মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাড়ির সামনে ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি তুলে ‘হামলা’কাণ্ডে এখনও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি বলে দাবি করল পুলিশ। তবে পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৬ ও ৩৪১ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। অন্যদিকে, এ ঘটনায় ভাটপাড়া থেকে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি করলেন ব্যারাকপুর থেকে সদ্য জয়ী সাংসদ তথা ভাটপাড়ার প্রাক্তন বিধায়ক অর্জুন সিং। গ্রেফতারির প্রতিবাদে শনিবার জগদ্দল থানা ঘেরাওয়ের ডাক দিলেন অর্জুন। উল্লেখ্য, গতকাল ভাটপাড়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লক্ষ্য করে ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি দেন কয়েকজন। এ ঘটনায় মেজাজ হারিয়ে কড়া হুমকি দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গতকালই ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে মমতা বলেছিলেন, ‘‘নাম নিয়ে নাও তো, নাকা চেকিং হবে বাড়ি বাড়ি’’। গাড়িতে উঠতে উঠতে মমতা এও বলেছিলেন, ‘‘আমরা কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করব’’।
কাল ঠিক কী ঘটেছিল? বৃহস্পতিবার নৈহাটিতে ঘরছাড়াদের ঘরে ফেরাতে অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচি করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গতকাল নৈহাটি, ভাটপাড়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাড়ির সামনে কয়েকজনকে ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি দিতে শোনা যায়। ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি শুনেই মেজাজ হারান মমতা। গাড়ি থেকে নেমে তাঁদের ধাওয়া করতে যান। মমতা বলেন, ‘‘জুটমিলের সামনে দেখলাম যাদের খাওয়াই, পরাই, তারাই বিজেপির টাকা নিয়ে আমার গাড়ির সামনে হামলা করতে এসেছিল। আমি তাদের বলে দিতে চাই, আদিম হিংস্র মানবিকতার যদি আমি কেউ হই স্বজনহারানো শ্মশানে তোদের চিতা আমি তুলবই”। মমতাকে এও বলতে শোনা যায়, ‘‘গুন্ডামি-মস্তানি হবে না, বেঁচে আছো আমাদের জন্য। কোনও দাদা মস্তান বাঁচাতে পারবে না। খাচ্ছদাচ্ছ জমিদারি করছো? চামড়া গুটিয়ে ছেড়ে দেবো।” এখানেই থেমে থাকেন নি তিনি। গাড়ি থেকে নেমে হাঁটা শুরু করেন তিনি। স্লোগানকারীদের লক্ষ্য করে বলেন, “যারা এটা করছে তাঁদের নাম নাও, বাড়ির ঠিকানা নাও, নাকা তল্লাশি হবে। এতো বড় সাহস? গাড়ির মধ্যে হামলা!”
আরও পড়ুন: ‘স্বজন হারানো শ্মশানে চিতা তোলা’র হুমকি মমতার
এ প্রসঙ্গে ক্ষিপ্ত মমতা বলেন, “বাংলাকে গুজরাত বানাতে দেবো না।” দ্বিতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী গাড়িতে উঠতেই আবার স্লোগান ভেসে আসে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা জনতাদের মধ্য থেকে। রীতিমতো তাঁদের দিকে তেড়ে গিয়ে হুঙ্কার দিয়ে বলেন, “বুকের পাটা থাকলে সামনে আয়।” উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ”ভদ্রতার একটা শেষ আছে। আমার গাড়ি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। সাহস কত বিজেপির ফেট্টি বেঁধে আমাকে ‘গালাগাল’ দিচ্ছে। এরা বহিরাগত, এদের আমরা যত্ন করে রেখে দিয়েছিলাম। আমরা এদের বিরুদ্ধে এবার কড়া পদক্ষেপ করব।”
নৈহাটিতে মমতা বলেন, ‘‘ওরা আরএসএস করলে, আমরা জয় হিন্দ বাহিনী গড়ব। ব্লকে ব্লকে জয়হিন্দ বাহিনী তৈরি করুন। ব্যারাকপুর থেকেই শুরু করুন। আর বঙ্গজননী কমিটি গঠন করুন। ৫০০ ব্লকে এই বাহিনী কাজ করবে। পুরুষরা সাদা পাজামা-পাঞ্জাবী পরবে এবং গঙ্গা যমুনা পাড়ের শাড়ি পরবেন মহিলারা’’। এই বাহিনী-কমিটির হাতে ‘শান্তিনিকেতনী লাঠি’ তুলে দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন মমতা।