খাসতালুকে ভোট, তবুও একের পর এক সভা করে চলেছেন তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগের দু'বার এই কেন্দ্র থেকেই বিধায়ক নির্বাচিত হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেছেন ভবানীপুরের ঘরের মেয়ে। নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর কাছে পরাজিত হয়ে ফের ভবানীপুরের উপনির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন মমতা। উপনির্বাচন হলেও বাংলার উন্নয়নের বিস্তারিত খতিয়ান তুলে ধরছেন নির্বাচনী সভায়। শুধু তাই নয়, সাবধানী মমতা এদিনও আবেদন জানান নির্বাচনের দিন বৃষ্টি হলেও ছাতা বা বর্ষাতি পড়ে ভোট দিতে যাওয়ার জন্য।
কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে ভোটে কাজে লাগানো থেকে পেগাসাস, রাজ্যের সামগ্রিক উন্নয়ন, বিজেপি শাসিত রাজ্যে তালিবানি শাসন, ঝড় বৃষ্টি থেকে সাবধানে থাকা কোনও কিছুই বাদ যায়নি ভবানীপুরে এদিনের মুখ্যমন্ত্রীর নির্বাচনী ভাষনে। এখানে বন্য হওয়ার জন্য বিহার, ঝাড়খন্ড ও ভূটানের বৃষ্টিকেও দায়ি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, 'ওই সব এলাকার বৃষ্টির জল গড়িয়ে বাংলায় চলে আসে। বাংলাটা অনেকেটা নৌকার মতো।' আর রাজ্যে প্রাকৃতিক বিপর্যয় এলে কেন্দ্রীয় সরকার যে সাহায্য করে না, রাজ্যকেই সবটা করতে সেকথাও মনে করিয়ে দেন মমতা।
আরও পড়ুন- ‘ডেডবড়ি নিয়ে বদমাইশি, পচা কুকুর বাড়ির সামনে ফেলে আসব’, হুঁশিয়ারি মমতার
দক্ষিণ কলকাতার তৃণমূলের গড়ে নির্বাচনী সভায় মমতা বলেন, 'এবার আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য শিল্প। শিল্প হচ্ছে তাজপুর, দেউচা-পাঁচামিতে। এমন প্রকল্প হবে যে আগামি ১০০ বছর এরাজ্যে বিদ্যুতের অভাব হবে না। এক অস্ট্রেলিয়া সংস্থা সার্ভে করে জানিয়ে দিয়েছে আগামী ২০ বছর শিল্পের ডেসটিনেশন বাংলা। সবাই এখানে আসতে চাইছে।' ডানকুনি থেকে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর, এই ফ্রেট করিডরে ৭২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে। জনসভায় একের পর এক পরিসংখ্যান দিয়ে গিয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী।
আরও পড়ুন- ‘এজেন্সি আর অস্ত্র নিয়ে নন্দীগ্রামে ভোট’, নিশানায় বিজেপি, ভয়ঙ্কর অভিযোগ মমতার
উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, '১ কোটি ২০ লক্ষ সবুজসাথী সাইকেল দেওয়া হয়েছে। রাজ্যে ৪৩টা মাল্টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। ১০ বছরে ৩২টা বিশ্ববিদ্যালয়। শিশুদের জন্য উন্নতমানের চিকিৎসা ব্যবস্থা, কন্যাশ্রী থেকে নানা স্কলারশিপ ছাত্রীদের, ছাত্র-ছাত্রীদের মোবাইল বা ট্যাবের জন্য ১০হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে।' করোনার তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলা করার জন্য রাজ্য সরকার যে প্রস্তুত সেকথাও জানিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, 'আশা করব তৃতীয় ওয়েব আসবে না। তবু আমরা তৈরি। বাচ্চাদের জন্য ১০হাজার অতিরিক্ত বেডের ব্যবস্থা করেছি।' কলকাতা পুরনো শহর, তার পরিকল্পনার কথাও বলেছেন মমতা।
বাম আমলে হাজরা মোড়ে আন্দোলন করতে গিয়ে মার খেয়ে মাথা ফেটেছিল তৎকালীন যুব কংগ্রেসনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ভবানীপুর এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক শীর্ষ নেতৃত্বর বসবাস। উপনির্বাচনে প্রচারের ধারে-ভারে এগিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস। ২১৩টি আসনে জয়লাভ করে বিপুল জনমত নিয়ে তৃতীয়বারের জন্য রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস। অভিজ্ঞ মহলের মতে, তা সত্বেও ভবানীপুরের উপনির্বাচনে মরিয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নন্দীগ্রামের পরাজয় এখনও মন থেকে মেনে নিতে পারেননি তিনি। আদালতে মামলা করেছেন, তাছাড়া প্রতিদিনই নন্দীগ্রামের নির্বাচন নিয়ে তোপ দেগে চলেছেন মমতা। তাই ভবানীপুরের ভোটের লড়াইতে এক ইঞ্চি ফাঁক রাখতে চাইছেন না তৃণমূলনেত্রী। রাজ্যের জন্য তিনি কী করেছেন, রাজ্যের আরও কী কী উন্নতি ঘটতে চলেছে তার আগাম সম্ভবনার কথাও উঠে আসছে ভবানীপুরের উপনির্বাচনে। একইসঙ্গে ভোট দিতে যাওয়ার 'আবেগী' আবেদন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন