সিঙ্গুরের জমি আন্দোলনের সময় টানা ২৬ দিন অনশন করেছেন। সেই অদম্য জেদে এখনও ঘাটতি নেই নেত্রীর। রবিবার থেকে সোমবার দিনভর মেট্রো চ্যানেলের ধর্না মঞ্চ সামলালেন তিনি নিজেই। ক্লান্তির ছিটেফোটাও নেই তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চোখে-মুখে। সিঙ্গুর ইস্যুতে সিপিএমকে ভিটেছাড়া করেছেন, এবার প্রশ্ন উঠেছে, এরাজ্যে বিজেপিকে আটকাতে পারবেন?
কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বাড়ি সংলগ্ন রাস্তায় সিবিআই আধিকারিকরা ঘোরাঘুরি করছেন। কলকাতা পুলিশ তাঁদের আটাকাচ্ছে। সিবিআই-পুলিশ বচসার পরই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। তার আগে অবশ্য ওই সিবিআই আধিকারিকদের গাড়িতে তুলে সরিয়ে দিয়েছে কলকাতা পুলিশ। রাজীব কুমারের বাড়িতেই দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন। সেখানেই ঘোষণা করে মেট্রো চ্যানেলে রাস্তার ধারে 'সত্যাগ্রহ' আন্দোলন শুরু করে দেন। তারপর দ্রুতগতিতে মঞ্চ বাধার কাজ শুরু হয়। নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে দেওয়া হয় ওই চত্বর।
আরও পড়ুন- Mamata Banerjee on Dharna Day 3 Live Updates: রাজীব কুমারকে এখনই গ্রেফতার নয়, নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের
পুলিশ কমিশনারের বাড়ি থেকে আসার পর মেট্রো চ্যানেলে রাস্তার চেয়ার থেকে তিনি মঞ্চের ওপরে চেয়ারে বসেছেন। এছাড়া গত দুদিনে কোনও পরিবর্তন হয়নি। কিন্তু দুদিন ধরে কার্যত চোখের পাতা এক করেননি তিনি। সোমবার ভোরের দিকে মঞ্চেই একটু জিরিয়ে নিয়েছেন। তারপর সকালে ফ্রেস হয়ে আবার সারা দিন ধর্নায়।
দুপুরে মাইকে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, মঞ্চে আসছেন কবি জয় গোস্বামী। এভাবে সারাদিন ধরেই মাইক হাতে মঞ্চ সামলেছেন। রাজনৈতিক মঞ্চে খুব একটা দেখা যায় না কবি জয় গোস্বামীকে। এদিন দুপুরে মঞ্চে আসেন তিনি। সরাসরি এই আন্দোলনকে শুধু সমর্থনই করেননি, একইসঙ্গে সাধারন মানুষকে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান বাংলার কিংবদন্তী কবি। গায়ক শিবাজী চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আটকানো যায় না।" তিনি মমতার সঙ্গে আছেন বলে জানিয়ে দেন। এসেছিলেন সৈকত মিত্র, সুবোধ সরকার, প্রণতি ঠাকুর সহ শিল্পী-সাহিত্য জগতের অনেকেই।
রবিবার থেকে একাধিক জাতীয় নেতৃত্বের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন, সোমবার রাত পর্যন্ত কথা বলেই কাটিয়ে দিয়েছেন। এদিন বিধানসভায় ছিল বাজেট অধিবেশন। সেই অধিবেশনের আগে ধর্না মঞ্চের পিছনে পুলিশ আউটপোস্টের ছোট্ট হলঘরেই মন্ত্রীসভার বৈঠকও সারলেন। এত ছোট ঘরে বাজেট বৈঠকও বোধহয় একটা রেকর্ড হয়ে থাকল। দুপুরে গান-বাজনার আসর চলল। বিকেল ফের বার্ষিক পুলিশ পদক প্রদানের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হল মঞ্চের পাশে আর একটি মঞ্চে। মমতা নিজেই জানালেন, এটা শুধু সত্যাগ্রহ মঞ্চ নয়, এখানে থেকেই যাবতীয় সরকারি কাজ সামলাবেন মুখ্যমন্ত্রী। শুধু মাঝে একদিন হুগলি যাওয়ার কথা ছিল, তা বাতিল করেছেন। কিন্তু সোমবার রাতেও তাঁর কোনও ক্লান্তি নেই।