১৯৭৫ সালের ২৫ জুন ভারতবর্ষে এক 'অবিস্মরণীয়' দিন। আজকের দিনেই দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। সেই 'এমারজেন্সি'র প্রসঙ্গ টেনেই এদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় পরোক্ষভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কটাক্ষ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার টুইট করে তিনি জানান, "১৯৭৫ সালে আজকের দিনেই জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল। গত ৫ বছর দেশে 'সুপার এমার্জেন্সি' চলেছে। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের উচিত দেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য লড়াই করা"। এদিনের এই টুইটের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে 'গণতন্ত্র' ফেরানোরই ডাক দিলেন তিনি, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
১৯৭৫ সালে আজকের দিনেই জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল। গত ৫ বছর দেশে 'সুপার এমার্জেন্সি' চলেছে। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের উচিত দেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য লড়াই করা
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) June 25, 2019
প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রতিক কয়েকটি হিংসাত্মক ঘটনায় আইন শৃঙ্খলার প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছে বিরোধী শক্তি বিজেপি। বিভিন্ন মহলে 'জরুরি অবস্থা' জারি করার ইঙ্গিতও মিলেছে। এমনকী লোকসভা নির্বাচন পরবর্তী বাংলার সন্ত্রাস, সন্দেশখালি-ভাটাপাড়াকাণ্ডের আবহে আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে রাজ্যকে ৩৫৫ ধারা অনুযায়ী দু'বার অ্যাডভাইসারি নোটও পাঠানো হয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের পক্ষ থেকে। তবে এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় দাবি করেন, "রাজ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে বিজেপি। তাঁদের অনুশাসনেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক চলছে"।
আরও পড়ুন সবাই ‘অপরাধী’, আর ‘পিসি ভাইপো সাধু’? প্রশ্ন সুজনের
উল্লেখ্য, ভোট পরবর্তী বাংলায় বিজেপি তৃণমূলের খণ্ডযুদ্ধের চিত্রই ভেসে উঠেছে বারবার। সন্দেশখালি থেকে সাম্প্রতিক ভাটপাড়া-কাঁকিনাড়া-জগদ্দলের ঘটনায় বিজেপি-তৃণমূল গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে রক্তপাত ঘটেছে বারবার। গত শনিবার আমডাঙ্গায় বিজেপি কর্মী খুনের ঘটনায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে হুঁশিয়ারি দিয়ে ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং বলেছেন, "এখানে কোনও গণতন্ত্র নেই। রাষ্ট্রপতি শাসনের রাস্তা খুলে দিচ্ছে এই সব ঘটনা। আমরা চাই রাজ্যপাল এসে একবার এলাকা পরিদর্শন করুন।" তবে কি বাংলায় জরুরি অবস্থা জারি করতে চাইছে বিজেপি?
আরও পড়ুন গুলি-বারুদ ভুলে ছন্দে ফিরছে ভাটপাড়া
যদিও এই জরুরি অবস্থা জারি নিয়ে এর আগে মুকুল রায়, দিলীপ ঘোষেরা বারবার বলেছেন, রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘শহিদ’ হওয়ার সুযোগ দেবে না বিজেপি। কিন্তু রাজ্যে বিজেপির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের ভাটপাড়া এলাকা পরিদর্শন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে রিপোর্ট পেশ এই সবই জরুরি অবস্থার গন্ধ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। এতদিন রাজ্যের মুখ্য সচিব মলয় দে কিংবা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ ব্যাপারে মুখ খুললেও রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষ থেকে কোনও রকম বিবৃতি পাওয়া যায়নি। সে দিক থেকে বিচার করলে আজকের এই টুইট যে রাজনৈতিকভাবে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ তা বলাই বাহুল্য। তবে মমতার এই টুইটকে কোনও রকম গুরুত্ব দিচ্ছে না বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব। 'মাননীয়া'র এই টুইট নিয়ে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, "উনি প্রবাদপ্রতিম নেত্রী। জয়প্রকাশ নারায়ণের গাড়ির উপরে উঠে নৃত্য করেছিলেন। তাই গণতন্ত্রের কথা ওনার মুখ থেকে শুনতে চাই না"।