সংগঠনের রেশ কি আদৌ নেত্রীর হাতে রয়েছে। জোড়া-ফুল শিবিরের অন্দরেই এই নিয়ে জোর চর্চা। তারই মাঝে শাসক দলের নেতা-কর্মীদের কড়া বার্তা দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। জানিয়ে দিলেন, 'আমি বলছি সারা বাংলায় আমিই পর্যবেক্ষক।'
সংগঠনে পরিদর্শকের পদ আগেই লোপ পেয়েছে তৃণমূলে। দলের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত ঘিরের নানা গুঞ্জনও শোনা যায়। ভোটের আগে তাই বিতর্ক থামাতে তৎপর তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন বাঁকুড়ার শকুনপাহাড়ীর মাঠে মমতা বলেন, 'অনেকেই বলছেন, এই জেলায় পর্যবেক্ষক কে, ওই জেলায় পর্যবেক্ষক কে। আমি বলছি সারা বাংলায় আমিই পর্যবেক্ষক। কোথায় কী হচ্ছে, কে কোথায় যাচ্ছে, কে কার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে, আমি সব জানি। সব বুঝেও তাঁদের ছেড়ে রেখেছি।'
কেন এই ছাড়? তারও ব্যাখ্যা এদিন জনসভায় দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছেন, 'এত দিন সরকারের কাজে বেশি মন দিয়ে দলকে একটু ঢিলে দিয়েছিলাম। কিন্তু এ বার পুরো দলটাই আমি দেখব। এই বাঁকুড়ার মাটি থেকেই সেই কাজ শুরু করলাম আমি।' এরপরই দলনেত্রী বলেন, 'রাতের অন্ধকারে কেউ কেউ কারুর বাড়ি যাচ্ছে, ফোনে কথা বলছে। এরা ধান্দাবাজ। কর্মীদের বলছি এদের উপর নজরর রাখুন।'
ভোটের আগেই ঘাস-ফুল শিবিরে ভাঙন ধরবে। তৃণমূল ছেড়ে বিধায়ক, সাংসদরা যোগ দেবেন বিজেপিতে। দিলীপ ঘোষ থেকে অর্জুন সিং- একাধিকবার এই দাবি করেছেন। কোচবিহার উত্তরের তৃণমূল বিধায়ক মিহির ঘোষের মন্তব্য সেই জল্পনা উস্কে দিয়েছে। জোর চর্চায় পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর রাজনৈতিক অবস্থানও। দলের অপেক্ষাকৃত ছোট নেতাদের আচরণ ঘিরেও নানা প্রশ্ন রয়েছে। বিভ্রান্তি বাড়ছে কর্মীদের মধ্যে। এই পরিস্থিতিতে 'আমিই অবজারভার' বলে ঘোষণা করে সব বিতর্কের অবসানের চেষ্টা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দল বদল প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেছেন, 'কেউ কেউ ভাবছে বাইচান্স যদি ওরা ক্ষমতায় চলে আসে। আরে চান্সই নেই তো বাই চান্স! বাঁকুড়ার একটি একটি করে আসন বুঝে নেব।' এদিন বাম ও বিজেপিকে তোপ দেগে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'ওরা বলছে হয় ঘরে থাকো-নয় জেলে থাকো। আমি বলছি পারলে আমাকে জেলে ভরো। চ্যালেঞ্জ করছি জেল থেকে আমি তৃণমূলকে জিতিয়ে দিব। একটিতেও বিজেপি, সিপিএম থাকবে না।'
রেশন দুর্নীতি থেকে আমফানের সময় ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের একাধিক তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধান, গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য সহ স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে। যা নিয়ে রাজ্যজুড়ে মানুষের অসন্তোষ রয়েছে। ভোটে যা প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা নেত্রীর। এই পরিস্থিতিতে বুধবার বাঁকুড়ায় তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, 'আমার দলের কেউ ভুল করলে সংশোধন করা হবে। দলের কোনও ব্যক্তির উপর রাগ করে তৃণমূলকে ভুল বুঝবেন না। কারুর বিরুদ্ধে রিপোর্ট থাকলে দল ব্যবস্থা নেবে।'
তৃণমূলকে 'ত্যাগী' বলে ঘোষণা করে সিপিএম ও বিজেপিকে যথাক্রমে 'লোভী' ও 'ভোগী' বলে দেগে দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন