বিজেপি এবং তৃণমূল একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ, "কেন্দ্রে মোদী এবং রাজ্যে দিদি স্বৈরাচারী জনবিরোধী নীতি গ্রহণ করে মানুষের জীবন বিপন্ন করছেন", মানুষের স্বার্থে দুটি সরকারকেই উৎখাত করতে হবে, এবং এর দায়িত্ব নিতে হবে বামপন্থীদেরই। শনিবার মেদিনীপুরে বিদ্যাসাগর হল ময়দানে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সিপিআইএম-এর সাধারণ সভা থেকে কর্মীদের এই বার্তা দেন দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। সূর্যকান্তবাবু বলেন, "একটি মুদ্রার মোদী হেড এবং দিদি টেল। এই দুই সাকরেদের মাঝখানে কিছু নেই, আর ওটা অচল কয়েন, কোথাও চলতে পারে না। এই কয়েন ছুড়ে ফেলে দিন।"
জেলা সিপিআইএম-এর উদ্যোগে এই সাধারণ সভায় যোগ দেন পার্টির সদস্য এবং অন্যান্য শাখা সংগঠনের সদস্যরা। সূর্যকান্তবাবু ছাড়াও সভায় বক্তব্য রাখেন সিপিআইএম নেতা রবীন দেব এবং দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির সম্পাদক তরুণ রায়। প্রত্যেক বক্তাই তৃণমূল এবং বিজেপিকে কড়াভাবে আক্রমণ করেই বক্তব্য রাখেন।
কয়েক মাস আগেই অনুষ্ঠিত পঞ্চায়েত নির্বাচনে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় বামেদের খুব একটা ভালো ফল হয়নি। তুলনামূলকভাবে ভালো ফল করেছে বিজেপি। বামপন্থী কর্মী-সমর্থকদের একাংশ যে ক্রমশ বিজেপি মুখী হচ্ছেন, তা অবশ্য অনেকদিন আগেই বুঝতে পেরেছেন সিপিআইএম নেতৃত্ব। শনিবার সাধারণ সভা থেকেও কর্মীদের এ বিষয়ে সতর্ক করেন নেতারা। সূর্যকান্তবাবুকে বলতে শোনা যায়, "যাঁরা ভাবছেন তৃণমূলকে হটাতে আপাতত বিজেপিকে ক্ষমতায় নিয়ে আসি, তারপর আমরা বামপন্থীরা বিজেপির সঙ্গে লড়ে নেব, সেটা ভুল ভাবছেন। দুটো দলই ভয়ঙ্কর, এবং মানুষের স্বার্থ বিরোধী।" কর্মীদের আশ্বস্ত করে তিনি এও বলেন, "ক্ষমতায় আসার জন্য বামপন্থীরা আন্দোলন করে না, মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনের জন্য ন্যূনতম চাওয়া পাওয়া আদায়ের জন্যই বামপন্থীরা আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে এবং ভবিষ্যতেও লড়াইয়ের ময়দানে তারা থাকবে।"
সভা মঞ্চ থেকে সূর্যকান্তবাবু কংগ্রেস সম্পর্কেও পার্টির অবস্থান স্পষ্ট করেন। তাঁর বক্তব্য, "কংগ্রেসের সঙ্গে আমাদের সমদূরত্বের লাইন কখনোই ছিল না, আমাদের কর্মসূচিতেও নেই, পার্টি কংগ্রেসেও নেই, আমাদের শেষ কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকেও ছিল না। বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে সমদূরত্ব মানা মানেই এ রাজ্যে বিজেপিকে জায়গা করে দেওয়া। বিজেপি ও টিএমসি বিরোধী শক্তিকে একসঙ্গে করে লড়াই করার সিদ্ধান্তই হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটিতে।"
সাধারণ সভায় উপস্থিত কর্মীদের উদ্দেশ্যে সূর্যকান্তবাবুর পরামর্শ, "বিজেপি এবং তৃণমূলের প্রতি মানুষের মোহভঙ্গ হয়েছে, আপনারা নিজেদের বুথে গিয়ে মানুষের এই মনোভাবটা কাজে লাগান। শুধু ব্রিগেডে সামিল হলেই চলবে না, নিজেদের বুথে ব্রিগেড গড়ে তুলুন।"