রাজ্যকে না জানিয়েই পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে, মঙ্গলবার কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের পর বুধবার নবান্নে এই একই অভিযোগ জানালেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আমফান-পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে নবান্নে আয়োজিত প্রশাসনিক বৈঠকে একথা বলেছেন মমতা। তাঁর বক্তব্য, "রাজ্যকে কনসাল্ট না করে রাজনৈতিক মর্জি মতো পরিযায়ীদের ফেরত পাঠাচ্ছেন। দুর্যোগ সামলাব, মানুষের দুর্ভোগ সামলাব, না আপনাদের চাপিয়ে দেওয়া রাজনীতি সামলাব? একদিকে তোমরা লকডাউন করবে, আর একদিকে রেল রেলের মতো চলবে?"
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্যের তরফে নির্দিষ্ট দিনের হিসেবে ২৫০টি ট্রেনের একটি তালিকা পেশ করা হয়েছিল, যাতে ধাপে ধাপে পরিযায়ীদের রাজ্যে ফেরত আনা যায়। "হঠাৎ কাল সকালবেলা খবর পেলাম, মুম্বই থেকে ৩৬টা ট্রেন চালিয়ে দিচ্ছে, আমাদের জিজ্ঞেস না করেই। মহারাষ্ট্রর সঙ্গে কথা বলে জানলাম, তাদের নাকি জানানো হয়েছে রাত দুটোর সময়। অথচ আমরা যে শিডিউল বানিয়ে দিয়েছিলাম, সেই অনুযায়ী চললে কোনও গোলমাল হতো না। এদিকে ট্রেনের ভাড়াও আমরা দিচ্ছি।"
মমতার আরও বক্তব্য, "একটা রাজ্য বিপদে পড়েছে বলে সব চাপিয়ে দিতে হবে? ইতিমধ্যেই ৫-৬ লক্ষ মানুষ এসে পৌঁছেছেন, এবং একসঙ্গে যাতে বেশি মানুষ এসে না পৌঁছন, সে জন্যই আমরা ট্রেনের প্ল্যানিং করে দিয়েছিলাম। একসঙ্গে এত লোকের আমরা স্ক্রিনিং করব কী করে? সংক্রমণ বাড়লে কি কেন্দ্র দায়িত্ব নেবে? আমি প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এখানে হস্তক্ষেপ করতে অনুরোধ করব।"
আরও পড়ুন: মহারাষ্ট্র থেকে বাড়ি ফেরার পথে বাসে মৃত্য়ু বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকের
পাশাপাশি তিনি যোগ করেন, "অমিত শাহকে বলেছিলাম এত টিম পাঠাচ্ছেন, পাঠান। আপনার যদি মনে হয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার করতে পারছে না, আপনি নিজে নিন না। আপনি নিজে করোনা সামলান। আমার কোনও আপত্তি নেই। এখানে অমিত শাহ উপস্থিত নেই। কিন্তু আমি ওঁকে ধন্যবাদ জানাই। উনি বলেন, 'গভর্মেন্ট হাম ক্যায়সে তোড় সাকতা হ্যায়'?"
মুখ্যমন্ত্রী জানান, মহারাষ্ট্র, চেন্নাই, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, এবং দিল্লি - এই হটস্পট এলাকা থেকে যে সব পরিযায়ীরা ফেরত আসছেন, তাঁদের ১৪ দিনের কোয়ারান্টিনের ব্যবস্থা করবে রাজ্য, এবং এর তদারকির জন্য একটি টাস্ক ফোর্সও গঠিত হবে। বাকি এলাকা থেকে যাঁরা আসবেন, তাঁদের করোনার উপসর্গ না থাকলে হোম কোয়ারান্টিনেই থাবেন তাঁরা। তিনি এও জানান যে বাইরে থেকে যাঁরা আসছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই "পজিটিভ হয়েই আসছেন", তবে "তাঁরা আমাদের রাজ্যের অধিবাসী, কাজেই আমি চাইব তাঁরা সুস্থ থাকুন"।
কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ফের অভিযোগ করে মমতা বলেন, "আপনারা চান, বাংলা রাজস্থান, দিল্লি, গুজরাট হয়ে যাক। এভাবে তো কন্টেনমেন্ট সম্ভব নয়, একটা ট্রেনে গাদাগাদি করে লোক আসছে, কেন সোশ্যাল ডিস্ট্যানসিং বজায় রেখে পাঠাচ্ছেন না?"
অন্যদিকে মঙ্গলবার কেরালার মুখ্যমন্ত্রীও বলেন, আগে থেকে না জানিয়ে কেরালায় ট্রেন পাঠিয়ে দিচ্ছে রেল, যার ফলে ব্যাহত হচ্ছে রাজ্যের করোনা মোকাবিলার লড়াই। তিনি এও জানান যে বিষয়টির দিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
গত সপ্তাহে রাজ্যকে না জানিয়ে মুম্বই থেকে কেরালার কান্নুর পর্যন্ত ট্রেন পাঠিয়ে দেওয়ার পর রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলকে চিঠি দেন মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন এই বলে যে, এই ধরনের ট্রেনের আগাম খবর থাকা উচিত রাজ্যের কাছে। "ওঁকে বলা হয়েছিল যে এই পদক্ষেপের ফলে রাজ্যের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়বে। কিন্ত তার পরেও মুম্বই থেকে কেরালায় ট্রেন পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় রেল। সুতরাং এবার প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে," বলেন বিজয়ন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন