Advertisment

ফিস ফ্রাই খেয়ে মুখ লুকিয়েছিলেন, এবার তৃণমূলের আমন্ত্রনেই দল সঙ্কটে

ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পর সাধারনের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েই চলেছে সিপিএম। কেরলের মুখ্য়মন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকে মমতার আমন্ত্রনেই ফের অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে সিপিএমের বঙ্গ ব্রিগেড।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
kejriwal-residence-759

চলতি বছরের জুনে দিল্লির মুখ্য়মন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বাড়িতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়, কেরলের মুখ্য়মন্ত্রী পিনারাই বিজয়নসহ কর্নাটক ও অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্য়মন্ত্রী। ফাইল ছবি- ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ফোটো

এখনকার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিচার করে কেউ ভাবতেই পারবে না, ২০১১ সালের আগে পশ্চিমবঙ্গে টানা ৩৪ বছর সিপিএম নেতৃত্বাধীন বামজোট ক্ষমতায় ছিল। বা সিপিএমের বলশালী সংগঠনের দাপটে বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খেতে বাধ্য় হত।  কালের চাকা ঘুরে এই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, যে সিপিএমকে হঠিয়ে যিনি এই রাজ্য়ের মসনদে বসেছেন, সেই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ই এখন বিজেপি-বিরোধী জোট গড়ার আমন্ত্রন জানিয়েছেন সিপিএমের পলিটব্য়ুরো সদস্য় তথা কেরালার মুখ্য়মন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকে। যদিও প্রত্যাশিতভাবেই সিপিএমের বঙ্গ ব্রিগেড এর বিরোধিতা করেছে। এবং আগামী বছর ১৯ জানুয়ারির ব্রিগেডের ওই সভায় সিপিএম মুখ্য়মন্ত্রীর থাকার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

Advertisment

আমন্ত্রণের প্রেক্ষাপট এইরকম। সম্প্রতি দিল্লির মুখ্য়মন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল যখন ধর্ণায় বসেছিলেন, তখন রাজধানীর অন্ধ্র ভবনে মমতা, বিজয়ন, কর্নাটকের মুখ্য়মন্ত্রী কুমারস্বামী এবং অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্য়মন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু একটি বৈঠক করেন। জুন মাসে তাঁর আন্দোলনকে সমর্থন জানাতে এই চার মুখ্য়মন্ত্রী কেজরিওয়ালের বাড়িতে গিয়ে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করেন। মমতার সঙ্গে বিজয়নের বৈঠক নিয়ে তখন সিপিএমের অন্দরমহলে ঝড় বয়ে যায়। বিজেপি-বিরোধীতার নামে এক মঞ্চে দাঁড়ালে আখেরে তৃণমূলের ফায়দা, সিপিএমের ক্ষতি, তা বিলক্ষণ বুঝেছে বাংলার সিপিএম। তাই যদি কোনোভাবে বিজয়ন ব্রিগেডে আসেন, তাহলে রাজ্যে সিপিএমের অস্তিত্বের সঙ্কট আরও বাড়বে।

আরও পড়ুন: বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ দলের একাংশের, ক্ষুব্ধ মমতা

কিন্তু একটা কথা স্পষ্ট। রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে রাজ্যে সিপিএমকে কোনও পাত্তাই দিতে চান না মমতা। রাজনৈতিক মহলের মতে, তা নাহলে ব্রিগেডের জনসভায় সিপিএমকে আমন্ত্রন জানাতেন না। বিজেপি বিরোধিতার কথা বলা হলেও সাধারণের কাছে বাম মুখ্য়মন্ত্রীকে তাঁদের সভায় ডাকার কৈফিয়ত যতটা দিতে হবে তৃণমূলকে, তার চেয়ে বেশি জবাবদিহি করতে হবে সিপিএমকে। সিপিএমের সেই রাজনৈতিক শক্তি নেই যে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রচারের বিরোধিতা করতে পারবে। সেটা ভালোই জানেন তৃণমূল সুপ্রিমো।

mamata4 এবছর তৃণমূলের শহীদ দিবসের মঞ্চেই মমতা ঘোষণা করে দেন ব্রিগেডের ১৯ জানুয়ারির সমাবেশের

বিজেপি বিরোধী জোট একত্রিত করতেই ব্রিগেডে সভা করছে তৃণমূল। এমনটা সাধারণভাবে মনে হতেই পারে। কিন্তু চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীকে সেই সভায় আহ্বান করার পিছনে অবশ্যই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য় রয়েছে। বিশেষ করে এবছরের পঞ্চায়েত নির্বাচনেই গায়ের জোরে সিপিএমকে প্রার্থী দিতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সিপিএমের দাবি, তাদের কর্মীদের বাড়ি ভাঙচুর, সন্ত্রাস চলছে রাজ্য় জুড়ে। তার ওপর বিজয়নকে এই আমন্ত্রনে স্বভাবতই ফাঁপরে পড়েছেন রাজ্য়ের সিপিএম নেতৃত্ব।

আরও পড়ুন: বিজেপিকে বাংলায় ঢুকতে না দেওয়ার জন্য সিপিএমের সঙ্গে কি জোট বাঁধছেন মমতা?

মমতা যে এর আগে সিপিএম নেতৃত্বকে বিপাকে ফেলেন নি এমন নয়। তৃণমূল প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর বিমান বসুরা নবান্নে দেখা করতে গিয়েছিলেন নতুন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। তখন ফিশ ফ্রাই খাইয়ে তৃণমূল নেত্রী তাঁদের বলেছিলেন, "আপনারা তো দল ধরে রাখতে পারছেন না। সবাই তো বিজেপিতে চলে যাচ্ছে।" সেদিন বিমানবাবুদের কাছে এর কোনও জবাব ছিল না। বাস্তবিকই সিপিমের মাঝের ও নীচুতলার নেতা-কর্মীদের আটকে রাখা যাচ্ছে না। তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে তাঁদের একাংশ পদ্মশিবিরে আশ্রয় নিচ্ছেন। তাঁদের বদ্ধমূল ধারনা, কোনভাবেই সিপিএমের পতাকার তলায় থেকে তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই করা সম্ভব নয়। সিপিএমের অপর অংশ পরিষ্কার শাসকদলে ভিড়ে গিয়েছেন।

বঙ্গ রাজনীতিতে তৃণমূল কংগ্রেসের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী কে? এই প্রশ্নের সার্বিক কোনও উত্তর নেই। জবাব খাতায়-কলমে একরকম। আর বাস্তবে অন্য়রকম। বিধানসভায় বিরোধী দল কংগ্রেস। যদিও দূরবীন দিয়েও কংগ্রেসকে খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। বিজেপির বিধানসভায় আসন সংখ্যা মাত্র তিন। সিপিএমের আন্দোলনের ঝাঁঝ উবে গিয়েছে। তার ওপর একবার দিল্লিতে, একবার কর্নাটকে তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে একমঞ্চে হাজির থেকেছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তাহলে এই রাজ্য়ে কোনও সভায় তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে এক মঞ্চে সিপিএমের মুখ্য়মন্ত্রী হাজির হলে কী বার্তা যাবে দলের নীচু তলার নেতা-কর্মীদের কাছে?

tmc Mamata Banerjee Cpm Pinarayi Vijayan
Advertisment