বিজেপি বিভাজনের রাজনীতি করছে বলে ফের একবার সরব হলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার দক্ষিণ ২৪ পরগণার মন্দিরবাজারে সরকারি সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "বিজেপির কিছু নেতা মানুষকে উল্টোপাল্টা বোঝাচ্ছেন। হিন্দু-মুসলিম বিভাজন করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। ধর্মে ধর্মে বিবাদ লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।" তাঁর বক্তব্য, "বিজেপি তো সেদিন এসেছে। এই কালীঘাটের মন্দির যখন তৈরি হয়েছিল তখন বিজেপি জন্মেছিল, না দক্ষিণেশ্বর মন্দির যখন তৈরি হয়েছিল তখন তারা জন্মগ্রহণ করেছিল? আমরা দূর্গাপূজা কবে থেকে করি? রাস মেলা কবে থেকে করি? টোটালটাই মিথ্যা কথা বলে মানুষকে মানুষের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দেওয়া। বাংলায় এসব হয় না। এই বাংলা রবীন্দ্র নজরুলের জায়গায়। দূর্গাপুজা ঈদ মোবারক বড়দিনের জায়গা। মনে রাখবেন, বাংলায় ভেদাভেদ হয় না।"
তিনদিনের জেলা সফরে দক্ষিণ ২৪ পরগণায় এসেছেন মমতা। বুধবার দুপুর একটা নাগাদ হেলিকপ্টারে করে মন্দিরবাজারে পৌঁছে সোজা মঞ্চে উঠে জনতার উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান মুখ্যমন্ত্রী। এরপর জেলা শাসক ওয়াই রত্নাকর রাও স্বাগত ভাষন দেওয়ার পর মুুখ্যমন্ত্রী একে একে উপভোক্তাদের হাতে নানান সরকারি প্রকল্পের সুবিধা তুলে দেন, এবং বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।
আরও পড়ুন: এ রথ রামের নয়, নাথুরামের: কানহাইয়া কুমার
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বক্তব্যের শুরুতেই সাম্প্রতিক জয়নগর হত্যাকান্ড নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন। তিন নিহত ব্যক্তির পরিবারের হাতে রাজ্য সরকারের চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দিয়ে তিনি বলেন, "আমি দুঃখিত, কয়েকদিন আগে এখানে একটা দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে। দুর্ঘটনা নয়, জেনেশুনে ঘটানো। যেখানে তিন জন খুন হয়েছিলেন। যারা এই কাজ করেছে তাদের আমি তীব্র ভাষায় ধিক্কার জানাই।"
এদিন তিনি সুন্দরবনের কন্যাশ্রী মেয়েদের বিশ্ব জয় করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি বলেন, "সুন্দরবনের মেয়েদের গর্ব করে, ভালো করে পড়াশোনা করতে হবে। ডাক্তার, মাষ্টার, আইপিএস, আইএএস, অধ্যাপক হতে হবে। সারা ভারতবর্ষকে পথ দেখাতে হবে। সুন্দরবনে জন্মগ্রহণ করে বলবেন আমরা সব চেয়ে সুন্দরী।" তিনি আরও বলেন, "চেহারা সুন্দর হলে সুন্দর হওয়া যায় না। মনটাকে সুন্দর করতে হয়। কাজে সুন্দর হতে হয়।" এদিন তিনি আরও জানান, দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা ভেঙে সুন্দরবন পুলিশ জেলা তৈরী হয়েছে, এবার প্রশাসনিক সুন্দরবন জেলা তৈরির কাজ চলছে।
আরও দুদিন জেলায় থাকবেন মমতা। যাবেন গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি দেখতে। এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তিন সাংসদ চৌধুরী মোহন জাটুয়া, শুভাশিস চক্রবর্তী, ও পূর্ণিমা মন্ডল, তিন মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, গিয়াসউদ্দিন মোল্লা, ও মন্টুরাম পাখিরা ছাড়াও জেলা সভাধিপতি শামীমা শেখ, বিধায়ক যোগরঞ্জন হালদার, ফেরদৌসি বেগম, জয়দেব হালদার, জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও প্রমুখ।
আরও পড়ুন: রাজ্য বিজেপি শূন্য কলসী, বললেন পার্থ
এদিন মুখ্যমন্ত্রী মন্দিরবাজারে সভা শেষ করে আবারও হেলিকপ্টারে করে সাগরে উড়ে যান। সেখানে গিয়ে কপিলমুনির মন্দির চত্বর পরিদর্শন করেন। মুখ্যমন্ত্রী আসছেন শুনে সাগরের বিভিন্ন এলাকার মানুষ এদিন ভিড় জমিয়েছিলেন মন্দির চত্বরে। এর পাশাপাশি হেলিপ্যাড গ্রাউন্ডেও উৎসাহি মানুষের ঢল নামে।
গঙ্গাসাগর থেকে বৃহস্পতিবার নামখানা যাবেন মুখ্যমন্ত্রী। দুপুর ১ টায় প্রশাসনিক বৈঠক করবেন। সেখান থেকে আবার শুক্রবার দুপুর ১ টায় গঙ্গাসাগরে প্রশাসনিক সভা করবেন। সেখানেও তিনি বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের পরিষেবা প্রদান ও সুন্দরবন কাপের বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন। তার আগে কপিলমুনির মন্দিরে পুজো দেবেন। এর সঙ্গে সাগরমেলার কাজের অগ্রগতি নিয়ে প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।