‘এত ছোটো বাড়িতে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী!’ কালীপুজোয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়িতে পা রেখে এমন বিস্ময়ই প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। ‘এ বাড়িতে বাজপেয়ীজি, আডবানিজিও এসেছেন’, গল্পের ফাঁকে একথাও অতিথি রাজ্যপালকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। উল্লেখ্য, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আডবানিদের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক সর্বজনবিদিত। বাজপেয়ী জমানায় মমতার দলের সঙ্গে বিজেপির ঘনিষ্ঠতাও চোখে পড়ার মতো ছিল। এমনকি, নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহর নেতৃত্বাধীন বিজেপিকে বিঁধতে গত লোকসভার প্রচারে মমতার মুখে বেশ কয়েকবরাই বাজপেয়ী-আডবানিদের গুণকীর্তন শোনা গিয়েছে। মোদী-শাহর বিজেপির সঙ্গে বাজপেয়ী-আডবানির জমানার তুলনাও টেনেছেন মমতা। সেই প্রেক্ষিতে বিজেপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যে-মার্গ দর্শকের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্কের কথা একদা বিজেপি মন্ত্রী তথা বর্তমান রাজ্যপালকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে মমতা বিশেষ বার্তা দিলেন বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ। অন্যদিকে, রাজ্যের একাধিক প্রশাসনিক ইস্যুতে রাজ্যপাল যেভাবে সোচ্চার হচ্ছেন, তাতে তিনি বিজেপির হয়েই কাজ করছেন বলে অভিযোগ তুলেছে শাসক শিবিরের একাংশ। সেই প্রেক্ষিতে বাজপেয়ী-আডবানিদের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্কের কথা যেভাবে রাজ্যপালকে স্মরণ করালেন মুখ্যমন্ত্রী, তা রীতিমতো তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের।
উল্লেথ্য, যাদবপুরকাণ্ডে বাবুল সুপ্রিয়কে নিগ্রহের ঘটনার পর থেকেই একাধিক ইস্যুতে মমতা সরকারের সঙ্গে রাজ্যপালের সংঘাত বেধেছে। সেই সংঘাতের আঁচে জল ঢেলে রবিবার যেভাবে কালীবন্দনায় মাতলেন মুখ্যমন্ত্রী-রাজ্যপাল। তা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। এদিন একেবারে গৃহিনীর বেশে দেখা গিয়েছিল মমতাকে। রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাতের ফাঁকেই নাড়ু পরিবেশন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে শুধু মমতাই নয়। মমতার মন্ত্রিসভার হেভিওয়েট সদস্য তথা তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে আলিঙ্গন করে রাজ্যপাল বলেছেন, ‘‘আপনি আমার বন্ধু’’। এমনকি, পার্থর দক্ষতা নিয়েও মমতার কাছে ভূয়সী প্রশংসা করতে দেখা গিয়েছে রাজ্যপালকে। অন্যদিকে, মমতার ভাইপো তথা তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যে ‘বডি ল্যাঙ্গোয়েজে’ কথা বলতে দেখা গিয়েছে ধনখড়কে তাও নজর কাড়ার মতো।
আরও পড়ুন: পার্থকে বিজয়ার প্রণাম করে বৈঠকে বৈশাখী, ‘অনেক কথা হয়েছে, সব কথা বলা যায় না’
প্রসঙ্গত, ভাইফোঁটায় ‘ভাই-বোনের জন্য বিশেষ দিনের’ কথা মাথায় রেখে মমতার বাড়িতে যেতে চেয়েছিলেন রাজ্যপাল। কিন্তু ধনখড়কে কালীপুজোয় তাঁর বাড়িতে আমন্ত্রণ জানান মুখ্যমন্ত্রী। মমতার আমন্ত্রণে ‘অভিভূত’ রাজ্যপাল জানিয়েছিলেন, ‘‘তিনি কালীপুজোর দিন কালীঘাটে মমতার বাড়িতে যাবেন’’। রবিবার সন্ধ্যায় বাড়ির কালীপুজোয় যখন ‘চূড়ান্ত ব্যস্ত’ মমতা, সে সময়ই স্ত্রীর সঙ্গে সেখানে যান রাজ্যপাল। প্রায় ২ ঘণ্টা ছিলেন সেখানে তিনি। মমতার সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথাও বলতে দেখা গিয়েছে রাজ্যপালকে। মমতার অতিথি অ্যাপায়নে তিনি যে মুগ্ধ, সে কথাও হাসিমুখে জানিয়েছেন ধনকড়।