ছাত্র রাজনীতি করতে গিয়ে একটা ‘ভুল’ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার নেতাজি ইন্ডোরে ছাত্র-যুব কর্মশালায় সেই ‘ভুলে’র কথা তুলে ধরে ছাত্র রাজনীতি কী, তা বোঝালেন তৃণমূল সুপ্রিমো। যোগমায়া দেবী কলেজে পড়ার সময় ডিএসও-র ইউনিয়ন কীভাবে ভেঙেছিলেন, কীভাবে ছাত্র আন্দোলন করেছিলেন, এদিন স্মৃতির সরণিতে হেঁটে সেই পুরনো দিনের কথাই অনর্গল বলে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর একথা বলতে গিয়েই আজকের ছাত্র আন্দোলনের সমালোচনার তীক্ষ্ণ জবাব দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
কীভাবে ছাত্র রাজনীতি করতেন মমতা?
ছাত্র-যুবদের উদ্দেশে এদিন তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, ‘‘ভোর ৪টেয় বাড়ি থেকে বেরোতাম, রাত ১২টায় ফিরতাম। টিউশনের টাকা দিয়ে ছাত্র রাজনীতি করতাম। প্ল্যাকার্ড বানাতাম নিজেরা। তবে কোনওদিন ভয় পাইনি। আমি যখম যোগমায়া কলেজে পড়ি, ১৬ বছর ডিএসও -র ইউনিয়ন ছিল। আমি ভেঙে দিয়েছিলাম। রোজ আমার বাড়িতে গিয়ে আমায় বোঝাত যে ডিএসও কত ভাল। আমি কিন্তু পরপর ৩ বার বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছি। ভালবেসে আমার বিরুদ্ধে কেউ দাঁড়াননি। জানত, দাঁড়ালে জামানত বাজেয়াপ্ত হবে, ভয়ে দাঁড়ায়নি। আমরা সকলকে সাহায্য করতাম। এই করতে করতে হাতেখড়ি। একদিন সুব্রত মুখোপাধ্যায় ওঁর বাড়িতে ডেকে পাঠালেন। বলল, তোরা এত কলেজে গোলমাল করছিস! প্রিয়দা বলল, তোরা নাকি রোজ মারপিট করছিস। আমি বললাম, মারপিট যারা করে, তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে’’।
আরও পড়ুন: মুকুল হলেন চাণক্য মেড ইন চায়না: বিস্ফোরক কুণাল ঘোষ
‘ভুল করেছি, এই ভুল আপনারা করবেন না’
এদিন মমতা বলেন, ‘‘সে সময় একটা ভুল করেছিলাম। জানি না, ভুল না ঠিক। তবে আপনারা এই ভুল করবেন না। একবার নমিনেশন নিয়ে গোলমাল চলছে, প্রিন্সিপালকে ঘেরাও করেছিলাম। ঘেরাও পেরিয়েই প্রিন্সিপাল বেরিয়ে গেলেন। এরপর ভবানীপুর থানায় প্রিন্সিপালকে ঘেরাও করে বসেছিলাম। আমরা যখন বনধ ডাকতাম, তালা লাগিয়ে দিতাম। যিনি কলেজের দায়িত্বে ছিলেন, তাঁর থেকে চাবি নিয়ে নিতাম। ছাত্র রাজনীতিতে এটা হয়ে থাকে। আজ একটা গন্ডগোল হল, এমনভাবে দেখালো, যেন দেশটাই সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে। আমাদের সময় রোজ মারপিট হত। ভবানীপুর থানার লোকেরা জানেন, এই আন্দোলন করতে গিয়ে কী হয়েছে। আজকে বড় বড় ভাষণ দিচ্ছে। সিপিএমের হার্মাদরা বিজেপির হয়েছে। তাদের কাছে নাকি জ্ঞান নিতে হবে, রাজনীতি কীভাবে হয়! নন্দীগ্রাম যেতাম যখন কোলাঘাটের পর ফোনের কানেকশন বন্ধ করে দিত। কত অত্যাচার করেছে’’।
কীভাবে নিজেকে ফিট রাখেন মমতা?
ছাত্র-যুবদের ফিট থাকার বার্তা দিতে গিয়ে নিজের ফিটনেস মন্ত্র ফাঁস করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। নেতাজি ইন্ডোরের সভায় এদিন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘মারের পর মার খেয়েছি, আমার শরীরে আর নেই কিছু। তবুও আজ হাঁটাচলা করি, কারণ আমি রোজ ১ ঘণ্টা এক্সারসাইজ করি। আমায় যেভাবে মেরেছে, বড় বড় অপারেশন হয়েছে। কাউকে জানতে দিইনি। আমরা যে আন্দোলন করেছি, পৃথিবীতে সেই আন্দোলন কেউ করতে পারেননি। আমি আমার বইয়ে কিছু লিপিবদ্ধ করেছি’’।
আরও পড়ুন: কষ্ট পেলেন মমতা
‘বিরোধীরা শুনল না, তা না হলে নোটবন্দিও বাতিল হত’
নেতাজি ইন্ডোরে বিরোধীদের পরোক্ষে দুষে মমতা এদিন বলেন, ‘‘নোটবন্দির বিরুদ্ধে প্রথম আমি বিরোধিতা করেছিলাম। আমায় অনেকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কী করে বুঝলাম, এটা খারাপ। নোট বাতিল নিয়ে ৮টা দল আমার সঙ্গে রাষ্ট্রপতির কাছে গেল। বাকিরা গেল না। তারা যদি যেত, তাহলে নোটবন্দি বাতিল হয়ে যেত। এনপিআর বৈঠকে যাইনি। বাকিরা গিয়েছিল। কী ভেবেছিল, মমতাকে একলা করে দেবে! আমি তো একলা চলোয় বিশ্বাসী’’।
‘দেশে কে চিঁড়ে খাবে বিজেপি ঠিক করবে?’
চিঁড়ে খাওয়া দেখেই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী চিনেছিলেন বলে মন্তব্য করে তুমুল সামলোচনার মুখে বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। নাম না করে কৈলাশকে খোঁচা দিয়ে এদিন ছাত্র-যুবদের উদ্দেশে মমতা বলেনস ‘‘একটা রঙে দেশ চলে না। দেশে কে ছিঁড়ে খাবেন, সেটা কি বিজেপি ঠিক করবে? চিঁড়ে খেলে নাকি চেনা যায়, জীবনে শুনিনি। পোশাক দেখেও নাকি চেনা যায়, শুনিনি, এসব। এ জিনিস কখনই মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের মাটিতে ভাগাভাগি হবে না। আমরা ক্রীতদাস নই, ভারতের নাগরিক। কেন অভিনন্দন যাত্রা করছে? ওটা বিসর্জন যাত্রা’’।