ধরেন মমতা। শুভেন্দুকে বার্তা দিতে স্মৃতিচারনা করে জানিয়েছেন, 'তৃণমূল কংগ্রেস যখন তৈরি করেছিলাম, কাঁথি থেকে প্রথম অখিল গিরি লড়াই করেছিল। সেদিন হয়তো আমরা জিততে পারিনি। মাত্র ২২ দিনে কিন্তু আমরা দ্বিতীয় হয়েছিলাম।'
আরও পড়ুন- ‘আইন প্রত্যাহার কর, নয়তো বিজেপি ভারত ছাড়’, কৃষকদের সমর্থনে হুঙ্কার মমতার
শুভেন্দু অধিকারী থেকে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, জটু লাহিড়ী থেকে অতীন ঘোষ- বিগত কয়েক দিনে একাধিক তৃণমূল বিধায়ক-কাউন্সিলর নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। তাঁর পক্ষে দলে থেকে কাজ করা সম্ভব নয় বলেও জানিয়েছেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। ফলে, শাসক দলের অন্দরেই নানা সমীকরণ, বিভিন্ন জল্পনা তুঙ্গে। যা ভোটের আগে তৃণমূলের কাছে বেজায় অস্বস্তির।
সেউ অস্বস্তি কাটেতে দিন কয়েক আগেই সাংগঠনিক বৈঠকে তৃণমূল নেত্রী সাফ জানিয়েছিলেন, 'থাকতে হলে থাকুন, নইলে লুটেরাদের দিকে চলে যান।' তাঁর নিশানায় ছিল বিজেপি ও দলের 'বিদ্রোহী'রা। এদিন তাঁদেরই আরও একবার সমঝে দেওয়ার চেষ্টা করলেন মমতা।
কিন্তু, ঘাস-ফুলের গোষ্ঠী কোন্দলের অবসান হবে? এখনই এই ইস্যুতে বাজি ধরতে সহমত নন অতি বড় তৃণমূল সমর্থকও।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন