ঠিক এক বছর আগে একুশে জুলাই ধর্মতলায় শহিদ দিবসের মঞ্চ থেকে তিনি ডাক দিয়েছিলেন, "দুহাজার উনিশ, বিজেপি ফিনিশ"। সেই লক্ষ্যে গত ১৯ জানুয়ারি ব্রিগেডে 'ইউনাইটেড ইন্ডিয়া'র সমাবেশও করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। এরপর গঙ্গা ও যমুনা দিয়ে বয়ে গিয়েছে বিস্তর জল। কেন্দ্রে শুধু ফের ক্ষমতাতেই আসেনি বিজেপি, বরং মমতার কপালে চিন্তার বাঁজ বাড়িয়ে বাংলাতেও প্রবল শক্তি বাড়িয়েছে মোদী-শাহের দল। পরিস্থিতি এমনই যে রাজ্যে ক্ষমতার পালা বদলের স্বপ্ন সাকার করতে উঠে পড়ে লেগেছে তারা। তৃণমূল থেকে বিজেপিতে নাম লেখানোর হিড়িকও চোখে পড়ার মতো। এমতাবস্থায় বহু ক্ষেত্রেই পিছুও হঠতে হচ্ছে রাজ্যের শাসক দলকে। ফলে এবার একুশের মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক কী বার্তা দেন, তা নিয়ে আগ্রহী সব মহলই। ২০২১-এ রাজ্যে ফের ক্ষমতায় ফেরার জন্য কর্মীদের ঠিক কতটা কড়া বার্তা দেন মমতা, সে দিকেই এখন তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।
এই একুশের মঞ্চ থেকেই '৪২-এ ৪২' স্লোগান তুলে লোকসভার লক্ষ্য স্থির করে দিয়েছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু ভোটের ফলে দেখা যায় তৃণমূলের ঝুলিতে কেবল ২২টি আসন। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে প্রায় ১৩০টি বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। এর উপর শুরু হয়েছে জার্সি বদলের খেলা। সবমিলিয়ে বেজায় চাপে তৃণমূল কংগ্রেস। বিরোধীদের অভিযোগ, হেরে যাওয়ার ভয়েই পুরভোট করাতে চাইছে না রাজ্য সরকার। এই অবস্থায় লোকসভা ভোটের পরও একাধিকবার মমতা দলীয় কর্মীদের 'অভয় বাণী' শোনালেও পরিস্থিতি অত্যন্ত 'কঠিন' বলে মনে করছে পর্যবেক্ষকদের একটা বড় অংশ। তাঁদের মতে, মমতার পক্ষে রাজ্যে ক্ষমতায় টিকে থাকাই এখন সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে, বহু লড়াইয়ের পোড় খাওয়া রাজনীতিক মমতা আবার সমস্যাকে সুযোগে পরিণত করতেও সিদ্ধহস্ত। ফলে, রবিবারের মঞ্চ থেকে বিজেপির সঙ্গে লড়াইয়ের একাধিক ভোকাল টনিক দিতে পারেন মমতা। বিজেপি শাসনের নানা মন্দ দিক তুলে ধরে হয়ত ফের 'অগ্নিকন্যা' অবতারে ফিরতে পারেন প্রশাসক মমতা।
আরও পড়ুন- এবারের ২১ জুলাই কেন মমতার কাছে সম্পূর্ণ আলাদা
এদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের ঘরের খবর যাঁরা রাখেন, তাঁরা জানেন এই মুহূর্তে দলে 'ভোটগুরু' প্রশান্ত কিশোর (পিকে) কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর যাদুদণ্ডের দিকে তাকিয়ে দলীয় নেতৃত্ব। মনে করা হচ্ছে, তিনিও এই মঞ্চে হাজির থাকতে পারেন। এমনকী, মমতা কাল যা বলবেন তাও অনেকাংশে প্রশান্তই ঠিক করে দিয়েছেন বলেও মনে করা হচ্ছে। এছাড়া, এই একুশের সমাবেশকে কেন্দ্র করেই পিকে ও তাঁর বাহিনী তৃণমূল দলের সাম্প্রতিক অবস্থাটাও বুঝে নিতে চাইছেন। কারণ, ২০২১-এ এ রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসকে ক্ষমতায় ফেরানো 'সফল পেশাদার' প্রশান্ত কিশোরের কাছেও এখন মস্ত চ্যালেঞ্জ। রাজনৈতিক মহলের মতে, পশ্চিমঙ্গের রাজনৈতিক পরিবেশের সঙ্গে দেশের অন্য রাজ্যের তুলনা হয় না, তা ইতিমধ্যে বুঝতে শুরু করেছেন পিকে। এখানে প্রতিটা দিন কাটে রাজনৈতিক আবহে। দেশের অন্য়ত্র ভোটের ৬মাস আগে রাজনৈতিক আবহাওয়া ক্রমশ তৈরি হতে থাকে। আর এ রাজ্যে রোজই রাজনীতি টানটান। সেক্ষেত্রে বাংলায় সাফল্য লাভ করা প্রশান্তের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। তাই তিনিও সদলবলে পর্যবেক্ষণ করবেন একুশে জুলাইয়ের সামগ্রিক প্রেক্ষাপট।
আরও পড়ুন- বারাণসীতে আটক ডেরেক-সহ তৃণমূলের তিন সাংসদ
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, ২০২১ বিধানসভা নির্বাচন অনেকটা দেরি থাকলেও বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট করতে চাইছে না তৃণমূনেত্রী। কারণ, এখনই হাল না ধরলে রাজ্যে ক্ষমতায় ফেরা কঠিন হতে পারে। তাই ২০২০ সালের একুশে জুলাইয়ের ওপর ভরসা না করে আগাম বার্তাই দেবেন তৃণমূল সুপ্রিমো। বিজেপি যে প্রধান শত্রু তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সে জন্যই বিধানসভায় তিনি সিপিএম ও কংগ্রেসকে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে যৌথভাবে লড়াতে আহ্বান জানিয়েছেন। ফলে একুশের মঞ্চ থেকে বাম-কংগ্রেসকে মমতা কী বার্তা দেন, তাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন- মুকুলের মাস্টার স্ট্রোক, বিজেপির অন্দরে ঘুরিয়ে ছক্কা হাঁকালেন ‘চাণক্য’
সাধারণত ২১ জুলাই তৃণমূল দলের কাছে বার্ষিক রাজনৈতিক কর্মসূচি। ফলে এই মঞ্চ থেকেই আগামী দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়া, একুশের ভিড়ও ভরসার মাপকাঠি হয়ে থাকে শাসক দলের কাছে। তবে ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর এবারই সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে তৃণমূল। তাই এই ২১ জুলাইয়ে তৃণমূল কর্মীদের ভিড় আগের সভাগুলোকে ছাপায়ে যায় কি না সেটাও দেখার। সব মিলিয়ে শহিদ দিবসের উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনার বহর এবং দলনেত্রীর বার্তাই অনেকাংশে ইঙ্গিত দেবে তৃণমূলের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে।