২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি স্বাভাবিকভাবেই শুরু করে দিয়েছে সমস্ত রাজনৈতিক দল। পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলের প্রেক্ষিতে রাজ্যের জঙ্গলমহলের আসনগুলিতে গেরুয়া শিবির বেগ দিতে পারে বলে মনে করছে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব একাধিকবার ছুটে গেছেন ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়ায়। কিন্তু সবচেয়ে বেশি চিন্তা ঝাড়গ্রাম লোকসভা আসন নিয়ে। সম্ভবত সেই কারণেই বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে প্রশাসনিক বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পালিত হবে আদিবাসী দিবস।
হুল উৎসবই আগে বড় করে পালিত হত। এবার আদিবাসী দিবসকেও যথেষ্ট মর্যাদা দিচ্ছে রাজ্য। ২১ জুলাই ধর্মতলায় শহিদ দিবসের মঞ্চ থেকেই মমতা বন্দোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, ৯ অগাস্ট আদিবসী দিবসে তিনি ঝাড়গ্রামের অনুষ্ঠানে থাকবেন। বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠানে ঝাড়গ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিলান্যাস করবেন মুখ্যমন্ত্রী। দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের এখন দুটি ডিভিশন আছে। ঝাড়গ্রামে তৃতীয় জঙ্গলমহল ডিভিশনের সূত্রপাত করবেন তিনি। ওই ডিভিশন থেকে ২০০টি বাস যাতায়াত করবে। এছাড়া উপভোক্তাদের হাতে নানা নথি তুলে দেবেন মুখ্যমন্ত্রী।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর সরানো হয়েছে রাজ্যের আদিবাসী উন্নয়ন মন্ত্রী চূড়ামনি হাঁসদাকে। গঠন করা হয়েছে আদিবাসী উন্নয়ন পর্ষদ। ঝাড়গ্রামে তৃণমূল কংগ্রেস সাংগঠনিক স্তরে দায়িত্বপ্রাপ্তদের সরিয়ে দিয়ে নতুন মুখ নিয়ে এসেছে। প্রশাসনিক স্তরে বিডিও থেকে পুলিশ, সব ক্ষেত্রে ব্যাপক রদবদল করেছে সরকার। সম্প্রতি আদিবাসী সমন্বয় মঞ্চ এবং বিজেপির ঝাড়গ্রামের বেশ কয়েকজন বড় মাপের নেতা তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। জঙ্গলমহলের জমি ফিরে পেতে স্পষ্টতই আদাজল খেয়ে ময়দানে নেমেছে তৃণমূল।
কিন্তু গত রবিবার রাত থেকে সোমবার টানা বর্ষণের পর ফের পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে, ঝাড়গ্রামের মানুষের ক্ষোভ বিন্দুমাত্র কমেনি। তা হাড়ে হাড়ে টেরও পাচ্ছে তৃণমূল। সোমবার জলবন্দি ঝাড়গ্রামের বাসিন্দাদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন স্থানীয় বিধায়ক সুকুমার হাঁসদা, পুরপ্রধান দুর্গেশ মল্লদেব-সহ শীর্ষস্তরের জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। এই ক্ষোভের আঁচ কি ভাবে মিটবে তা ভেবে পাচ্ছে না শাসকদল। ওই বৃষ্টিতে ঝাড়গ্রাম পুর এলাকার প্রায় সব ওয়ার্ডে জল জমে যায়। এমনকী ক্ষুব্ধ শহরবাসী ভাঙচুর চালিয়েছে সরকারি অতিথিশালায়ও। জঙ্গলমহলের বাসিন্দাদের ক্ষোভ সামলানোই এখন মাথাব্যথা তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের। তাই দেখার বিষয়, জঙ্গলমহলে নিজেদের দুর্গ কীভাবে সামাল দেন মুখ্যমন্ত্রী।