প্রয়োজন ছাড়া কোনভাবেই টাকা খরচ করা যাবে না। বাড়তি টাকা খরচ করার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। সরকারের টাকা মানুষের টাকা। সেই টাকায় বিলাসিতা করার জায়গা নেই বলে বৃহস্পতিবার নবান্নে সব দপ্তরের মন্ত্রী এবং আমলাদের বৈঠকে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, "যে টাকা বাঁচবে তা উন্নয়নের খাতে ব্য়য় করা হবে।"
এর আগে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “খরচ কমাতে ১২টি দপ্তরকে এক করে দিয়েছি। খরচ কমাতেই হবে। তবে কোথাও যেন অহেতুক ক্ষতি না হয়। প্রয়োজন যেখানে, শুধুমাত্র সেখানেই টাকা খরচ করতে হবে।" এদিন মমতা তোপ দাগেন কেন্দ্রীয় সরকারকেও। তিনি বলেন, “২ লক্ষ ২৪ হাজার টাকা ঋণ শোধ করেছি। আরও ৪৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ শোধ করতে হবে।’’
আরও পড়ুন: নতুন গাড়ি, ফুলের তোড়া, সৌন্দর্যায়নের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি রাজ্য সরকারের
বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “বর্তমান সরকারের আমলে পরিকল্পনা খাতে ব্যয় পাঁচগুণ বেড়েছে। মূলধনী ব্যয় বেড়েছে ন'গুণ। সামাজিক সুরক্ষা খাতে সরকারের বাজেট চারগুণ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় বরাদ্দে ক্রমশই কাটছাঁট করা হচ্ছে। রাজ্য সরকারকে টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিমাতৃসুলভ আচরণ করছে কেন্দ্রীয় সরকার। যতটা সম্ভব আমরা টাকা বাঁচানোর চেষ্টা করছি। যতটুকু বাঁচাতে পারব মানুষের কাজে লাগবে। সরকার খরচ কমাতে সক্রিয়, তবে আরও একটু proactive হতে হবে। সরকারের খরচের চুলচেরা বিশ্লেষণ দরকার।" অনেক সময় ভুল টেন্ডার, প্রকল্পের কাজে অনাবশ্যক দেরি, ত্রুটিপূর্ণ প্রকল্প রিপোর্ট তৈরির মতো কারণে দপ্তরের অর্থ অপচয় হয়। এ দিনের বৈঠকে তা রুখতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
তবে জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের কাজে যাতে এই ব্যয় সংকোচের কোনরকম প্রভাব না পড়ে তা নিশ্চিত করতে হবে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যেই সরকারি দপ্তরের ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে দৈনন্দিন খরচ এর বিশ্লেষণ, টেন্ডার প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখা, এবং প্রয়োজন ভিত্তিক কর্মী পুনর্বিন্যাসের উদ্দেশ্যে তিনটি আলাদা কমিটি করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। অপ্রয়োজনীয় খরচে রাশ টানতে সরকারি দপ্তর এবং সংস্থাগুলির জন্য একগুচ্ছ নির্দেশিকা জারি করে দিয়েছেন মুখ্যসচিব মলয় দে। এদিনের বৈঠকে সব দপ্তরের মন্ত্রী এবং আধিকারিকদের কিছু মৌখিক নির্দেশ দেন মমতা। অর্থনৈতিক উপদেষ্টা এবং আধিকারিকদের পরামর্শও শোনেন। তাঁর কথায়, "আজকের বৈঠকে বেশ কিছু ভালো পরামর্শ উঠে এসেছে। অর্থদপ্তর এগুলো খতিয়ে দেখে কার্যকর করবে। আজ একটা ভালো কাজ শুরু হলো। ছমাস-একবছর পরে এর প্রভাব বোঝা যাবে।"
সরকারের বাড়তি খরচ ছেঁটে ফেলার ছাপ এদিনের বৈঠকের মধ্যেও খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। এই ধরনের বৈঠকের চালু রীতির তুলনায় এদিনের নবান্ন সভাঘরের বৈঠক ছিল অনেকটাই সাদামাটা। অতিথিদের ভূরিভোজের বদলে সামান্য চা-জলখাবারেই আপ্যায়ন করা হয়েছে। যা এই ধরনের বৈঠকের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী।