বড়মাকে নিয়ে আবারও সরগরম হল রাজনীতির আঙিনা। উনিশের লোকসভা নির্বাচনে মোদী-বড়মা সাক্ষাৎকে নিশানা করে মতুয়ার মাটিতে দাঁড়িয়ে মঙ্গলবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘নির্বাচনের সময় হঠাৎ বড়মাকে দেখতে চলে এল। যেন কত ভালবাসে! ওটা ভোটের ভালবাসা, বড়মার জন্য নয়। যদি ভালবাসা থাকত, তাহলে ৩০ বছর কোথায় ছিল? একদিনও খোঁজ নিয়েছিলে?’’। এরপরই মতুয়া সম্প্রদায়ের উদ্দেশে বার্তা দিতে গিয়ে মমতার মন্তব্যে ফের ধরা পড়ল চৌকিদার’ শব্দ। এদিন তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, ‘‘বিপদে সবার পাশে থাকি। ভোটের সময় আসিনা। আজও ভোট চাইতে আসিনি। বলি না, আমি চৌকিদার। কেউ কেউ ভোটের জন্য মিথ্যা কথা বলে, কুৎসা ছড়ায়, গন্ডগোল পাকায়’’। একইসঙ্গে এনআরসি বিরোধিতায় মমতা এদিনও ফের বলেন, ‘‘বাংলায় এনআরসি করতে দেব না, দিচ্ছি না। বিজেপির কত শক্তি আছে দেখতে চাই’’।
উল্লেখ্য, উনিশের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে বনগাঁয় গিয়ে বড়মার সঙ্গে দেখা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। লোকসভা নির্বাচনে বনগাঁ কেন্দ্রে এবার বিজেপির শান্তনু ঠাকুরের কাছে পরাজিত হয়েছেন তৃণমূলের মমতাবালা ঠাকুর। সিএএ-এনআরসি ইস্যুকে সামনে রেখে লোকসভা ভোটের প্রচারে মোদী-বড়মা সাক্ষাতের প্রসঙ্গ তুলে এদিন যেভাবে সোচ্চার হলেন মমতা তা রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
আরও পড়ুন: ভারতে এখনই এনআরসি নয়, লোকসভায় জানালেন মন্ত্রী
এদিন বনগাঁয় সভার শুরুতেই বড়মার কথা তুলে মমতা বলেন, ‘‘তখন আমি বড়মাকে চিনতাম না। ২০ বছর আগে বালু (জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক) বলত, বড়মার কাছে যাবে? একবার মতুয়া ঠাকুরবাড়ি যাবে? জানো তো ওদের কেউ পাত্তা দেয় না, কেউ গুরুত্ব দেয় না। ২০-২৫ বছর আগে মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে গিয়েছিলাম। দেখলাম, ওদের জন্য কিছু হয়নি। আমিই সেখানে স্টেশন করে দিয়েছিলাম। বড়মা কতবার অসুস্থ হয়েছেন। অসুস্থ হলেই বালু আমায় বলত, বড়মার চিকিৎসা করাতে হবে। আমি দেখে নিতাম। আপনাদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক আজকের নয়, দীর্ঘদিনের’’। এরপরই বিজেপিকে নিশানা করে মমতা বলেন, ‘‘যারা ঘৃণা করে, মানুষে মানুষে ঘৃণার জন্ম দেয়, তাদের দলে নেই আমি’’।
উদ্বাস্তুদের প্রসঙ্গ টেনে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘উদ্বাস্তুদের জন্য নিঃশর্ত জমির দলিল প্রদান করার ব্যবস্থা করেছি। উদ্বাস্তুদের নিয়ে অনেকেই মিথ্যা কথা বলেন। আপনাদের কেউ এখান থেকে সরাতে পারবেন না’’।
আরও পড়ুন: ‘ছত্রধর কেন এতদিন জেলে থাকল? জবাব দিক মমতা’
এনআরসি ইস্যুতে বিজেপিকে নিশানা করে মমতার হুঙ্কার, ‘‘এনআরসি করলে আমার মৃতদেহের উপর দিয়ে যেতে হবে। বিজেপির কত শক্তি আছে দেখতে চাই। আমার সঙ্গে ধামসা-মাদল, ঢোল, কাঁসর ঘণ্টা শঙ্খ, মা-বোনেরা থাকবে। আমি এখানকার নাগরিক, আমার মা-বাবা নাগরিক এখানকার, তোমরা বলছো, তিনপুরুষের সার্টিফিকেট লাগবে? এনআরসির প্রথম ধাপ এনপিআর। আমার বুকের পাটা আছে, তাই এনপিআর করিনি’’।
শাহিনবাগের প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেন, ‘‘বিজেপি নেতারা বলছে, গুলি চালাবে। যেখানে পারছে গুলি চালাচ্ছে। এটা কী হচ্ছে, এটা সরকার! শান্তি বজায় রাখা দরকার। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, গুলি চালাব। কাউকে পছন্দ হল না বলে গুলি চালিয়ে দেব? শাহিনবাগ, পার্কসার্কাসে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছে, মেয়েরা বসে আছে। সেখানে গিয়ে গুলি চালাচ্ছে।যা ইচ্ছে তাই করছে’’।