‘‘আমার সরকার ভাঙার চক্রান্ত করা হচ্ছে’’, গুরুতর অভিযোগ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে মমতার তাৎপর্যপূর্ণ হুঁশিয়ারি, ‘‘মৃত বাঘের থেকে আহত বাঘ ভয়ঙ্কর’’। সোমবার নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠক শেষে সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বলেন, ‘‘আমার সরকার ভাঙার চক্রান্ত করে যদি বিজেপির লোকেরা মনে করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ বন্ধ করবেন, তাহলে মনে রাখবেন, মৃত বাঘের থেকে আহত বাঘ বড় ভয়ঙ্কর...লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের কোনও সম্পর্ক নেই। নিজেরাই জানল না কী করে জিতল? ২ বছর বাদে বিধানসভা নির্বাচন’’। পাশাপাশি বাংলায় অশান্তির ঘটনার পিছনে ‘চক্রান্ত’ রয়েছে বলেও দাবি তৃণমূল সুপ্রিমোর।
আরও পড়ুন: ‘ভয় পাবেন না, ওরা বিদায় নেবেই’, ঈদের নমাজে বরাভয় মমতার
প্রসঙ্গত, বাংলায় লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির অভূতপূর্ব সাফল্যের পরই মুকুল রায়, কৈলাশ বিজয়বর্গীয়ের হাত ধরে তৃণমূলে ‘ভাঙন’ ধরেছে। ইতিমধ্যেই তৃণমূলের একঝাঁক কাউন্সিলর ‘নজিরবিহীন’ভাবে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। সেইসঙ্গে মুকুল রায়দের হুমকি, ‘‘এরপর (তৃণমূল) বিধায়কদের লাইন পড়ে যাবে (বিজেপিতে)’’। অর্জুন সিং-এর পর বীরভূমের দাপুটে তৃণমূল বিধায়ক মণিরুল ইসলামও পদ্ম শিবিরে নাম লিখিয়েছেন। এছাড়া, সৌমিত্র খান, অনুপম হাজরাদের মতো সাংসদরা তো আগেই পদ্ম পতাকা হাতে তুলে নিয়েছেন। এই প্রেক্ষাপটে কৈলাশ বিজয়বর্গীয়দের হুমকি, এ সরকার আর বেশি দিন নেই। ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনই এখন কার্যত পাখির চোখ বিজেপি নেতৃত্বের। এই নির্বাচনে মমতা সরকারকে সরাতে মরিয়া গেরুয়াবাহিনী। এই পরিস্থিতিতে মমতার মুখে এদিনের হুঁশিয়ারি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
বিজেপিকে নিশানা করে মমতা আরও বলেন, ‘‘ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে ভুয়ো খবর রটানো হচ্ছে। অনেক খেলা হয়েছে। এখন অ্যাডভাইজরি পাঠানো হচ্ছে। গণতন্ত্র বিক্রি হয় না। কোনওরকম ষড়যন্ত্রের কাছে মাথা নত করবে না বাংলা। সবাইকে বলছি, শান্তি বজায় রাখুন’’। লোকসভা ভোটের ফলের প্রসঙ্গ টেনে মমতা ফের বলেন, ‘‘সিপিএমের সব ভোট কী করে বিজেপিতে গেল? এটা হয় কখনও? সবটাই গেমপ্ল্যান হচ্ছে। যত দিন যাবে বিজেপির মুখোশ খুলে যাবে’’।
আরও পড়ুন: বাংলা গুজরাত নয়, আগুন নিয়ে খেলবেন না: মমতা
এদিন ২০০৯ সালের পরিস্থিতির তুলনা টেনে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, ‘‘২০০৯ সালের পরিস্থিতি আর এখনকার পরিস্থিতি আলাদা। ২০০৯ সালে ২৬টি আসন পেয়েও আমরা কিছু করিনি’’। উল্লেখ্য, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের ঢেউয়েই বাংলায় ৩৪ বছরের বাম দুর্গকে টলিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১১ সালে বিধানসভা ভোটের আগে ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় তৃণমূলের উত্থান ঘটেছিল। সেই পরিস্থিতির সঙ্গেই এবার উনিশের নির্বাচনে বাংলায় বিজেপির উত্থান ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের তুলনা টানছেন অনেকে। আর তাই মমতার এদিনের এমন মন্তব্যও রাজনৈতিক মহলে আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে।