নাগরিকত্ব নিয়েই ক্রমশই উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায়। পাশাপাশি উত্তাল হচ্ছে রাজ্য রাজনীতির মঞ্চ। বিক্ষোভ-প্রতিবাদের মাঝেই বাগযুদ্ধে জড়ালেন রাজ্যের একাধিক নেতা-নেত্রীরা। এহেন পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় নাগরিকত্ব আইনের বিক্ষোভের কারণ হিসেবে দায়ী করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই। এদিন তৃণমূল সুপ্রিমোকে তীব্র কটাক্ষ করে বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "বিক্ষোভকে নিয়ন্ত্রণে রাখার কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কিন্তু উনি সেই কাজ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। উনি হুমকি দিচ্ছেন যে উনি ব্যবস্থা নেবেন। উনি রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। উনি ছাড়া কে ব্যবস্থা নেবে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পদত্যাগ করার পর বরং বলুন যে উনি এই পরিস্থিতি সামলাতে পারছে না। আর ভুলভাল কথা বলে যাচ্ছেন নাগরিকত্ব আইন নিয়ে। ওনার কোনও এক্তিয়ারই নেই এ ব্যাপারে কথা বলার। সংবিধানে সেই ক্ষমতা ওনাকে দেওয়া হয়নি।"
আরও পড়ুন: বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারির হুঁশিয়ারি বিজেপির
যদিও রূপার দাবি নস্যাৎ করেছেন তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার পদ্ম শিবিরকে আক্রমণ শানিয়ে তিনি বলেন, "এই বিলের বিরুদ্ধে আমরা সংসদে সম্পূর্ণ বিরুদ্ধেই ভোট দিয়েছি। সেই সময় একমাত্র বাংলার সরকার বলেছিল যে আমরা সিএবি হতে দেব না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরেই এখন কেরালা, পাঞ্জাব, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় এবং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীরা কথা বলছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শান্তি বজায় রেখে আন্দোলন করতে বলেছেন। যদি তা না হয়, সেক্ষেত্রে আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।"
আরও পড়ুন: নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিক্ষোভের জেরে দিল্লির জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের লাঠি
তবে, মমতার আস্থাভাজন তথা উত্তর কলকাতার এই সাংসদের কথায় অবশ্য চিড়ে ভেজেনি রাজ্য বিজেপি দফতরের। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, "পশ্চিমবঙ্গকে পশ্চিম বাংলাদেশ বানাবার চক্রান্ত চলছে। এই বাস্তব নমুনাই আজকে সবাই দেখতে পেল। আর এখানকার সরকার এবং তৃণমূল না চাইলে এই গন্ডগোল হতে পারতই না। এটা হচ্ছে, ছড়াচ্ছে আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছেন, মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে যাচ্ছেন। এতে ওনার ভোট ব্যাঙ্ক থাকলেও পশ্চিমবঙ্গ থাকবে না। মানুষের চিন্তা করা উচিত আবার কি উদবাস্তু হবেন ওনারা? দেশের উদবাস্তুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে আর ওনারা তাঁর বিরোধিতা করছেন। এর কারণটা কী? তাঁর মানে এরা সবাই অনুপ্রবেশকারী। এরা এখানে ভোটার হয়ে বসে একটি বিশেষ দলকে ভোট দিচ্ছেন। রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি নষ্ট করা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় ঝান্ডা নিয়ে এটা চলতে পারে না।"
আরও পড়ুন: নাগরিকত্ব আইনের ঝাঁঝ বাড়ছে রাজ্য রাজনীতিতে, উত্তাপ বাজারেও
দিলীপের এই মন্তব্যের পাল্টা তৃণমূলের সাংসদ তথা আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা বলেন, "এসব তো দিলীপ ঘোষেরাই করাচ্ছে। দিলীপ ঘোষেরা টাকা খাইয়ে কিছু উগ্র মুসলিম লোকদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে এই কাজ করছে। এরা কিন্তু বিজেপিকেই সমর্থন করেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কড়া হাতে সেটা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।" এদিকে, মুর্শিদাবাদবাসীকে শান্ত থাকার নির্দেশ দেন কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরি। তিনি বলেন, "কে কোথায় কী বলল, আপনারা তার দ্বারা প্রভাবিত হবেন না। আমরা আপনাদের জনপ্রতিনিধি। আমরা ভালোমন্দ বুঝি। তার জন্য আমরা সংসদের বাইরে ও ভিতরে প্রতিবাদ করব, কোর্টে যাব। কিন্তু হিংসার আশ্রয় নেবেন না।"