ক্রমশ ভাঙছে কংগ্রেস। বাংলায় অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই হাত শিবিরেরে। এর মধ্যেও যেকয়েক জন নেতা কংগ্রেসের রয়েছেন তাঁরাও অনেকে জোড়া-ফুলমুখী। শুধু এ রাজ্যই নয়, বহ্মপুত্রের পারে পূর্বের অসম থেকে আরব সাগর তীরবর্তী পশ্চিমের গোয়াতেও কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। এদিকে, সর্বভারতীয়স্তরে বিজেপি বিরোধী জোট গঠনের যখন প্রয়াস চলছে তখন কংগ্রেস থেকে একাধিক নেতৃত্বের তৃণমূলে যোগদানও অব্যাহত। এতে বিরোধী জোট গঠনে আদৌ কী কোনও প্রভাব পড়বে? তৃণমূলের পদক্ষেপকে কীভাবে দেখছে হাত শিবির? এসব নিয়েই দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের মুখোমুখি লোকসভার কংগ্রেস নেতা তথা পশ্চিমবঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী।
প্রশ্ন: লখিমপুরে নিহত কৃষকদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করার জন্য রাকেশ টিকায়েত, চন্দ্রশেখর আজাদ, এমনকী তৃণমূলের প্রতিনিধিদেরও প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হল। কিন্তু কংগ্রেস নেতৃত্ব অনুমতি পেলেন না। কেন?
অধীর চৌধুরী: এটা স্পষ্ট যে উত্তরপ্রদেশের শাসক দল ও মুখ্যমন্ত্রী আঞ্চলিক দল যেমন তৃণমূল, ভীম পার্টির পক্ষে। কারণ শাসক শিবির মনে করে এইসব দল অনেকটাই নমনীয় প্রকৃতির এবং এদের উপস্থিতি বিজেপির ক্ষতি করবে না। ফলে এইসব দলকে লখিমপুরে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বিরোধী জোটকে ভাঙতে বিজেপি কৌশলে প্রয়াস শুরু করেছে। কংগ্রেসকে ঠেকিয়ে তৃণমূলের সামনে তারা গাজর ঝুলিয়ে দিচ্ছে। এককথায় তৃণমূল বিরোধী জোটের ক্ষতি করছে।
কিন্তু, প্রিয়াঙ্কার গান্ধীর দৃঢ়তা ও কঠীন সংকল্প বিজেপিকে নমনীয় হতে বাধ্য করল। এরফলে যোগী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কংগ্রেস কর্মীদের মনবল বেড়েছে। নেত্রীর তরফে এই ধরণের আরও পদক্ষেপ আসা করছি।
প্রশ্ন: অসম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, গোয়া থেকে কংগ্রেস ছেড়ে নেতা-নেত্রীরা তৃণমূলে যোগদান করছেন। বলছেন, 'কংগ্রেস পরিবারকে একত্রিক করাই লক্ষ্য'?
অধীর চৌধুরী: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কংগ্রেস নেতাদের প্ররোচিত ও প্রলুব্ধ করছেন। কংগ্রেসকে ভাঙে তিনি কংগ্রেসে (এম) গড়ার চেষ্টা করছেন। যদিও এর মাধ্যমে মোদীর ক্ষমতায় টিঁকে থাকার হাতিয়ারে পরিণত হচ্ছেন উনি। মমতা বিরোধী জোটের মধ্যে একটা লড়াই চালাচ্ছেন। মনে করাতে চাইবো যে, প্রয়াত রাজীব গান্ধীই তাঁকে কংগ্রেসেনেতৃত্বের জায়গায় তুলে এনেছিলেন, মন্ত্রীপদ দিয়েছিলেন। এখন সেই মমতাই তাঁর রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্খা সাধণে কংগ্রেসের পিঠে ছুরি মারছেন। কংগ্রেস নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠতা তিনি উপভোগ করেন, ফলে তাঁর কাছে কংগ্রেস হল সফট টার্গেট।
প্রশ্ন: আপনি কী বলতে চাইছেন যে তৃণমূল নয়া কংগ্রেস হিসাবে অবতীর্ণ হওয়ার চেষ্টা করছে?
অধীর চৌধুরী: গত লোকসভায় বিজেপি ৩৭.৩৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। অর্থাৎ প্রায় ৬৩ শতাংশ ভোট বিজেপি বিরোধী। ভোটের পাটিগণিত অনুযায়ী, বিরোধী জোট গঠন ছাড়া বিজেপি সরকারকে উৎখাত সম্ভব নয়। কিন্তু, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধী এই জোট বিরোধী গঠনের বিষয়টিকে নষ্ট করার চেষ্টা করছেন। প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিজেপিকে স্বস্তি দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখায় ধো, নেই, কিন্তু বিরোধী জোট ছাড়া কারোর পক্ষেই সেই স্বপ্নপূরণ সম্ভব নয়। মজার বিষয় হল ইডি ভাইপোকে তলব করতেই মমতা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেন। যেসব কথা বলছেন সেগুগলিও যুক্তিহীন। বিজেপি আরএসএস দ্বারা পুষ্ট। এর সূচনা থেকে রাজনৈতিক, সংস্কৃতিক, নীতিগতভাবে কংগ্রেস বিরোধীতা করে আসছে। কিন্তু, মমতা বিজেপির চোখের মণি ছিলেন। প্রথম এনডিএ সরকারের রেলমন্ত্রী ছিলেন। বাংলায় বিজেপির দু'টো সাংসদ মমতার হাত ধরেই হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে প্রবেশের সহায়তার জন্য রাজ্যবাসীর কাছে মমতার ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত।
Read the full story in English
ইন্ডিয়ানএক্সপ্রেসবাংলাএখন টেলিগ্রামে, পড়তেথাকুন