পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়কে ভাইফোঁটা দিতে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের কালীঘাটের বাড়িতে আসার জন্য তাঁকে ইতিমধ্যেই ফোঁটার আমন্ত্রণ পাঠিয়েছেন মমতা। আমন্ত্রণপত্রে আগামী ২৯ নভেম্বর মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে রাজ্যপালকে আসার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। নবান্ন-রাজভবন সংঘাতের মাঝে এই আমন্ত্রণ বিশেষ তাৎপর্যবাহী বলেই মনে করা হচ্ছে।
রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় রাজ্যে আসার পর থেকেই শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে চলছে সংঘাত। পুজোর কার্নিভাল থেকে শিলিগুড়ি বা দুই ২৪ পরগনায় প্রসাসনিক বৈঠক 'ভেস্তে যাওয়া', গত বেশ কিছুদিন ধরে পুজোর নানা ইস্যুতে বাদানুবাদ লেগেই রয়েছে দুই তরফে। রাজ্যের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রাজ্যপাল। দুই ২৪ পরগনায় প্রশাসনিক বৈঠক ভেস্তে যাওয়া নিয়ে বুধবারই নতুন করে রাজ্য সরকারকে নিশানা করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। টুইটারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ট্যাগ করে রাজ্যপাল লেখেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল উদ্বিগ্ন ও ব্যথিত। রাজ্যের শাসনব্যবস্থায় যে উদ্বেগের ছবি ধরা পড়েছে, সে ব্যাপারে শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, সমাজকর্মীদের আহ্বান করছি’’। পাশাপাশি রাজ্যপাল লিখেছেন, ‘‘উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় গিয়ে মানুষের দারুণ উৎসাহ দেখেছি। কিন্তু জেলার শীর্ষ সরকারি আধিকারিকরা অনুপস্থিত ছিলেন। কোনওরকম সহযোগিতা করেননি। দুর্ভাগ্যজনক! আমার সাংবিধানিক দায়িত্ব ব্যাহত হয়েছে’’।
আরও পড়ুন: পাহাড়ের রাস্তায় দৌড়ে তাক লাগালেন মমতা
রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের নিরাপত্তা নিয়েও রাজভবন-নবান্ন সংঘাত লক্ষ্য করা গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের নিরাপত্তার ভার আর রাজ্যের পুলিশের হাতে থাকে সরিয়ে সিআরপিএফ-এর হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে ওই রাজ্যকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে এবার থেকে ধনকড়ের নিরাপত্তায় মোতায়েন থাকবে সিআরপিএফ। ধনকড় জেড ক্যাটিগরির নিরাপত্তা পান। এত দিন রাজ্য পুলিশই সেই নিরাপত্তা দিত। কিন্তু, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সিদ্ধান্ত নেয়, ওই দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেওয়া হবে রাজ্যের পুলিশকে। এ বার থেকে রাজ্যপালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে আধা সেনা।
কেন্দ্রীয়য় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের এই সিদ্ধান্ত ঘিরে প্রশ্ন তোলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। সরাসরি কেন্দ্রকে চিঠি দিয়ে রাজ্যপালের নিরাপত্তার বিযয়টি পুনর্বিবেচনা আর্জি জানানো হয়েয় নবান্নের তরফে। চিঠিতে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, কেন রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা না করেই একতরফাভাবে রাজ্যপালের নিরাপত্তায় আধাসেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্র?
আরও পড়ুন: ‘মুসলিমদের অন্তর্ভুক্তি করলেই নাগরিকত্ব বিল সমর্থন করবেন মমতা’, বিস্ফোরক দাবি বিজেপি নেতার
এতসব বিতর্কের মধ্যে রাজ্যের দুই ক্যাবিনেট মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিয়মিত রাজ্যপালের অভিযোগের জবাব দিয়েছেন। কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রী কোনও কথা বলেননি। তাহলে কি রাজ্যপালকে নিজের বাড়িতে ভাইফোঁটায় আমন্ত্রণ করে সংঘাতের আবহ দূর করতে চান মমতা? উঠছে প্রশ্ন। তবে এমন প্রশ্নের উত্তরে তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, 'এই আমন্ত্রণ সৌজন্যমূলক। এটা ভাবার কোনও কারণ নেই যে এতে মুখ্যমন্ত্রী মাথা নত করছেন বা আগ বাড়িয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে বন্ধুত্বস্থাপনের চেষ্টা করছেন।'
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, অতীতে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী কখনও কোনও রাজ্যপালকে ভাইফোঁটায় আমন্ত্রণ জানাননি। রাজভবন নবান্ন বরফ গলাতে তাই আমন্ত্রণ সৌজন্যের রাজনীতিই দেখাতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
Read the full story in English