আজ বীরভূমে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশাসনিক কাজের পাশাপাশি রয়েছে মঙ্গলবার তাঁর রোড-শো সহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক কর্মসূচি। সম্প্রতি বিশ্বভারতীর শতবর্ষ উপলক্ষে সেখানে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বোলপুরে রোড শো-ও করেন। যেখানে মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। সেই ভিড় নিয়ে অবশ্য কটাক্ষও করেছিলেন তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। একপর, বিশ্বভারতীতে নিমন্ত্রণ ও অমর্ত্য সেনের বাড়ির জমি বিতর্ক মাথাড়া দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে মুখ্যমন্ত্রীর এবারের বীরভূম সফর যথেষ্ট তাৎপর্যবাহী।
বিজেপির পাখির চোখ বাংলা। ইতিমধ্যেই নির্বাচনী সাফল্যের লক্ষ্যে গেরুয়া শিবিরের প্রস্তুতিও তুঙ্গে। ইতিমধ্যেই বারংবার রাজ্য সফরে আসছেন নাড্ডা-অমিত শাহ। দলের সংগঠন দেখভালের জন্য দায়িত্বে আনা হয়েছে একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও ভিন রাজ্যের শীর্ষ নেতৃত্বকে। পাল্টা বিজেপিকে রুখতে পদ্ম বাহিনীকে 'বহিরাগত' বলে দেগে দেওয়ার মরিয়া চেষ্টায় তৃণমূল। তাই প্রতিপক্ষের দেগে তকমা নস্যাৎ করতে বাঙালি আবেগ-মননকেই হাতিয়ার করতে চাইছে মোদী-শাহরা। সম্প্রতি বিশ্বভারতী ঘুরে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সঙ্গে ছিলেন অন্যান্য বিজেপি নেতারা। বিশ্বভারতীর অনুষ্ঠানে দিল্লি থেকে ভার্চুয়াল ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
আরও পড়ুন- একুশের ভোটের মুখে বড় চমক, বিজেপিতে বড় দায়িত্ব পেলেন শোভন-বৈশাখী
গেরুয়া বাহিনীর এই তৎপরতার পাল্টা রবীন্দ্র সংস্কৃতিকে হাতিয়ার করতে চলছেন রাজ্যের শাসক দল। তৃণমূলের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই প্রচার করা হচ্ছে, বিজেপি-র উগ্র হিন্দুত্ববাদের একেবারেই উল্টো ভাবনা ছিল রবীন্দ্রনাথ-বিবেকানন্দের মতো বাংলার মনীষীদের। এবার এই ভাবনাকে হাতিয়ার করেই রাঙা মাটির পথে রোড শো করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
গত ২০ ডিসেম্বর কেষ্ট গড়ে ডাকবাংলো মোড় থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত রোড শো করেছিলেন অমিত শাহ। প্রায় ১ কিলোমিটার রাস্তায় জনস্রোত চোখে পড়েছে। যা দেখে তৃণমূলকে খোঁচা দিতেও ছাড়েননি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। অমিত শাহ নিজে দাবি করেন, রোড শো’তে এরকম ভিড় কোনওদিন দেখেননি। রোড শো’কে ‘ঐতিহাসিক’ বলেও দাবি করেছিলেন তিনি। সাফ জানান এই জনস্রোতই পরিবর্তনের ইঙ্গিত। ২১-এ বাংলায় সরকার গড়বে বিজেপি।
শাহ-র মিছিলে ভিড়কে ‘বহিরাগত’ বলে দেগে দেন অনুব্রত। কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে জানিয়ে দেন ‘বিজেপি বহিরাগতদের এনে এই ব়্যালি করছে। আমি জেলার লোক নিয়ে মিছিল করি। কয়েকটা ব্লক নিয়ে মিছিল করলেই এর থেকে বেশি ভিড় জমিয়ে দিতে পারি।’ একই সঙ্গে বলেন, ‘আগামী ৪ জানুয়ারি থেকে জেলার বিভিন্ন এলাকায় সভা শুরু হবে। প্রতিটা ব্লকে ৮০ হাজার করে লোক থাকবে।’ এরপরই তৃণমূল নেত্রীর পদযাত্রার প্রসঙ্গ উত্থাপন করে তিনি বলেছিলেন, ‘মমতাদির সভা-মিছিল হলে পাঁচ-ছয়’টা ব্লক থেকে মিছিল তাতেই চার-পাঁচ লাখ লোক হয়ে যায়। এসব আমাদের কাছে কোনও ব্যাপার নয়।’
আরও পড়ুন- ‘নারদায় কে টাকা নিয়েছে-তোলাবাজ তুমি’, নাম না করে শুভেন্দুকে তোপ অভিষেকের
এই ঘোষণার পর দিন, গত সোমবারই নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বীরভূম সফরের ঘোষণা করেন। জানিয়ে দেন রোড শো-তে অংশগ্রহণের কথা। আদতে যা অমিত শাহের ব়্যালির পাল্টে শক্তি প্রদর্শনের ক্ষেত্র হতে চলেছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
রাঙা মাটির বাউলদের নিয়েও রাজনীতি শুরু হয়েছে। বীরভূম সফরে গিয়ে বাঙল বাসুদেব দাসের বাড়ি মধ্যাহ্নভোজ সেরেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কিন্তু আপাতত তিনি তৃণমূলের অনুগামী। অমিত শাহ তাঁর বাড়ি গেলেও বাসুদেববাবুর সঙ্গে কথা না বলায় গোঁসা হয়েছে বাঙলের। তাই একরাশ অভিমান ও অনুযোগ নিয়েই অনুব্রত মণ্ডলের দফতরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর পাশে থাকার কথা জানান। এবার মমতার রোড শো-য়ে থাকবে ৩টি ট্যাবলো। যেখানে মাটির সংস্কৃতির যোগ থাকবে। ট্যাবলো থেকে শিল্পীরা রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইবেন। হবে বাউল গানও। সেখানে বাসুদেব দাসকেও দেখা যাতে পারে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন