Advertisment

Mamata Banerjee on Assam NRC: অসম সফরে যাবে তৃণমূল

তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, আগামী ২ ও ৩ অগাস্ট তাঁদের একটি দল অসম সফরে যাবেন। ওই দলে থাকবেন সুখেন্দুশেখর রায়, রত্না দে নাগ, নাদিমুল হক, অর্পিতা ঘোষ মমতা ঠাকুর, মহুয়া মৈত্র এবং ফিরহাদ হাকিম।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
mamata banerjee

বাড়তি ডিএ-র জন্য সরকারের বছরে খরচ সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা।

অসমে নাগরিক পঞ্জির দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশ হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী বাদ গিয়েছে ৪০ লক্ষ মানুষের নাম। এঁরা প্রত্য়েকে প্রমান স্বরূপ তাঁদের নানা পরিচয়পত্র জমা দিয়েছিলেন অসম সরকারের কাছে। কিন্তু অসম সরকার খতিয়ে দেখার পর ওই তালিকা প্রকাশ করেছে। যদিও এই তালিকা চূড়ান্ত নয় বলেই দাবি করা হয়েছে। ৪০ লক্ষ নাম বাদ দেওয়ায় মুখমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি যে বিশেষ ভাবে উদ্বিগ্ন তাও জানাতে ভোলেননি। এই ৪০ লক্ষ মানুষকে বাদ দেওয়ার জন্য় তিনি দায়ী করেছেন কেন্দ্রীয় সরকার ও অসম সরকারকে। তাঁর বক্তব্য়, সংসদই পারে এই সমস্য়ার সমাধান করতে। প্রয়োজনে আইনি সংশোধনী পাশ করাতে হবে। সেখানে মুখ্য়মন্ত্রী বলেন, “৪০ লক্ষ বাঙালী, হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে তাঁদের সবাইকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা অনেক চেষ্টা করেছিলন নাম তোলার জন্য়। এনআরসির তালিকায় তুলতে পাসপোর্ট, সরকারি চাকরির নথি, আধারকার্ড, ভোটার পরিচয়পত্র থাকতে হবে। এই সব জমা দেওয়া সত্বেও মানুষের নাম ওঠেনি। সমস্ত কানেকশন বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা ওদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। সমস্ত নেট বন্ধ আছে অসমে। এটা খুবই চিন্তার বিষয় এবং দুর্ভাগ্য়জনক।’’

Advertisment

মুখ্য়মন্ত্রীর বক্তব্য়, এটা বাঙালি খেদাও চলছে, বিহারি খেদাও চলছে। আর সব চেয়ে বিপদে পরবে বাংলাদেশে। বাংলাদেশ যদি না নেয়। তারা যাবে কোথায়। ৪০ লক্ষ লোক এঁরা কোথায় যাবে। একবারও কী সরকার এসব ভেবেছে। ভারত সরককারে উচিত ছিল না একবার পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে মিটিং করা। একবার কেউ একটা কথাও বলেনি। আমি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে বলছি এঁদের বাচান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সময় চাইছি। যাতে দিল্লিতে দেখা করতে পারি। নিজে এটা নিয়ে কথা বলতে যাব। আমাদের সাংসদ দলকে অসমে পাঠাচ্ছি। তাছাড়া প্রয়োজন হলে আমি নিজেও যেতে পারি। মানবিক সমস্য়া হিসাবে দেখছি। বাংলার মানুষরা ওদের সঙ্গে আছি।

অসমের এই নাগরিক পঞ্জি নিয়ে বিতর্ক চলছে অনেকদিন ধরেই। একে রাজনৈতিক অভিসন্ধি হিসবেই দেখছেন মুখ্য়মন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য়,  এরা কিন্তু শুধু মুসলমান, তা নয়। হিন্দু, মুসলমান দুইই আছে। রাজনৈতিক ভাবে বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। বিজেপি সরকার উদ্দেশ্য় প্রণোদিত ভাবে এই কাজ করছে। নাম পদবী দেখেও বাদ দিয়েছে। বাংলার অনেক পদবীর লোক রয়েছে। বাংলাদেশেরও আছে।’’  মমতার দাবি, ২৩ মার্চ ২০১৮-তে একটা চিঠিতে জানতে পেরেছি বিদেশি চিহ্নিত করা হয়েছিল ৮৬৮৫৯ জনকে। তার মধ্য়ে ২৯৩০৬ জনকে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ হয়েছে। ৪১ হাজার ৩৩ জন নিখোঁজ রয়েছে। ৭১ জনকে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে। ১৩৩ জনকে আসামের জেলে রেখেছে। তার মধ্য়ে ২৮জন শিশু ও মহিলা আছে।’’

এই নাম বাদ দেওয়াকে খুব ভয়াবহ বলে বর্ণনা করেছেন মুখ্য়মন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘মুর্শিদাবাদের, উত্তরবঙ্গের লোককেও বিদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাংলার সঙ্গে আসাম সীমান্ত রয়েছে। অন্য় রাজ্য়ের গায়ে ততটা লাগবে না, যতটা আমাদের গায়ে লাগবে। একই ভাষায় কথা বলেন তাঁরা। একদিকে বাংলাদেশ অন্য় দিকে বাংলা। এই দুটি জায়গায় সব থেকে বেশি সমস্য়া হবে। মনে রাখতে হবে এঁরা কেউ রোহিঙ্গা নয়। এরা যে ভারতীয়ই এটা মনে রাখতে হবে। ডিভাইড ও রুল পলিসি করতে গিয়ে মানবিকতা ধংস করে দিচ্ছে। পাশাপাশি বেশ কয়েক কোম্পানী বাহিনী রয়েছে তা সত্বেও আরও ১৫ কোম্পানী ফোর্স পাঠানো হয়েছে। আমাদের সন্দেহ এদের বুলডোজ করার জন্য় এসব করা হচ্ছে। জোর করে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করছে।’’

মমতার অভিযোগ, দেশের মধ্য়ে থেকে এরা দেশেই রিফিউজি হয়ে গেল। তিনি বলেন, শুরু থেকেই তাঁরা বিষয়টির বিরেধিতা করেছিলাম। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমরা বুঝতে পেরেছিলাম ডামাডোল হবে। সেদিন কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার বিরোধিতা করেনি। আসাম সরকারও বিরোধিতা করেনি। নীরব থাকা বড় ধরনের সমর্থনের মধ্য়েই পড়ে। নীরব থেকে এটা করতে সুযোগ করে দিয়েছে। তখন সরকার বলতে পারত কেন আমি এত লোককে তাড়াব। আদালতকে সম্মান জানিয়ে বলছি। সরকার কিছু বলেনি চুপচাপ ছিল। এমনকী সরকার কেন সংসদে বিল পাশ করল না এঁদের রক্ষা করার জন্য়।’’ তাঁর অভিযোগ, এ সবই ভোটের রাজনীতির জন্য করা হয়েছে।

তিনি জানান রাজ্য সভায় তৃণমূল কংগ্রেস ও কংগ্রেসের সদস্যরা বিষয়টি উত্থাপন করার পর স্বরাষ্টরমন্ত্রী সেখানে বলেছেন, ভীতি ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ভয় পাওয়ার কারণ নেই। মমতার প্রশ্ন, যদি ভয়ের কারণ না থাকে, তাহলে অতিরিক্ত ১৫ কোম্পানি নিরাপত্তা বাহিনী কেন চেয়ে পাঠানো হল, কেনই বা বন্ধ করে দেওয়া হল ইন্টারনেট পরিষেবা। মমতার আশঙ্কা, অত্যাচার চলবে, এবং তা জানতে দেওয়া হবে না আসামের বাইরের নাগরিকদের।

কিন্তু অসমের ওই অধিবাসীর যদি বাংলায় আসেন, তাহলে কী হবেন? তাও বাতলে দিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, তাদের পাশে দাঁড়াব। আমাদের ঘরে তাঁরা এলে তাঁদের রাষ্ট্রসংঘের নিয়ম অনুযায়ী রিফিউজি হিসাবে তাদের সাহায্য় করাই কাজ। তবে এটা আমায় খুব চিন্তায় ফেলেছে। সরকার ভোটের রাজনীতি না করলে শান্তি বিঘ্নিত হত না। বাংলায় আসবে কী? ওখানে তো ঘরবাড়ি করেছে। আসামের অধিবাসী হয়ে গিয়েছে। তাদের আত্মীয়-স্বজন, পরিবার কেউই তো আসতে চায় না। তারপরও এলে ভাবব।’’

এদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, আগামী ২ ও ৩ অগাস্ট তাঁদের একটি দল অসম সফরে যাবেন। ওই দলে থাকবেন সুখেন্দুশেখর রায়, রত্না দে নাগ, নাদিমুল হক, অর্পিতা ঘোষ, মমতা ঠাকুর, মহুয়া মৈত্র এবং ফিরহাদ হাকিম।

Mamata Banerjee Assam nrc
Advertisment