মোদী-শাহর সঙ্গে বৈঠকের পর কলকাতায় ফিরে ফের কেন্দ্র বিরোধী সুর চড়ালেন মমতা। সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র সমাবেশ মঞ্চ থেকে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে তিনি বলেন, "দেশের লাভজনক রাষ্ট্রায়াত্ত সংস্থাগুলিকে বিলগ্নিকরণ করে চলেছে কেন্দ্র। বাংলায় উৎপাদিত কয়লাকেও অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমরা এর প্রতিবাদেই এবার পথে নামব। প্রতিবাদ গণতন্ত্রের একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক। যেদিন দেশ থেকে প্রতিবাদ উঠে যাবে সেদিন আর ভারতবর্ষ আর ভারতবর্ষ থাকবে না। বাংলায় গণতন্ত্র থাকলেও দেশের অনেক জায়গাতেই নেই।"
আরও পড়ুন- ‘বাবুলের কাছে কোনও ক্ষমা চাইনি, না কখনও চাইব’
লোকসভায় বাজেট অধিবেশনের পর থেকেই রাষ্ট্রায়াত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণ নিয়ে একাধিকবার সরব হয়েছে তৃণমূলের সংসদীয় দল। সোমবার সেই সুরেই তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, "খুব কৌশল অবলম্বন করেই সংস্থাগুলির বিলগ্নিকরণ করছে কেন্দ্রীয় সরকার। চিত্তরঞ্জন লোকোমটিভ, হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস, সেইল, কোল ইন্ডিয়া, এয়ার ইন্ডিয়া, বিএসএনএল- সব বেসরকারিকরণ করে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। অথচ এর বিরুদ্ধে কোনও কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না।" এরপরই কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের উপস্থিতিতে মোদী সরকারকে বিঁধে মমতা বলেন, "আমার বিরোধিতা করলেও আমরা তাঁদের চাকরি খাইনি। কিন্তু আপনাদের তো চাকরির দিকটাও দেখতে হবে। তাই নিজেরা প্রতিবাদ না করে পরিবারের লোক, বন্ধু-বান্ধবদের দিয়ে সোশাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ করা শুরু করুন।"
-->তবে শুধু সোশ্যাল মিডিয়াতেই প্রতিবাদ নয়, বিলগ্নিকরণ ইস্যুতে পথে নামার ডাকও দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। কর্মীদের নিয়ে মিছিলের নেতৃত্বও দেবেন মমতা নিজেই, সেই কথা জানিয়ে দিনক্ষণও ঠিক করে দেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তিনি বলেন, "১৯ অক্টোবর বেলা ২টোয় মিছিল করা হবে। শিয়ালদহ থেকে মৌলালি হয়ে ধর্মতলা থেকে ফেয়ারলি প্লেস অবধি মিছিল হবে। আমিও হাঁটবো আপনাদের সঙ্গে। মিছিলের স্লোগান হবে, 'সেভ পাবলিক সেক্টর, সেভ ইন্ডিয়া'।" এমনকী, এই প্রতিবাদকে গোটা দেশে ছড়িয়ে দিতে চান মমতা। তিনি বলেন, "আমি আমার লোকসভার সাংসদদের বলব, কেন্দ্রের অর্থমন্ত্রী এবং শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য সময় চাইতে। দরকার হলে দিল্লিতে ৪৮ ঘন্টার ধর্নাও দেব। পরবর্তীতে বিহার, মুম্বাই, চেন্নাইতেও ধর্নায় বসা হবে। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে এই লড়াইটা আমাদের চালিয়ে যেতে হবে।"
আরও পড়ুন- বাংলায় এনআরসি দরকার নেই, আসাম নিয়েও আপত্তি আছে, শাহকে জানালেন মমতা
কেন্দ্র বিরোধী কর্মসূচী সঠিকভাবে বাস্তবায়ণের জন্য তৃণমূলের নেতা, সাংসদদের নিয়ে একটি কোর গ্রুপও গঠন করেছেন মমতা। সেই কমিটিতে রয়েছেন সুব্রত বক্সী, দোলা সেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মলয় ঘটক, পূর্ণেন্দু বোস, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেরেক ও'ব্রায়েনরা। কমিটি ঘোষণা করে এদিন মমতা বলেন, "আপনারা ভয় পাবেন না। আমরা সবাই আপনাদের পাশে আছি। ২৬ তারিখ কাশীপুর গানসেল-এর সামনে বিক্ষোভে বসব আমরা। ২৭ তারিখ বেলা একটার সময় কোল ইন্ডিয়ার সামনে প্রতিবাদে বসব আপনাদেরকে সঙ্গে নিয়ে।"
-->এদিন যাদবপুর কাণ্ড এবং এনআরসি নিয়েও গেরুয়া শিবিরকে নিশানা করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। নাম না করে যাদবপুরকাণ্ডে বাবুল সুপ্রিয়কে বিঁধে মমতা বলেন, "বিজেপি সারা দেশে যা ইচ্ছে করে যাচ্ছে। যাদবপুরে গায়ের জোরে কী করে আসল! আসানসোল, দুর্গাপুরের মানুষ বিজেপিকে ঢেলে ভোট দিয়ে জিতিয়েছেন। আর সেল, কোল ইন্ডিয়া সব ওই এলাকাতেই। সেখানেই ওরা বিলগ্নিকরণ করছে। প্রতিরক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, ব্যাঙ্কিং সেক্টর, বিএসএনএল, কয়লা সব জায়গাই বিজেপি নষ্ট করছে।"
আসাম এনআরসি নিয়ে মমতার মন্তব্য, "এনআরসির ভয়ে বাংলার ছ'জন মারা গিয়েছে, এই ঘটনায় আমি লজ্জিত এবং দুঃখিত। এনআরসি বাংলার কোথাও হবে না। আমাকে বললে আমিই আমার মায়ের বার্থ সার্টিফিকেট দিতে পারব না। তার মানে আমার মা দেশের নাগরিক নয়? ভয় পাবেন না, এমএলএ যদি নাম তুলতে না চান 'দিদিকে বলবেন', ঘাড় ধরে নাম তোলাব। ত্রিপুরায় এনআরসি করুক, ওখানকার মুখ্যমন্ত্রীর নামই সবার আগে বাদ যাবে। সন্ত্রাসের মেরুকরণের দানবীয় তাণ্ডব চলছে দেশে। যদি সাহসী হতে পারেন আপনারা, তাহলে আমি দুঃসাহস দেখাবো।"