মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা বৈঠক এড়ালেন সব্যসাচী দত্ত ও শোভন চট্টোপাধ্যায়। ২১ জুলাইয়ের আগে তৃণমূল ভবনে দলের বিধায়কদের বৈঠকে গেলেন না বিধাননগরের বর্তমান ও কলকাতার প্রাক্তন মেয়র। উল্লেখ্য, সম্প্রতি সব্যসাচী-তৃণমূল সংঘাত চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিধাননগরের মেয়রের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছে তাঁর দল তৃণমূলই। এই প্রেক্ষাপটে তৃণমূলনেত্রীর বৈঠকে সব্যসাচীর গরহাজির হওয়া অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। এদিকে,আজই দুপুরে সব্যসাচীর বাড়িতে যান মুকুল রায়। এই প্রেক্ষিতে মমতার বৈঠক এড়ানোয় সব্যসাচীর বিজেপি যোগের জল্পনা যেমন বাড়ল, তেমনই তাঁর সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক ছেদের সম্ভাবনা আরও জোরালো হল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। অন্যদিকে, বেশ কিছুদিন ধরেই তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়েছেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা প্রাক্তন দমকলমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়। এদিন মমতার বৈঠকে না থেকে সেই দুরত্ব শোভন আরও প্রসারিত করল বলেই মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের।
বৃহস্পতিবারের বৈঠকে বড় চমক প্রশান্ত কিশোর। তৃণমূল ভবনে এদিনের বৈঠকে যোগ দেন নির্বাচনী স্ট্র্যাটেজিস্ট প্রশান্ত কিশোর। দলের বিধায়কদের উদ্দেশে পিকে বিশেষ বার্তাও দিতে পারেন বলে জানা যাচ্ছে।
তৃনমূল ভবনে বৈঠকে ঢুকছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়#TMC #MamataBanerjee #Kolkata #WestBengal #trinamool #mamatabanarjee pic.twitter.com/8wiiWpQ0fE
— IE Bangla (@ieBangla) July 11, 2019
আরও পড়ুন: যাঁরা কাটমানি নিয়েছেন এবং দিয়েছেন, দু’জনেই দোষী: পার্থ
উল্লেখ্য, লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় ‘ধাক্কা’ খাওয়ার পরই ঘুরে দাঁড়াতে উঠেপড়ে লেগেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একদিকে বঙ্গে বিজেপির উত্থান, অন্যদিকে, দলের গোষ্ঠীকোন্দলের পাশাপাশি মুকুল রায়দের দলবদলের কৌশল রীতিমতো চাপ বাড়াচ্ছে ঘাসফুল শিবিরের। সে কারণেই দলের পরামর্শদাতা হিসেবে একদা মোদী-শাহদের নির্বাচনী স্ট্র্যাটেজিস্ট প্রশান্ত কিশোরের দ্বারস্থ হয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। ইতিমধ্যেই নবান্নে কয়েকবার মমতার সঙ্গে পিকের বৈঠক হয়েছে। এমনকী, কয়েকদিন আগে পশ্চিম মেদিনীপুরে তৃণমূলের বৈঠকেও প্রশান্ত উপস্থিত ছিলেন বলে খবর মিলেছিল। তাই ২১ জুলাইয়ের আগে দলের বিধায়কদের বৈঠকে প্রশান্ত কিশোর থাকলে, তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হবে বলেই মত রাজনীতির কারবারিদের একাংশের।
আরও পড়ুন: তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করলেন প্রশান্ত কিশোর
অন্যদিকে, দলের জনপ্রতিনিধিদের কাটমানি ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সুপ্রিমোর এই বক্তব্যের পরই তৃণমূলে আলোড়ন পড়ে যায়। রাজ্যজুড়ে কাটমানি বিক্ষোভ চলছে। প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শ মেনেই কাটমানি ফেরানোর কথা মমতা বলেছিলেন বলে দাবি করেছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
প্রসঙ্গত, উনিশের নির্বাচনে ‘ধাক্কা’ খাওয়ার পর কালীঘাটে সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু দল শোনেনি। দলের প্রধান হিসেবে কাজ চালিয়ে যাব। কারণ, দলটা আমিই তৈরি করেছিলাম’’। ভোটে দলের বিপর্যয় সামাল দিতে মুখ্যমন্ত্রীর থেকে তৃণমূলনেত্রী হিসেবেই যে এবার তিনি বেশি জোর দেবেন, সে বার্তাও স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন মমতা। সেইমতোই ২৩ মে-র পর থেকে দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা। বিধায়ক, সাংসদ থেকে শুরু করে জেলার নেতাদের সঙ্গেও দফায় দফায় বৈঠকে বসে ভোটে হারের চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন তৃণমূলনেত্রী। সেই ধারা বজায় রেখেই ২১ জুলাইয়ের আগে বিধায়কদের কী বার্তা দেন মমতা, সেদিকেই চোখ থাকবে বঙ্গ রাজনীতির।