দলের ছাত্র সংগঠনের প্রতিষ্ঠা দিবসে বিজেপিকে বিঁধবেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। এটা তো স্বাভাবিক বিষয়। তবে ভাষণের শুরুতেই অনেকটা সময় ধরে নিজের ছাত্র রাজনীতির স্মৃতি আওড়ালেন। প্রাক্তন মুখ্য়মন্ত্রী সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়, প্রাক্তন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সি এবং প্রবীণ নেতা ও পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্য়ায়ের সঙ্গে তাঁর ছাত্র জীবনের রাজনৈতিক অনুভূতির কথা নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরলেন। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্য়ায় বা বিধায়ক অশোক দেবদের তত্ত্বাবধানে ছাত্র রাজনীতি করতেন সর্বসমক্ষে তারও মান্য়তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন মেয়ো রোডের জনসভায় অনেকটাই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন তৃণমূল সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভাষণ শুরু করেই তিনি বলেন, “আমরা যখন কলেজে ছাত্র পরিষদ করতাম, তখন অশোকদা নেতৃত্ব দিতেন আমাদের। পার্থ চট্টোপাধ্যায় আমাদের সিনিয়র লিডার ছিলেন।’’ ছাত্র রাজনীতি করে দলে উঠে আসা অনেকেরই নাম নিয়েছেন তিনি।
এদিন তাঁর ছাত্র রাজনীতির বেশ কিছু স্মৃতির কথা তুলে ধরেন মমতা। তিনি বলেন, “একবার যদুবাবুর বাজারে সভা করছি। তখন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়। আমি যদু বাবুর বাজারে একটা টুলের ওপর দাঁড়িয়ে ভাষণ দিচ্ছিলাম। আমরা তাঁকে মানুদা বলতাম। তিনি গাড়ি করে যাচ্ছিলেন। তিনি হঠাৎ গাড়িটা থামিয়ে দিলেন। গাড়ি থামিয়ে আমার কাছে এলেন। তখন আমি কলেজ পড়ুয়া। জোরকদমে ছাত্র রাজনীতি করি। আমাকে এসে বললেন, তোমার নাম খুব শুনেছি। তুমি খুব দুষ্টুমি করো কলেজে। কিন্তু আজ তোমার ভাষণ শুনে দাঁড়িয়ে গেলাম। তাই আলাপ করতে এলাম।’’ আবেগতাড়িত হয়ে মমতা বলেন, “আমার ভীষণ মনে পড়ে এই কথাগুলো। তার কারণ, এগুলো আমাদের কাজের অনুপ্রেরণা যোগায়।’’
এরপর তারাতলার একটি সভার কথা বলেন তিনি। তাঁর কথায়, “ছাত্র রাজনীতির সময়ে, আমার বেশ মনে আছে সন্ধ্যাবেলায় তারাতলায় মিষ্টির দোকানের সামনে একটি মিটিং করছিলাম। মিটিং-এ ভাষণ দেওয়ার পর এক ভদ্রলোক বললেন তোমার ভাষণ আমার বেশ ভাল লেগেছে। তুমি এই সন্দেশ দুটো খাও। আমার খুব ভাল লেগেছিল। সেই দিনের কথা এখন আমার কাছে স্পষ্ট মনে রয়েছে।’’
এবার মমতার বক্তব্যে উঠে আসে প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সির কথা। যিনি প্রিয়দা নামেই রাজনীতিতে অধিক পরিচিত। মমতার স্মৃতিতে, “প্রিয়দা তখন সর্বভারতীয় যুব কংগ্রেস সভাপতি। দলের দক্ষিণ কলকাতা জেলার মিটিং চলছে। ওই মিটিংয়ে তিনি বলে উঠলেন, তোদের মধ্যে মমতা কে আছে রে? সবাই আমাকে দেখিয়ে দিল। আমাকে প্রিয়দা বললেন, তুমি খুব ভাল করছ। কাজ করে যাও।’’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, কাজ করতে গেলে লবির প্রয়োজন নেই। তুমি তোমার কাজের জন্য কাউকে বলবে না আমাকে করে দিন। তুমি কাজ করে যাও। ভাল কাজ করলে নিজেই ডেকে নেবে। চিনে নেবে। জেনে নেবে। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের প্রশংসা পেয়েছিলেন এই কাজের জন্য। মমতা বলেন, “আমাদের রাজনীতির সময়ে এত নেতাদের বাড়ি যেতাম না। সুব্রতদা তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আমাকে বাড়িতে ডেকে পাঠালেন। তিনি বললেন, ভাল কাজ করছিস, কর।’’
এমনকী এদিন যাদবপুর সংসদীয় কেন্দ্রের প্রার্থী কিভাবে হয়েছিলেন তাও বলেন তৃণমূলনেত্রী। তিনি জানান, যাদবপুরে কেউ লড়াই করতে চাইছিল না। আমি বলিনি দাঁড়াব। দল জিজ্ঞেস করেছিল তুমি লড়বে যাদবপুরে? আমি বলেছিলাম লড়ব। এমনিতে দাঁড়ানোর খুব একটা ইচ্ছা ছিল না। তবে লড়াই তো করতেই হবে। এসব বলে তাঁর একটা উপদেশ ছাত্র-ছাত্রীদের, স্ট্রাগলের দাম টাকা পয়সা দিয়ে হয় না। যারা স্ট্রাগল করে তারা ধাক্কা খায় না।