‘‘ঘাবড়াবেন না, আমরা ঘুরে দাঁড়াবই’’, দলীয় সংগঠনকে চাঙ্গা করতে শুক্রবার তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠকে এ বার্তাই দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলায় বিজেপির ‘বাড়বাড়ন্ত’ রুখতে দলীয় সংগঠনকে চাঙ্গা করতে এবার মাঠে নেমে পড়লেন তৃণমূলনেত্রী। ৭ জুন থেকে তৃণমূলের জেলাওয়াড়ি কর্মী সম্মেলনের ডাক দিলেন দলনেত্রী। প্রত্যেক জেলা নেতৃত্বকে নিয়ে তৃণমূল ভবনে আলাদা আলাদা করে বৈঠক করার নির্দেশ দিয়েছেন দলনেত্রী। পাশাপাশি জনসংযোগ বাড়াতে মন্ত্রী, বিধায়কদের নিজেদের এলাকা না ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছেন মমতা। অন্যদিকে, লোকসভা নির্বাচনের খারাপ ফল নিয়ে ফের দলীয় সংগঠনে রদবদল করলেন মমতা। সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, বীরভূম ও উত্তরবঙ্গে তৃণমূলের খারাপ ফল কেন হল? এ নিয়ে এদিন দলনেত্রীর প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে অনুব্রত মণ্ডল ও অরূপ বিশ্বাসকে। তপন দাশগুপ্ত ও বিনয় বর্মনও এদিন দলনেত্রীর প্রশ্নের মুখে পড়েছেন।
প্রসঙ্গত, এবারের লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় জোর ‘ধাক্কা’ খেয়েছে তৃণমূল। মমতার ‘বিয়াল্লিশে বিয়াল্লিশের’ স্বপ্ন তো অধরা থেকেইছে, তার থেকেও বঙ্গে বিজেপির ‘বড় উত্থান’ মমতা বাহিনীর কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। ভোটের ফল প্রকাশের পর কালীঘাটে দলের পর্যালোচনা বৈঠক শেষে সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় সংগঠনেই জোর দেওয়ার কথা বলেছিলেন। এমনকি তিনি মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার থেকে সরে দলের দায়িত্ব আরও নিপুণ ভাবে সামলানোর কথা বলেছিলেন। অন্যদিকে, একের পর এক দলের বিধায়ক, নেতারা যেভাবে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন, তাও চিন্তায় ফেলেছে তৃণমূল নেতৃত্বকে। সে কারণেই লোকসভা নির্বাচনের পর দলীয় সংগঠনের ভিত শক্ত করাই এখন ‘বড় চ্যালেঞ্জ’ মমতা ব্রিগেডের কাছে। এদিনের বৈঠকে সেই লক্ষ্যেই মমতা ঝাঁপিয়ে পড়লেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
আরও পড়ুন: বিজেপিকে রুখতে ফের জঙ্গি মেজাজে পুরনো মমতা
বিজেপি ‘দৌরাত্ম্য’ রুখতে দলের নেতাদের উদ্দেশে মমতার নির্দেশ, ‘‘এলাকায় দুষ্কৃতী ও সমাজবিরোধীরা বিজেপিতে নাম লিখিয়েছে। তারা গোলমালের চেষ্টা করছে। তাদের তালিকা তৈরি করুন’’। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার নৈহাটিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাড়ির সামনে যেভাবে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি শোনা গিয়েছে, সে ঘটনা নিয়েও তৎপর হয়েছেন দলনেত্রী, এমনটাই মনে করছে রাজনীতির কারবারীদের একাংশ।
সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, এদিন তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠকে বেশ কিছু দলীয় নেতৃত্বে রদবদল করা হয়েছে। নদিয়া জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে। মালদা জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে গোলাম রব্বানি ও সাধন পাণ্ডেকে। অন্যদিকে, সব জেলাই নজরে রাখতে শুভেন্দু অধিকারীকে নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। হাজি নুরুলকে সরিয়ে সংখ্যালঘু সেলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীকে।
আরও পড়ুন: ‘স্বজন হারানো শ্মশানে চিতা তোলা’র হুমকি মমতার
বৃহস্পতিবার নৈহাটিতে দাঁড়িয়ে ব্লকে ব্লকে জয় হিন্দ বাহিনী তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন দলের কোর কমিটির বৈঠকে জয় হিন্দ বাহিনীর দায়িত্ব বণ্টন করলেন মমতা। জয় হিন্দ বাহিনীর চেয়ারম্যান করা হল ব্রাত্য বসুকে, ভাইস চেয়ারম্যান করা হল ইন্দ্রনীল সেনকে। বাহিনীর প্রেসিডেন্ট করা হয়েছে কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। জয় হিন্দ বাহিনীর পাশাপাশি বঙ্গজননী কমিটিরও দায়িত্ব ভাগ করে দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। বঙ্গজনননী কমিটির দায়িত্বে কাকলি ঘোষ দস্তিদার। তৃণমূলের নতুন মুখপাত্র করা হল ব্রাত্য বসু, মহুয়া মৈত্র, শুভেন্দু অধিকারী, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
অন্যদিকে, ফের লোকসভা নির্বাচনে ইভিএম কারচুপির অভিযোগ তুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের বৈঠকে নেতাদের উদ্দেশে মমতা বলেছেন, হাই টেকনোলজি প্রোগ্রামিং ব্যবহার করা হয়েছে। না হলে কী করে ৩০০ পার হল? ওদের সব কথা মিলে গেল। আগামী দিনে এ নিয়ে প্রয়োজনে ধর্নায় বসতে হবে, গণ আন্দোলন করতে হবে।