কবিতায় প্রতিবাদের ধারা অব্য়াহত মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের। এর আগে এনআরসির প্রতিবাদে কলম ধরেছিলেন কবি মমতা। এবার তাঁর প্রতিবাদের কবিতার নাম “নাম নেই’’। মঙ্গলবার তাঁর ফেসবুক পেজে এই কবিতা পোষ্ট করেছেন মুখ্য়মন্ত্রী। শেষ মুহূর্তে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় যেতে পারেননি চিনে, তাও উল্লেখ করেছেন এই কবিতায়। আমেরিকায় শিকাগোতে স্বামী বিবেকানন্দকে স্মরণে বাধা, দিল্লিতে সেন্ট স্টিফেন্স কলেজে আমন্ত্রন বাতিল, সবেরই প্রতিবাদে গর্জে উঠেছেন তাঁর লেখা “নাম নেই’’ কবিতায়। সমালোচনা করেছেন ডিজিটাল, এটিএম বা আধারকার্ড নিয়েও। আরএসএসকে কটাক্ষ করেছেন রাষ্ট্রীয় সেবা সংঘ বলে। ইংরেজিতে অনুবাদ করে এই কবিতার নাম “আনটাচেবল’’।
মুখ্যমন্ত্রীর লেখা কবিতা।
গত সোমবার আবার শব্দের পিছনে শব্দ জুড়ে কবিতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিবাদ। কবিতার নাম ‘পরিচয়’। এবার কবিতার সারমর্ম আসামের জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনস বা NRC) তালিকা। অর্থাৎ নিশানায় কেন্দ্র। প্রতিবাদের অস্ত্র হিসাবে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম। কবিতাটি প্রথমে সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলায় ও পরে ইংরেজি, হিন্দি ভাষায় অনুবাদ করে প্রকাশ করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
কবিতার প্রথম স্তবকেই মৌলিক অধিকারের টানাপোড়েন নিয়ে সরব হন মমতা বন্দোপাধ্যায়। পদবী, পিতৃপরিচয়, ভাষা, ধর্ম, পছন্দের খাবার, শিক্ষার মাপকাঠি নিয়ে প্রশ্ন তুলে কটাক্ষ করেছেন এদেশের শাসক দলকে। ‘মন কি বাত’ না শুনলে বিরোধী পক্ষ গণ্য হবেন গেরুয়া দলের, এই নিয়েও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। তবে এতেই কলম থেমে যায় নি। কটাক্ষের নিশানায় রেখেছেন আধার নম্বর, পে-বি-টিম। কবি মমতা বলতে চেয়েছেন, আপনি উগ্রপন্থী কিনা তার বিচার হবে কবিতায় উল্লিখিত একগুচ্ছ প্রশ্নের উত্তরে।
সম্প্রতি ধর্মের প্রভাব নিয়ে তেতে রয়েছে গেরুয়া শাসক দলের ভারত। দলিত, সংখ্যালঘু, রাম ভক্ত নন এমন দেশবাসীরা বারংবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিজেপি সরকারের জন্য, সে বিষয়েও তীব্র বিরোধীতা করে কলম ধরেছেন মমতা। বর্তমান শাসক দলের শাসন কতটা ঘৃন্য তা নিয়েও প্রশ্ন তুলে কড়া নিন্দা করেছেন কবি।
তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার বলেন, "আমাদের দলের প্রধান একজন কবিও। এমন একটি কবিতা, প্রতিবাদ করার সবচেয়ে ভালো উপায়, যা শাসককে অত্যাচারির রূপ দিতে সক্ষম হয়েছে। হিটলারের শাসনকালে এই ধরনের স্বৈরাচারী শাসন দেখা গিয়েছিল। ভারতে তারই পুনরাবৃত্তি ঘটছে। ৩০, ৫০ বছর ধরে বসবাসরত মানুষকে বলা হচ্ছে তাঁরা এই ভারতের নাগরিক নন। আমরা এই কবিতার মাধ্যমেই পার্লামেন্টে প্রতিবাদ জানাব।”
এদিকে জবাবে বিজেপির জাতীয় সচিব রাহুল সিংহের অভিযোগ "২০০৫ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লোকসভায় অনুপ্রবেশের বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন। কেন তখন এ বিষয়ে কবিতা লিখতে পারেন নি তিনি?"
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে মমতা বন্দোপাধ্যায় নোট বদলি নিয়ে কবিতা লিখেছিলেন, তার আগে সিঙ্গুরের ভূমি অধিগ্রহণের বিরোধিতা ও নন্দীগ্রাম আন্দোলন নিয়েও বই রচনা করেছিলেন তিনি।