পুরভোটে তৃণমূলের বিপুল জয়ের পথে নির্দলরা কাঁটা হয়নি। কিন্তু, বেগ দিয়েছে বহু ওয়ার্ডে। এদের বেশিরভাগই 'বিক্ষুব্ধ' জোড়া-ফুল। আর এইসব জয়ী নির্দলদের নিয়ে এখনও কঠোর অবস্থানেই তৃণমূল নেত্রী। দলের যেসব শীর্ষ নেতা নির্দলদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলছেন তাঁদেরও মঙ্গলবার তৃণমূলের সাংগঠিক বৈঠক থেকে কড়়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ভাষণের শুরু দিকেই এদিন তৃণমূল নেত্পী বলেন, 'বেশ কয়েকজন দলের নির্দেশ আমান্য করেছেন। টিকিট না পেয়ে নির্দল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। অনেক নেতাও আবার এইসব নির্দলদের নিয়ে ঘুরেছেন। এইসব মানবো না। দলের নির্দেশ যাঁরা মানছেন না তাঁদের প্রত্যেকের খবর আমার কাছে রয়েছে। কিছু নির্দল আর কিছু নেতা রয়েছেন যারা এসব করছেন। ভাবছেন আপনার সুযোগ এসেছে? দল যখন সুযোগ পাবে তখন আপনার নামটা ক্যাঁচ করে কেটে দেবে।'
মমতার সাফ হুঁশিয়ারি, 'আমি ৭-৮ জনের নাম দেখেছি। কেউ কেউ টিভিতে বিবৃতিও দিচ্ছেন। আমি একটা ডিসিপ্লিনারি কমিটি তৈরি করে দিচ্ছি। সেখানে থাকবেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় সুব্রত বক্সী, পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়, ফিরহাদ হাকিম, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, অরূপ বিশ্বাস ও চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। প্রথম সাবধান করব। না শুনলে শোকজ করব। দুবার শোকজ হলেই সাসপেন্ড করে দেব। যতবড় নেতাই হোক না কেন।' এরপরই নেত্রী বলেন, 'দলের কিছু নেতা খাটতে খাটতে মরে যাবে আর কিছু লোক দলের বিরুদ্ধে উল্টোপাল্টা বলে ভাইরাল হবে। এসব পার্টি সহ্য করবে না। দু-তিনজনকে অ্যালার্ট করা হয়েছে। তাদের লাস্ট চান্স দেওয়া হয়েছে। সারাক্ষণ প্রেসে বিবৃতি দিচ্ছে। পার্টির বদনাম করছে। এক লাখ কর্মী ভালো কাজ করবে আর কয়েকজন খারাপ করবে? খারাপ লোকদের নেব না।'
আরও পড়ুন- দলের রাশ মমতার হাতেই, I-PAC-এর জনসংযোগেই জোর তৃণমূলের
আরও পড়ুন- ‘শেষ একটা সুযোগ দিচ্ছি’, নাম না করে মদনকে চরম হুঁশিয়ারি মমতার
আরও পড়ুন- ‘বিধানসভাকে স্কুল মনে করুন’, বিধায়কদের কড়া বার্তা মমতার
উল্লেখ্য, কলকাতা পুরভোটে তিন জন নির্দল প্রার্থী জয়ী হয়েছিলেন। এঁরা হলেন ১৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে রুবিনা নাজ, ১৪১ নম্বর ওয়ার্ডে পূর্বাশা নস্কর এবং ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডে আয়েশা কানিজ। এর মধ্যে ভোটগণনার দিনই সন্ধ্যা ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে হুড খোলা বাসে ঘুতে দেখা গিয়েছিলো নির্দল প্রার্থী রুবিনা নাজের স্বামীকে। পরে জোড়া-ফুলে যোগ দেওয়ারও ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন তিনি।
কিন্তু সেই সময় দল নির্দল প্রার্থী রুবিনা নাজের সেই ইচ্ছাকে অনুমোদন দেয়নি। মনে করা হয়েছিল, নির্দল জয়ী প্রার্থীদের দলে নেওয়া হলে রাজ্যের বাকি শতাধিক পুরসভা ভোটের আগে খারাপ বার্তা পৌঁছাবে। অনেকেই নির্দল হয়ে দাঁড়াবেন, আর জিতে গেলে মংনে করবেন ফের শাসক দলে ঢুকে পড়ব। সেই প্রবণতা বন্ধে নির্দলদের দলে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে কড়া অবস্থান নিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর কলকাতার মেয়র হয়েছেন ফিরহাদ হাকিমই। এদিন মন্ত্রিসভায় তাঁর গুরুত্বও বেড়েছে। একইসঙ্গে অবশ্য মমতার হুঁশিয়ারি, নির্দলদের পৃষ্ঠপোষক হলে তৃণমূলে ঠাঁই হবে না।
তবে রাজ্যের যে চার পুরসভা ত্রিশঙ্কু অবস্থায় রয়েছে, বোর্ড গড়তে সেগুলিতে নির্ণায়ক শক্তি নির্দল প্রার্থীরাই। এঁদের বেশিরভাগই বিক্ষুব্ধ তৃণমূল। মমতার এদিনের হুঁশিয়ারির পর, এই চার পুরসভায় বোর্ড গঠনেও নজর থাকবে সকলের।